ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদিতে নারী কর্মীর সঙ্গে স্বামী বা নিকটাত্মীয় পুরুষ নেয়া স্থগিত

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬

সৌদিতে নারী কর্মীর সঙ্গে স্বামী বা নিকটাত্মীয় পুরুষ নেয়া স্থগিত

ফিরোজ মান্না ॥ সৌদি আরবে নারী কর্মীর সঙ্গে স্বামী বা নিকটাত্মীয় পুরুষ গৃহকর্মী নিয়োগের প্রস্তাব স্থগিত ঘোষণা করেছে দেশটির শ্রম ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এ বছরের গোড়ার দিকে এ প্রস্তাব দেয়। ওই সময় সৌদি কর্তৃপক্ষ প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন করার আশ্বাস দিয়েছিল। এখন তারা সেখান থেকে সরে এসেছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ উল্টো জানিয়েছে, পুরুষ কর্মীর ভিসা পেতে হলে ২৫ ভাগ নারী কর্মী পাঠাতে হবে। সংবাদমাধ্যমে সৌদি আরবে বিভিন্ন সময় নারী কর্মীদের ওপর নানাভাবে নির্যাতনের খবর প্রকাশ হওয়ার পর থেকে দেশটিতে নারী কর্মীরা এখন আগের মতো যাচ্ছেন না। এজন্য সৌদি আরব জনশক্তি রফতানিকারকদের পুরুষ কর্মীর পাশাপাশি ২৫ ভাগ নারী কর্মী পাঠানোর কথা জানিয়ে দিয়েছে। ঢাকায় সৌদি দূতাবাস প্রকাশ্যে এ ঘোষণা দিয়েছে বলে জনশক্তি রফতানিকারকরা অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি জনশক্তি রফতানিকারকরা প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সৌদি দূতাবাসের এমন সিদ্ধান্তের কথা তারা অফিসিয়ালি জানেন না। তবে তারা শুনেছেন, জনশক্তি রফতানিকারকদের দূতাবাস থেকে বলা হয়েছে শতকরা ২৫ ভাগ নারী কর্মী না পাঠালে পুরুষ কর্মীর ভিসা দেবে না। বিষয়টি নিয়ে আমরা সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে যাচ্ছি। তবে বর্তমানে সৌদিতে পুরুষ কর্মী ভালভাবেই যাচ্ছেন। এ বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেড় লাখের বেশি পুরুষ কর্মী সৌদিতে চাকরি নিয়ে গেছেন। মন্ত্রণালয় প্রস্তাবে নারী কর্মীদের সুরক্ষার জন্য তাদের সঙ্গে স্বামী বা নিকটাত্মীয় পুরুষ কর্মী নিয়োগ করতে অনুরোধ জানিয়েছিল। তখন তারা এ প্রস্তাব মেনেও নিয়েছিল। হঠাৎ করে নারী গৃহকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে আর পুরুষ কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে না দেশটি। বিষয়টি নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সৌদি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। সূত্র জানিয়েছে, এ বছরের গোড়ার দিকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় নারী কর্মীর সঙ্গে স্বামীকেও কর্মী হিসেবে নেয়ার প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবে সৌদি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা রাজি হয়ে বেশ কিছু নারী কর্মীকে তারা নতুন নিয়মে নিয়োগও দিয়েছেন। কিন্তু প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সৌদি আলোচনার মাধ্যমে নারী কর্মীদের সঙ্গে তার স্বামী বা নিকটাত্মীয় পুরুষ কর্মী নিয়োগ বন্ধ করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। পুরুষ কর্মী সঙ্গে থাকলে নারী কর্মীরা অনেক ক্ষেত্রে বিপদমুক্ত থাকতে পারেন। কিন্তু গত মাসে হঠাৎ করে সৌদি কর্তৃপক্ষ ওই পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে। এখন তারা শুধু নারী কর্মী নিয়োগ করবে। নারী কর্মীর সঙ্গে স্বামী বা নিকটাত্মীয় পুরুষ কর্মী নিয়োগ দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। এর আগে নারী কর্মীদের সঙ্গে তিনটি ক্যাটাগরিতে পুরুষ কর্মী নিয়োগ করেছে। ড্রাইভার, গৃহস্থালির কাজ ও নার্স পদে নিয়োগের সুযোগ পেতেন। এখন এসব পদে পুরুষ কর্মীদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। সৌদিতে নারী কর্মী নিয়োগ নিয়ে ‘ন্যাশনাল এ্যালাইন্স ফর মাইগ্রেশনস রাইটস বাংলাদেশ’ মনে করে, সৌদিতে নারী নির্যাতন ব্যাপক হারে বেড়েছে। সেখানে একজন নারী কর্মী শুধু গৃহস্থালির কাজই করতে হয় না। তাকে গৃহকর্তাসহ ওই বাড়ির যত পুরুষ আছে তাদের যৌনদাসী হিসেবেও কাজ করতে হয়। যদি এ কাজে তারা রাজি না হন তাহলে তাদের ওপর চলে শারীরিক নির্যাতন। দীর্ঘদিন ধরে সৌদিতে এমন অবস্থা চলে আসছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ওই সংগঠনের দাবির প্রেক্ষিতে কোন নারী কর্মী যাতে নির্যাতনের শিকার না হন তার জন্য নতুন প্রস্তাব দিয়েছিল। জানা গেছে, সৌদি আরব প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২০ হাজার গৃহকর্মী নিয়োগ করার যে ঘোষণা দিয়েছিল, তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। সৌদি কর্তৃপক্ষের এ ঘোষণার পর বাংলাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক নারী কর্মী নিবন্ধন করেছিল। কিন্তু দেশটিতে নারী কর্মীদের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের অনেক নজির রয়েছে। এটা যাতে না ঘটে তার জন্য সঙ্গে যদি স্বামী থাকেন তাহলে নারী কর্মীরা অনেকাংশে নিরাপদ হবেন। তাদের সন্তান থাকলেও সেখানে নিয়ে যেতে পারবেন। তখন বিভিন্ন জনশক্তি আমদানিকারক দেশ নতুন প্রস্তাবটি মেনে নেয়। সৌদির পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ ওই প্রস্তাবে কর্মী নিতে রাজি হয়। প্রথমে অল্পকিছু কর্মী নতুন প্রস্তাবে সৌদিসহ কয়েকটি দেশে নিয়োগ পেয়েছিল। এখন আর ওই প্রস্তাবে মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশই নারী কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে না। সৌদি কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছে, নতুন প্রস্তাবে কর্মী নিয়োগ স্থগিত করা হয়েছে। আগের নিয়মেই কর্মী নিয়োগ হবে। এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি নিয়ে তারা সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু এরপরও নতুন প্রস্তাবটি তারা বন্ধ করে রেখেছেন। চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে নতুন প্রস্তাবে সৌদি কর্তৃপক্ষ নারী কর্মী নিয়োগ দেয়। দেশটির শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বলেছে, অন্য দেশের কর্মীদের অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য বাংলাদেশী নারী কর্মীদের সঙ্গে পুরুষদের নিয়োগ সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। তবে নারী কর্মী নিয়োগে কোন বাধা নেই। বাধা না থাকার কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে গত কয়েক মাস ধরে দেশটিতে নারী কর্মী নিয়োগের পরিমাণ কমে গেছে। নারী কর্মীরাও সৌদির প্রতি অনেকটা আস্থাহীন হয়ে পড়েছে।
×