ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

অবিলম্বে ফেরত দাবি যুক্তরাষ্ট্রের ॥ সামরিক উত্তেজনায় নতুন মাত্রা

চীনের কব্জায় মার্কিন ডুবো ড্রোন

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬

চীনের কব্জায় মার্কিন ডুবো ড্রোন

চীন দক্ষিণ চীন সাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর এক ডুবো (আন্ডার ওয়াটার) ড্রোন আটক করার পর পেন্টাগন সেটির ফেরত দেয়ার দাবি জানিয়েছে। এতে দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্কে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ার মধ্যে বিরোধপূর্ণ ওই জলরাশিতে দুই সামরিক বাহিনীর উত্তেজনায় নতুনমাত্রা যোগ হলো। খবর বিবিসি ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের। পেন্টাগনের এক মুখপাত্র বলেন, এটি আমাদের তা স্পষ্টভাবে চিহ্নিত ছিল, আমরা এটি ফেরত চাই এবং এ ঘটনা আবার ঘটুক তা আমরা চাই না। চীনা নৌবাহিনী বৃহস্পতিবার দক্ষিণ চীন সাগরে মার্কিন আন্ডার ওয়ার গবেষণা নৌযানটি আটক করে বলে যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করে। ঠিক যখন মহাসাগরীয় জরিপ জাহাজ ইউএসএনএস বাওভিচ ড্রোনটি ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছিল, তখন ওই ঘটনা ঘটে। কর্মকর্তারা বলেন, ‘ওশান গ্লাইডার’ নামে অভিহিত ওই ড্রোনটি জলের লবণাক্ততা ও তাপমাত্রা পরীক্ষার জন্য ব্যবহার করা হয়। ওই তথ্য সংগ্রহ ছিল সমুদ্রতলের পথ জরিপ করার এক অগোপনীয় কর্মসূচীর অংশ। পেন্টাগণের মুখপাত্র ক্যাপ্টেন জেফ ডেভিস সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। চীন এটি আটক করে নিয়ে যায় বলে ক্যাপ্টেন ডেভিস শুক্রবার এক প্রেস ব্রিফ্রিংয়ে জানান। তিনি আরও বলেন, মনষ্যবিহীন ডুবো নৌযানটি (ইউইউভি) দক্ষিণ চীন সাগরের জলরাশিতে বৈধভাবে এক সামরিক জরিপ চালাচ্ছিল। তিনি বলেন, এটি ছিল এক সার্বভৌম দায়মুক্ত নৌযান। এটি জলরাশি থেকে সরানো যাবে না বলে ইংরেজীতে স্পষ্টভাবে লেখা ছিল। এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পত্তি। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ফিলিপিন্সের সিউবিক বের প্রায় ৫০ মাইল (৮০ কিলোমিটার) উত্তর-পশ্চিমে দক্ষিণ চীন সাগরে ওই ঘটনা ঘটে। পেন্টাগনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, নৌবাহিনীর চীনা জাহাজ এএসআর-৫১০ বাওভিচের ৫০০ গজের মধ্যে চলে এসে এক ছোট নৌযান ছেড়ে দিয়ে ইউইউভিকে আটক করে। বাওভিচ ড্রোনটিকে অবিলম্বে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে চীনা জাহাজের সঙ্গে রেডিওতে যোগাযোগ করে। কিন্তু তা উপেক্ষিত হয়। ক্যাপ্টেন ডেভিস বলেন, আমরা পেশাদার নৌবাহিনীর কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ আশা করি না। ড্রোন আটকের ঘটনা দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তিপ্রদর্শন নিয়ে মার্কিন উদ্বেগ বাড়াতে পারে। চলতি সপ্তাহে এক মার্কিন গবেষণা সংস্থা জানায়, মার্কিন প্রতিবাদ সত্ত্বেও চীন ওই সাগরে তাদের নির্মিত সাতটি কৃত্রিম দ্বীপ বরাবর অস্ত্রশস্ত্র মোতায়েন করেছে বলে আকাশ থেকে নেয়া ছবিতে দেখা যায়। ২০১৫-এর নবেম্বর মাসে দুটি মার্কিন বি-৫২ বোমারু বিমান মনুষ্য নির্মিত দ্বীপের ওপর দিয়ে উড়ে যায়। এগুলো স্যাটলি দ্বীপপুঞ্জ নামে পরিচিত। পেন্টাগনের প্রেস সেক্রেটারি পিটার কুক বলেন, ড্রোনটি যুক্তরাষ্ট্রের এক সার্বভৌম দায়মুক্ত নৌযান। তিনি এটি অবিলম্বে ফেরত দিতে চীনের প্রতি দাবি জানান। সিনেটর বেন কারডিন ওই আটকের ঘটনাকে আন্তর্জাতিক আইনের এক নির্লজ্জ লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেন। তিনি সিনেট বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাটিক সদস্য। সিনিয়র রিপাবলিকান সিনেটর জন ম্যাককেইন বলেন, এরূপ ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ যুক্তরাষ্ট্রের সহ্য করা উচিত নয়। তিনি বলেন, এই নির্লজ্জ উস্কানি প্রতিবেশীদের ভীতিপ্রদর্শন ও দক্ষিণ চীন সাগরের সামরিকায়নসহ চীনের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা সৃষ্টিকারী আচরণের সঙ্গেই খাপ খায়। ম্যাককেইন আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এক কঠোর ও দৃঢ় জবাব না দেয়া পর্যন্ত এ আচরণ চলবে। ওবামা প্রশাসন এখনও অবধি এরূপ জবাব দিতে ব্যর্থ হয়েছে। চীনাদের মার্কিন নৌবাহিনীর ড্রোন আটকের ঘটনা দু’দেশের মধ্যে অনিশ্চয়তা ও উত্তেজনাই কেবল বাড়িয়ে তুলবে। এ সপ্তাহেই এক মার্কিন গবেষণা সংস্থা দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের কৃত্রিম দ্বীপগুলোতে বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র বসানোর স্যাটেলাইন ছবি প্রকাশ করে। এর আগে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই অঞ্চলে ‘বিশাল দুর্গ’ নির্মাণের দায়ে চীনের সমালোচনা করেন। দ্বীপগুলোতে অস্ত্র মোতায়েন করায় কোন ইচ্ছা চীনের নেই বলে আগের বিবৃতি সত্ত্বেও চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সেখানে ‘প্রয়োজনীয় সামরিক স্থাপনা’ গড়ে তোলাকে ‘সঠিক ও বৈধ’ বলে সমর্থন করে। ট্রাম্প তথাকথিত ‘এক চীন’ নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর চীনও তাইওয়ান প্রণালীর ওপর জঙ্গী বিমানের মহড়া জোরদার করেছে। বেজিং এ নীতিকে মার্কিন চীন সম্পর্কে রাজনৈতিক ভিত্তি বলে বর্ণনা করে।
×