ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে চাহিদা বাড়ছে বৈধ কর্মীদের

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৯ জানুয়ারি ২০১৭

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে চাহিদা  বাড়ছে বৈধ কর্মীদের

ফিরোজ মান্না, কুয়ালালামপুর থেকে ॥ মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশী বৈধ কর্মীর চাহিদা বাড়ছে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলতে দুই দেশের সরকারী পর্যায়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেশটিতে বাংলাদেশী কর্মীর চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে। ইতোমধ্যেই একাধিক বহুজাতিক কোম্পানির পক্ষ থেকে বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগের অনুমতি চেয়ে মালয়েশিয়া সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন জমা পড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির বিদেশী কর্মী নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। মালয়েশিয়ায় কর্মরত বিদেশী কর্মীর মধ্যে বাংলাদেশীরা পরিশ্রমী ও কাজের প্রতি আন্তরিক হওয়ায় দেশটিতে এমনিতেই বাংলাদেশীর চাহিদা বেশি। দীর্ঘদিন দেশটি বাংলাদেশীদের নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখায় মাঝে সেখানে বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগ স্তিমিত হয়ে পড়ে। নতুন করে বাজারটি খোলার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর থেকেই নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি করে বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগের জন্য আবেদন জমা দিচ্ছে। ইতোমধ্যে মালয়েশিয়ায় ব্যবসারত ভারতীয় বহুজাতিক কোম্পানি রিলায়েন্স গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রিক্রনসহ শতাধিক কোম্পানি বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগের অনুমতি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছে। এর মধ্যে শুধু রিক্রন মালয়েশিয়াই চেয়েছে ১ হাজার কর্মী নিয়োগের অনুমতি। এ ব্যাপারে রিক্রনের নিলাই ইউনিটের পরিচালক (উৎপাদন) হেমন্ত এম রাজে এবং মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান অমিত কে সাক্সেনা এ প্রতিবেদককে বলেন, বাংলাদেশী কর্মীরা অত্যন্ত পরিশ্রমী ও কাজের প্রতি আন্তরিক। তাই, তাদের অনেক চাহিদা রয়েছে। তবে দীর্ঘদিন বাংলাদেশের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ থাকায় আমরা বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগ করতে পারিনি। এক সময় রিক্রনের মালয়েশিয়ায় তিনটি ইউনিটে বাংলাদেশের প্রায় তিন হাজার কর্মী ছিল। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে কর্মীদের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে অনেকেই চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরে গেছে। এসব কর্মীর স্থানে নতুন করে বাংলাদেশীদের নিয়োগ করা সম্ভব হয়নি। কারণ, রিক্রন বা রিলায়েন্স, কেউই কোন অবৈধ শ্রমিক নিয়োগ করে না। ফলে বর্তমানে তিনটি প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশীর সংখ্যা মাত্র দুই হাজারে নেমে এসেছে জানিয়ে অমিত বলেন, আশা করছি আগামীতে বাজার খুললে সরকার আমাদের বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগের অনুমোদন দেবে। আমরা অন্তত এক হাজার কর্মী নিয়োগের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছি। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে অনুমোদিত ভিসার বিপরীতে অনেক অবৈধ শ্রমিক মালয়েশিয়ায় ঢুকে পড়ায় দেশটির সরকার বাংলাদেশী কর্মীদের মালয়েশিয়ায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের শেষদিকে সরকার পর্যায়ে কর্মী প্রবেশের শর্তে বাজারটি খুললেও কৃষি খাতে মাত্র ৮ হাজার কর্মী দেশটিতে ঢুকতে পারে। অমিত জানান, যত দ্রুত বাজারটি খুলবে ততই মালয়েশিয়ার বহুজাতিক কোম্পানি ও বিভিন্ন কারখানার জন্য কর্মী পাওয়া সহজতর হবে। যা এসব প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। কারণ, বাংলাদেশীরা অত্যধিক পরিশ্রমী ও কাজের প্রতি আন্তরিক। এ বিষয়ে মালয়েশিয়া সরকারের বিদেশী কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত এবং আন্তর্জাতিক তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সিনারফ্ল্যাক্সের চেয়ারম্যান শেখ ইয়াহিয়া বলেন, বাংলাদেশীসহ বিদেশী কর্মী নিয়োগের বিষয়ে তারা প্রস্তুতির চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছেন। যেকোন সময় বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের অনুমোদন পেলেই তারা কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে। এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক আধুনিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। দেশটিতে বর্তমানে বহু কর্মী অবৈধ হয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কম মজুরিতে কাজ করছেন। বৈধভাবে কর্মী নিয়োগ হলে অনেক বেশি বেতনে কাজ করার সুযোগ পাবেন। তা ছাড়া ছাত্র ভিসা ও ভিজিট ভিসায় কর্মী আসার সংখ্যা অনেক কমে যাবে। গত দুই দিন কুয়ালালামপুর ঘুরে কর্মী নিয়োগকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে বৈধ কর্মীর চাহিদা অনেক বেশি। বাংলাদেশ থেকে কয়েক লাখ কর্মী দেশটিতে নিয়োগ হতে পারে।
×