ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফিফার সিদ্ধান্তে নাখোশ স্প্যানিশ লীগ, খুশি এশিয়ার ফুটবল প্রধান

৪৮ দলের বিশ্বকাপ ॥ পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা সমালোচনা

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১২ জানুয়ারি ২০১৭

৪৮ দলের বিশ্বকাপ ॥ পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা সমালোচনা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বর্ণিল, আকর্ষণীয়, আকাক্সিক্ষত এবং জনপ্রিয় আসর হচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবল। একমাত্র এই মিলনমেলা দেশ, মহাদেশ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে এক কাতারে শামিল করতে সক্ষম। প্রতি চার বছর অন্তর হওয়া এই যজ্ঞের পরবর্তী আসর বসবে ২০১৮ সালে রাশিয়ায়। পরেরটি ২০২২ সালে কাতারে। এর পরেরটা ২০২৬ সালে। যার স্বাগতিক দেশ এখনও নিশ্চিত হয়নি। কাতার আসর পর্যন্ত বিশ্বকাপ হবে ৩২ দলেরই। কিন্তু ২০২৬ থেকে সেটা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪৮ দলের। মঙ্গলবার ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে সেরা যজ্ঞে আরও বেশি দেশকে শামিল করার জন্যই এ উদ্যোগ নিয়েছে ফিফা। সংস্থাটির দৃষ্টিতে, এতে করে এমন অনেক দেশ আছে যারা অল্পের জন্য বিশ্বকাপ খেলতে পারে না, তাদের সুযোগ হবে সর্বোচ্চ মঞ্চে। আর এতে করে বিশ্বকাপের জৌলুস আরও বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস। ফিফার এ সিদ্ধান্তের পর ফুটবলবিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ৪৮ দলের বিশ্বকাপের পক্ষে-বিপক্ষে চলছে আলোচনা সমালোচনার ঢেউ। এই যেমন স্প্যানিশ লীগ ইতোমধ্যে ফিফার বিরুদ্ধে মামলা করার ইঙ্গিত দিয়েছে। আর এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি) এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। ফিফার দল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত খুশি করতে পারেনি ইউরোপের অন্যতম জনপ্রিয় ও শীর্ষ লীগ স্প্যানিশ লা লিগাকে। তারা মনে করে, এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ইউরোপের শীর্ষ লীগগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল ফিফার। ফিফার এই সিদ্ধান্তে ইউরোপের শীর্ষ লীগগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছে তারা। স্প্যানিশ লা লিগার প্রধান জ্যাভিয়ের টেবাসের দৃষ্টিতে, এমন সিদ্ধান্ত আলোচনা করে নেয়া উচিত ছিল ফিফার। তিনি বলেন, ফিফার এই সিদ্ধান্ত ইউরোপের শীর্ষ লীগগুলোকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ফিফার নেয়া এই সিদ্ধান্তটি ঐকমত্যের ভিত্তিতে নেয়া হয়নি। আমরা এ ব্যাপারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিযোগিতা বিষয়ক কমিশনারের কাছে একটি উপস্থাপনা পেশ করব। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের উদ্ধৃতিতে জানা গেছে, ফিফা ৪৮ দলের বিশ্বকাপ আয়োজন করে ৬৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় বাড়ানোর স্বপ্ন দেখছে। রাশিয়ায় ২০১৮ বিশ্বকাপে ৫৫০ কোটি ডলার আ?য় হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ৪৮ দলের বিশ্বকাপ হলে সেটি আরও প্রায় ১০০ কোটি ডলার আয় এনে দেবে। তবে টেবাস মনে করেন, বিশ্বকাপের ৭৫ শতাংশ খেলোয়াড়ই ইউরোপের শীর্ষ লীগগুলোতে খেলে। সুতরাং ৪৮ দলের বিশ্বকাপে তাদের ক্লাবগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফিফা ক্রীড়া রাজনীতি ও টেলিভিশন স্বত্বের লাভের ওপর ভিত্তি করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যাপারটি ইউরোপের বড় লীগের ক্লাবগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ কারণেই আমরা ৪৮ দলের বিশ্বকাপের সিদ্ধান্তটি সমর্থন করছি না। ইউরোপের ফুটবল সংস্থা উয়েফার মতামত অবশ্য এখনও জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, তারাও হয়ত বিরোধিতা করবে। কারণে দল বাড়লেও ইউরোপ থেকে খুব বেশি বাড়ানো হবে না। কারণ এখনই এই অঞ্চল থেকে সবচেয়ে বেশি দেশ খেলে থাকে। তবে অপেক্ষাকৃত কম দেশ খেলার সুযোগ পাওয়া অঞ্চলগুলো দল বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে। বিশেষ করে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি)। সংস্থাটির সভাপতি শেখ সালমান বিন ইব্রাহিম আল খলিফা আশা করছেন, এর ফলে এশিয়া থেকে আরও বেশি দেশ খেলার সুযোগ পাবে। প্রতিক্রিয়া জানিয়ে শেখ সালমান বলেন, আমি বিশ্বাস করি বিশ্বকাপে এশিয়া বড় শক্তি। অর্থনৈতিকভাবে এ অঞ্চলের বিশাল অবদান আছে। এখন যে কোটা আছে সেটা বৃদ্ধি পেলে আরও দেশ খেলার সুযোগ পাবে। যারা হয়ত অল্পের জন্য মিস করে। ফিফার এই সিদ্ধান্তে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে চীন, নিউজিল্যান্ডের মতো দেশ। এসব দেশ প্রায় প্রতিটি বিশ্বকাপেই শেষ মুহূর্তে স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় পুড়ে। দল বাড়ানর ফলে এমন দেশগুলো হয়ত সহজেই স্বপ্নের মঞ্চে খেলতে পারবে। এশিয়ার সুপার পাওয়ার চীন যেমন চাইনিজ সুপার লীগ আয়োজন করে বিশ্ব ফুটবলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
×