ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হুজ হু সম্মাননা পেলেন বাংলাদেশের ১৩ গুণীজন

প্রকাশিত: ০৮:১৬, ২১ ডিসেম্বর ২০১৬

হুজ হু সম্মাননা পেলেন বাংলাদেশের ১৩ গুণীজন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক দৈনিক জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খানসহ দেশের ১৩ বিশিষ্ট গুণীজনকে স্ব স্ব ক্ষেত্রে অবদানের জন্য সম্মাননা ও পদক প্রদান করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘হুজ হু’র বাংলাদেশ শাখা। সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য দেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসের অন্যতম পথিকৃৎ তোয়াব খানকে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়। হুজ হু ১৮৪৯ সাল থেকে যুক্তরাজ্যসহ সারাবিশ্বে অনুসরণীয় ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী প্রকাশ ও পদক প্রদান করে এলেও প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের এই সম্মাননা প্রদান করল। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর র‌্যাডিসন ব্লু গার্ডেন হোটেলে ‘হুজ হু বাংলাদেশ’র আত্মপ্রকাশ ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হাতে ‘হুজ হু বাংলাদেশ ২০১৬’ পদক তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সাংবাদিক, শিল্প-বাণিজ্য- সব অঙ্গনের গুণীদের পদচারণায় পুরো অনুষ্ঠান পরিণত হয় গুণীদের মিলনমেলায়। এ বছরের পদকপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন কৃষিতে চ্যানেল আইয়ের পরিচালক (বার্তা) শাইখ সিরাজ, শিল্প ও সংস্কৃতিতে ছায়ানট সভাপতি ড. সন্্জীদা খাতুন, শিক্ষাক্ষেত্রে ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, শিল্প ও সাহিত্যে হাসান আজিজুল হক, সামাজিক কর্মকা-ের জন্য ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ, ক্রীড়াক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান, শিল্প-বাণিজ্যক্ষেত্রে রহিম আফরোজ গ্রুপের পরিচালক নিয়াজ রহিম, উদ্যোক্তা হিসেবে এসিআই লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম আনিস-উদ-দ্দৌলা, নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ এ্যান্ড হাসপাতালের চেয়ারম্যান প্রীতি চক্রবর্তী ও প্রবাসী বাংলাদেশী হিসেবে ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন। সংস্থাটির পক্ষে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয় প্রখ্যাত সাংবাদিক-সাহিত্যিক আবদুল গাফ্্ফার চৌধুরীকে। পদক প্রদান অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, হুজ হু বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধান নির্বাহী এসএম আলতাফ হোসেন, পরিচালক রুখসানা রহমান ও এনামুল হক এনামসহ দেশী-বিদেশী অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে হুজ হু সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, হুজ হু ১৮৪৯ সাল থেকে যুক্তরাজ্যসহ সারাবিশ্বে অনুসরণীয় ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী প্রকাশ ও পদক প্রদান করে আসছে। তারা বাংলাদেশে এবারই এই পদক প্রদান করছে। এ বছর থেকে প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে এই পদক প্রদান করা হবে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, এখানে যাদের সম্মানিত করা হয়েছে; তারা সকলেই গুণী ব্যক্তিত্ব। যে সিলেকশন করা হয়েছে তা নিয়ে আমরা কেউ প্রশ্ন তুলতে পারব না, আয়োজনের এটা একটা বড় অর্জন। তারা বলেছেন, আগামীতেও তাদের এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। তাদের এই উদ্দেশ্য সফল হোক। এই অগ্রযাত্রা যাতে ব্যাহত না হয় সেটাই আমার প্রত্যাশা। প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশের প্রথিতযশা ব্যক্তিদের যে কয়জনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে, তারা যেসব কাজের জন্য সম্মানিত হলেন; তারা এসব কাজ শুরু করেছিলেন ১৯৭১ সালের আগে। যারা পুরস্কার পেয়েছেন এটা তাদের জন্য যেমন গর্বের তেমনি বাংলাদেশের জন্যও তা গর্বের। পদক তুলে দেয়ার পূর্বে পদকপ্রাপ্ত গুণীদের জীবনের ওপর তুলে ধরা হয় তথ্যচিত্র। এর পর তাদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন অর্থমন্ত্রী। এ সময় জানতে চাওয়া হয় তাদের অনুভূতি। অনুভূতি জানতে চাইলে জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খান বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছেÑ সংবাদপত্রের জন্য এ ধরনের স্বীকৃতি বিশেষ করে সাংবাদিকদের কাজের ক্ষেত্রে সামনে এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে। আজীবন সম্মাননা গ্রহণ করে আবদুল গাফ্্ফার চৌধুরী বলেন, এখানে যারা সম্মাননা পুরস্কার পেয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই নিজের স্থানে বৈশিষ্ট্যের গুণে গুণান্বিত। আমার কোন বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে, আমাকে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয়েছে! জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এ পুরস্কার পেয়ে আনন্দিত হয়েছি। যাদের সঙ্গে পেয়েছি, তারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন। আজকে তাদের গুণে গুণান্বিত হলাম। সন্্জীদা খাতুন বলেন, আমাকে সঙ্গীতের জন্য এ সম্মাননা দেয়া হয়েছে, কিন্তু আমি সাংস্কৃতিক সংগঠক পরিচয়টি দিতেই পছন্দ করি। গান গাই, শিক্ষকতা করি, কিন্তু সংগঠকের কাজ করতেই অত্যন্ত ব্যস্ত থাকি। আমি বেশিরভাগ সম্মাননা গ্রহণ করতে যাই না, কারণ আমি মনে করি, যে কাজ করি তা পুরস্কারের জন্য করি না। আনিসুজ্জামান বলেন, যে কোন সম্মাননা কিছু না কিছু প্রেরণা যোগায় সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার। সে সঙ্গে সম্মাননা প্রদানকারী সংস্থাও প্রত্যাশা করে, সম্মাননাপ্রাপ্ত এর মর্যাদা করবেন। আমি সেই চেষ্টা করব। স্যার ফজলে হাসান আবেদ বলেন, সম্মাননা পেয়ে ভাল লাগছে। কারণ, এ ধরনের সম্মাননা পেলে আমাদের কর্মীরা খুশি হন। আকরাম খান বলেন, ক্রিকেটের অনেক অর্জন আছে। তবে ১৯৮৮ সালে যখন খেলা শুরু করি, তখন আমাদের দেশকে অনেকেই বন্যাকবলিত দেশ হিসেবে চিনতেন। এখন ক্রিকেটের জন্য চেনেন। অসুস্থতার কারণে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি হাসান আজিজুল হক। এক ভিডিওবার্তায় তিনি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফাহমিদা খাতুন ও তানিয়া মান্নান, নজরুলসঙ্গীত পরিবেশন করেন খায়রুল আনাম শাকিল এবং পল্লীগীতি পরিবেশন করেন শিল্পী সাঈদা তানি। কবিতা আবৃত্তি করেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়।
×