ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পরোপকারী মুক্তিযোদ্ধা এখন অসহায়

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬

পরোপকারী মুক্তিযোদ্ধা এখন অসহায়

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, ১৮ ডিসেম্বর ॥ জীবন যুদ্ধে পরাস্ত হচ্ছেন খোরশেদ আলী নামের এক মুক্তিযোদ্ধা। সত্তরোর্ধ এই মানুষটি শেষ বয়সে এসে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। ৫ বছর আগে এই সাদা মনের মানুষটির সড়ক দুর্ঘটনায় একটি পা ভেঙ্গে যায়। এখনও সম্পূর্ণ সুস্থ হননি তিনি। পায়ের মধ্যে রড ডুকিয়ে রাখা হয়েছে। প্রতিদিন প্রায় দুই-তিন শ’ টাকার ওষুধ খেতে হচ্ছে তাকে। এই মুক্তিযোদ্ধার যেখানে তিন বেলা খেতে কষ্ট হয়, সেখানে ওষুধের ব্যয় বহন করা তাঁর জন্য কঠিন। যুদ্ধের সময় দুধ বিক্রেতা সেজে মুক্তি যোদ্ধাদের কাছে হায়নাদের অবস্থানের খবর জানাতেন। বিষয়টি প্রকাশ হলে পাক বাহিনী তাঁর বাড়িতে হানা দিয়ে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে তাঁর বড় ভাই সেকান্দার আলী, চাচা তাজেম আলী, কাঞ্চন আলী, সোনা আলী, ভাগ্নিজামাই শাহাবুদ্দিনসহ বাড়ির আরও ৯ সদস্যকে। হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি পাকবাহিনী, পুড়িয়ে দেয় তাঁর বাড়িঘর। এ সময় খোরশেদ আলী একটি ভাঙ্গা কবরের মধ্যে লুকিয়ে থেকে জীবন রক্ষা করেন। খোরশেদ আলীর বাড়ি বাউফলের মদনপুর গ্রামে। প্রায় ১০ বছর আগে তার স্ত্রী সেতারা বেগম মারা যায়। ৫ মেয়ে ও ৩ ছেলে তাঁর। সুস্থ থাকা অবস্থায় বেওয়ারিশ পচা, গলা লাশ উদ্ধার, দাফন কিংবা ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানোর মতো কাজ খোরশেদ আলীকে ছাড়া কল্পনা করাই যেতনা। ধর্ম-বর্ণের পরিচয় তার জানা নেই। হিন্দু লোক মারা গেলে তার সৎকার অনুষ্ঠানে তিনি হাজির হতেন। শহরের যানজট নিরসন, হাসপাতালের সামনে অপেক্ষামাণন দরিদ্র-অসচেতন রোগীকে ডাক্তারের কাছে পৌঁছে দেয়াসহ হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের খোঁজ খবর নেয়া ও তাদের ওষুধ পথ্য বহন করে এনে দেয়ার কাজটি খোরশেদ আলীর যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা আর মানুষের দান দক্ষিণায় কোন রকম খেয়ে না খেয়ে চলছে তার সংসার। টাকার অভাবে তিনি সঠিকভাবে পায়ের চিকিৎসা করাতে পারছেন না। শুয়ে-বসে থাকতে থাকতে এই মুক্তিযোদ্ধা এখন দুর্বল হয়ে পড়েছেন।
×