ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর বিমানে ত্রুটি;###;আত্মসমর্পণের পর ২ জন জেলে

বিমানের সাত কর্মকর্তা গ্রেফতার, ৭ দিনের রিমান্ডে

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬

বিমানের সাত কর্মকর্তা গ্রেফতার, ৭ দিনের রিমান্ডে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানে ত্রুটির ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার বাংলাদেশ বিমানের নয় আসামির মধ্যে সাত জনকে গ্রেফতার করেছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। বাকি দু’জন ঢাকার সিএমএম আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক তাদের কারগারে প্রেরণ করেন। গ্রেফতারকৃত সাত আসামিকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। ঘটনাটি তদন্তে তিনটি পৃথক কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটির তদন্তেও ঘটনাটি মনুষ্যসৃষ্ট বলে প্রকাশ পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জাতীয় সংসদে বলেছেন, সারা পৃথিবীতে একই ধরনের ছয় শতাধিক বিমান চলাচল করছে। আজ পর্যন্ত কোন দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। যাতে ঘটনাটি যে মনুষ্যসৃষ্ট তা প্রমাণ করে। প্রধানমন্ত্রীর আগে এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির বরাত দিয়ে বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেননও একই মন্তব্য করেন। বুধবার গভীর রাতে বিমানের চীফ ইঞ্জিনিয়ার (প্রোডাকশন) দেবেশ চৌধুরী (৫৭), ভারপ্রাপ্ত চীফ ইঞ্জিনিয়ার (পরিদর্শন ও মান নিশ্চিতকরণ) এস এ সিদ্দিক (৫২), ভারপ্রাপ্ত মুখ্য প্রকৌশলী (এনসিসি) বিল্লাল হোসেন (৫০), প্রকৌশল কর্মকর্তা লুৎফর রহমান (৪৫), সামিউল হক (৪৮), মিলন চন্দ্র বিশ্বাস (৪৭) ও জাকির হোসাইনকে (৪৫) গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের বলেন, মামলাটি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে গভীর তদন্ত চলছে। এদিন বিকেলে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের পরিদর্শক মোঃ মাহবুবুল আলম গ্রেফতারকৃত সাত জনকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আদালতের সরকারী কৌঁসুলি মোঃ আবু আবদুল্লাহ জানান, সাত আসামির মধ্যে ছয়জনের জামিন আবেদন করেন তাদের আইনজীবীরা। ঢাকা মহানগর হাকিম স্নিগ্ধা রানী চক্রবর্তী ছয় আসামির জামিন আবেদন নাকচ করে সাত আসামিকেই ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আদালতে আত্মসমর্পণ করা দুই আসামিকে পরবর্তীতে আদালতে সোপর্দ করে রিমা-ে নেয়ার জন্য আবেদন করার কথা রয়েছে। এর আগে এদিনই মামলার ১ ও ২ নম্বর আসামি বিমানের জুনিয়র টেকনিশিয়ান মোঃ সিদ্দিকুর রহমান এবং প্রকৌশলী কর্মকর্তা এসএম রোকনুজ্জামান ঢাকার মহানগর হাকিমের একই আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আইনজীবী মোঃ শাহাবুদ্দিন আসামিদের জামিনের আবেদন করেন। শুনানিতে আইনজীবী বলেন, কোন নাশকতার জন্য এটা করা হয়নি। বিমানের ইঞ্জিনের ত্রুটিতে আসামিদের কোন দায় নেই। আইনকে শ্রদ্ধা করেই আসামিরা আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। মহানগর হাকিম স্নিগ্ধা রানী চক্রবর্তী শুনানি শেষে জামিন নাকচ করে দুই আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। গত ২৭ নবেম্বর হাঙ্গেরী যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৭৭৭ বিমানটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তুর্কমেনিস্তানের আশখাবাত বিমানবন্দরে জরুরী অবতরণে বাধ্য হয়। মেরামত শেষে প্রায় ৪ ঘণ্টা পর হাঙ্গেরীর রাজধানী বুদাপেস্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে উড়োজাহাজটি। উড়োজাহাজের ইঞ্জিন অয়েলের ট্যাঙ্কের একটি নাট ঢিলা থাকায় ওই বিপত্তি ঘটে। এর পেছনে নাশকতা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে বিমান মন্ত্রণালয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ তিনটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে ঘটনার তিন দিনের মাথায় বিমানের এস এম রোকনুজ্জামান, সামিউল হক, মিলন চন্দ্র বিশ্বাস, লুৎফুর রহমান, জাকির হোসাইন ও টেকনিশিয়ান সিদ্দিকুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের তদন্ত কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দেবেশ চৌধুরী, এস এ সিদ্দিক ও বিল্লাল হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। গত ২০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় বরখাস্ত নয়জনকে আসামি করে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন বিমানের পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট) এমএম আসাদুজ্জামান। মামলার এজাহারে বলা হয়, বিভাগীয় তদন্তে বরখাস্তকৃত নয়জনের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যন্ত্রপাতি নিয়ে অবহেলামূলক আচরণ করত অন্তর্ঘাতমূলক কার্যক্রম করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ঢাকার মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসির মাহমুদ চৌধুরী আগামী ১২ জানুয়ারি মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করেন। জানা গেছে, বিমান বহরে ‘রাঙা প্রভাত’ নাম পাওয়া বোয়িং উড়োজাহাজটিতে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীসহ ৯৯ জন যাত্রী এবং ২৯ জন ক্রু ছিলেন। বিমানের বাঁদিকের ইঞ্জিনের ইঞ্জিন অয়েল কমে যাওয়ায় ঘটনাটি ঘটে। পাইলটরা বেশ কিছুক্ষণ আগে বিষয়টি বুঝতে পারেন। ককপিটের মনিটরে তা দেখা যাচ্ছিল। তখনই পাইলটরা বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের জানান। ওই সময় বিমান ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩০ হাজার ফুট উপরে ছিল। বাম দিকের ইঞ্জিনের ক্ষমতা কমতে শুরু করে। এরপর দ্রুততার সঙ্গে বিমানটি তুর্কমেনিস্তানে অবতরণ করানো হয়। অবতরণ করার ১২ থেকে ১৫ মিনিট আগে বিমানটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অবতরণ করার পর নাট টাইট দেয়ার পর বিমানটি পুরোপুরি ঠিক হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে উড়োজাহাজটি পুনরায় ওড়ার আগে দু’বার ইঞ্জিনের ট্রায়াল দেয়া হয়।
×