ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

একুশে বইমেলায় শ্রাবণসহ পাঁচ প্রকাশনী নিষিদ্ধ

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬

একুশে বইমেলায় শ্রাবণসহ পাঁচ প্রকাশনী নিষিদ্ধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অমর একুশে গ্রন্থমেলার স্বার্থবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে শ্রাবণ প্রকাশনীকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির নির্বাহী পরিষদ। গত ১০ নবেম্বর কমিটির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলন করে পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে প্রকাশনা সংস্থাটি। এছাড়াও পাইরেটেড ও নকল বই বিক্রির দায়ে আরও চারটি প্রকাশনীকে পাঁচ বছরের জন্য একুশে গ্রন্থমেলায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার ২০১৭ সালের গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুক প্রতিষ্ঠানগুলোর ফরম বিতরণের দিন এ তথ্য পাওয়া যায়। বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা যায়, পাইরেটেড বই বিক্রির জন্য গত ৪ আগস্ট একাডেমির নির্বাহী পরিষদের চলতি বছরের তৃতীয় সভায় পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় চারটি প্রকাশনীকে। এ প্রকাশনীগুলো হলোÑ রঙিন ফুল, ঐক্য প্রকাশনী, নীলপরী প্রকাশন এবং ব-দ্বীপ প্রকাশন। এর সঙ্গে সঙ্গে গত ১০ নবেম্বর একাডেমির নির্বাহী পরিষদের ৬ষ্ঠ সভায় মেলার স্বার্থবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে শ্রাবণ প্রকাশনীকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জানা গেছে, সোমবার ২০১৭ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশ নেয়ার জন্য ফরম তুলতে গেলে শ্রাবণ প্রকাশনীর প্রতিনিধিকে জানানো হয়, প্রকাশনা সংস্থাটিকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য-সচিব এবং বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. জালাল আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ২০১৬ সালের বইমেলা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে বই প্রকাশ করায় ব-দ্বীপ প্রকাশনকে নিষিদ্ধ করায় শ্রাবণের প্রকাশক রবীন আহসান বিভিন্ন কর্মসূচীর আয়োজন করেছেন, যা মেলার স্বার্থের পরিপন্থী। এ কারণেই একাডেমির কাউন্সিল সভায় গত ১০ নবেম্বর শ্রাবণকে দুই বছরের নিষিদ্ধ করেছে। সে সঙ্গে পাইরেটেড বই বিক্রির জন্য আরও চারটি প্রকাশনা সংস্থাকে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’ এ বিষয়ে শ্রাবণ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী রবীন আহসান বলেন, আমি বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে বইমেলা বাংলা একাডেমির বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে তারা এ অবিবেচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি এর বিরুদ্ধে আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী কর্মসূচী জানাব। এদিকে, মেলায় শ্রাবণ প্রকাশনী নিষিদ্ধ করায় ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকেই প্রশ্ন করেছেন- বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ এ কাজ করতে পারেন কিনা। এ বিষয়ে ড. জালাল আহমেদ বলেন, মেলা বাংলা একাডেমির একটি নীতিমালার অধীনে পরিচালনা করে। সুতরাং এর সব সিদ্ধান্ত ঐ নীতিমালা অনুযায়ী হয়ে থাকে। অন্য চারটি প্রকাশনী সংস্থাকে পাঁচ বছরের নিষিদ্ধ করা হয়েছে তার মধ্যে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ দিতে পারেÑএমন অভিযোগে বাংলা একাডেমির অনুরোধে ব-দ্বীপ প্রকাশনীর স্টল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৫তম দিনে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ঐ ঘটনায় লেখকসহ পাঁচ জনকে আটকও করা হয়। প্রকাশক শামসুজ্জোহা মানিকের ‘ইসলাম বিতর্ক’ বইটির কারণে প্রকাশনাটি বন্ধ করা হয়। এছাড়াও প্রকাশনা সংস্থা থেকে ‘আর্যজন ও সিন্ধু সভ্যতা’, ‘জিহাদ : জবরদস্তিমূলক ধর্মান্তরকরণ, সাম্র্রাজ্যবাদ ও দাসত্বের উত্তরাধিকার’, ‘ইসলামের ভূমিকা ও সমাজ উন্নয়নের সমস্যা’, ‘ইসলামে নারীর অবস্থা’ এবং ‘নারী ও ধর্ম’ও জব্দ করা হয়। এর আগের দিন ১৪ ফেব্রুয়ারি মেলায় টাস্কফোর্স অভিযান চালিয়ে ‘রঙিন ফুল’ ও ‘নীলপরী’ নামে দুটি স্টলে অভিযান চালিয়ে পাইরেটেড বই উদ্ধার করে। যার ফলে মেলার বাকি দিনগুলোতে প্রকাশনা সংস্থার স্টল বন্ধ রাখা হয়। এর আগে ২০১৫ সালের বইমেলায় রোদেলা প্রকাশনীর স্টলটি বন্ধ করে দেয় মেলা কর্তৃকক্ষ। তখন ‘নবী মোহাম্মদের ২৩ বছর’ বইটি নিষিদ্ধ করা হলেও কাউকে আটক করা হয়নি।
×