ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম দিন ১৮ ডিসেম্বর ডাকা হয়েছে বিএনপিকে

ইসি গঠন নিয়ে শুরু হচ্ছে রাষ্ট্রপতির সংলাপ

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬

ইসি গঠন নিয়ে শুরু হচ্ছে রাষ্ট্রপতির সংলাপ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের বহুল আলোচিত সংলাপ। ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতি সোমবার বিএনপিসহ পাঁচটি রাজনৈতিক দলকে আলোচনার জন্য বঙ্গ ভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। বাকি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে পর্যায়ক্রমে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানাবেন রাষ্ট্রপতি। তবে নিবন্ধন বাতিল হওয়া স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী সংলাপের জন্য বঙ্গ ভবনে যাওয়ার আমন্ত্রণ পাচ্ছে না বলেই জানা গেছে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন সোমবার জনকণ্ঠকে জানান, ‘আজকে (সোমবার) দুপুরের পর পাঁচটি রাজনৈতিক দলকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য নিবন্ধিত দলগুলোকে চিঠি পাঠানো হবে। আগামী ১৮ ডিসেম্বর প্রথম দিন বিকেল ৪টায় বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সূচী ঠিক করা হয়েছে।’ রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব আরও জানান, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিএনপির পর আগামী ২০ ডিসেম্বর সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, ২১ ডিসেম্বর লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এবং ২২ ডিসেম্বর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলকে (জাসদ) আলোচনার জন্য বঙ্গ ভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন গঠন করার এখতিয়ার একমাত্র রাষ্ট্রপতির। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শক্রমে তিনি নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দিতে পারেন। তবে ২০১২ সালে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই ‘সার্চ কমিটির’ মাধ্যমে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। আগামী ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষে নতুন যে নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেবে, তার অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে ২০১৯ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এবারও ‘সার্চ কমিটি’ গঠন করে রাষ্ট্রপতি নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেবেন বলে আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল ইসলাম আগেই জানিয়ে দিয়েছেন। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উত্তপ্ত বাহাস, পাল্টা-পাল্টি যুক্তিতর্ক ও প্রস্তাব প্রেরণের ঘটনা ঘটেছে। ইতোমধ্যে নতুন ইসি গঠনে গত ১৮ নবেম্বর সাংবাদিক সম্মেলন করে ১৩ দফা প্রস্তাব দিয়েছে সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। ওই প্রস্তাবে তিনি সব দলের সঙ্গে আলোচনা ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে সর্বজনশ্রদ্ধেয় বিতর্কমুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের সুপারিশ করেন। ওই প্রস্তাবটি প্রতিনিধির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণের জন্য বঙ্গ ভবনে জমাও দিয়েছে বিএনপি। কিন্তু তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার এ প্রস্তাবকে ‘অন্তঃসারশূন্য’ মন্তব্য করে প্রত্যাখ্যান করে দেয় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও তাঁর এ প্রস্তাবকে বিতর্কমূলক উল্লেখ করে নাকচ করে দেয়। প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) বলেছে, সংসদের বাইরে থাকা কোন দলকে এই সংলাপে ডাকার প্রয়োজন তারা দেখছে না। গত ৬ ডিসেম্বর বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল খালেদা জিয়ার ওই প্রস্তাব বঙ্গ ভবনে পৌঁছে দেন। বিএনপি নেত্রীর প্রস্তাব সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘উনার প্রস্তাব উনি দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতিকে বলুক। এটা রাষ্ট্রপতি ভাল বুঝবেন, উনি কী পদক্ষেপ নেবেন। রাষ্ট্রপতি যে পদক্ষেপ নেবেন সেটাই হবে। এখানে আমাদের বলার কিছু নেই।’ এমন বাস্তবতার মধ্যেই আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পর্যায়ক্রমে বৈঠক করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। তবে খালেদা জিয়ার প্রস্তাব অনুযায়ী সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল নয়, শুধু নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেই রাষ্ট্রপতি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আলোচনা করবেন তা নানা সূত্র থেকেই নিশ্চিত হওয়া গেছে। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিবও জানিয়েছেন, পর্যায়ক্রমে নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে কথা বলবেন রাষ্ট্রপতি। আর এটি হলে নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাওয়া স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপের কোন সুযোগ থাকছে না। বঙ্গ ভবনসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের কাছ থেকে নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য চার নির্বাচন কমিশনারের জন্য নাম প্রস্তাব আকারে চাইবেন। সব দলগুলো থেকে প্রস্তাবিত নামের তালিকা গ্রহণের পর ‘সার্চ কমিটির’ মাধ্যমে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে যাঁদের নাম সর্বাধিক দল প্রস্তাব করেছেন তাদের তালিকা যাচাই-বাছাই করা হবে। এরপর সার্চ কমিটির প্রস্তাব অনুসারে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে দেবেন রাষ্ট্রপতি। আর এই নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে আগামী জাতীয় নির্বাচন। বিএনপির ১০ নেতাকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ ॥ নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সংলাপে যোগ দিতে বিএনপিকে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নাম পাঠাতে বঙ্গ ভবনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিএনপিকে বলা হয়েছে, ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিনিধি দলের নামের তালিকা বঙ্গ ভবনে পাঠাতে হবে। এদিকে যে ৫টি দলকে সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ওই সব দলগুলোর সাধারণ সম্পাদক/মহাসচিবকে উদ্দেশ করে চিঠি পাঠানো হয়েছে বঙ্গ ভবন থেকে। বিএনপির চিঠি গেছে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানায়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে- ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে দেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অনধিক চারজন কমিশনার নিয়োগের বিষয়ে ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। যেহেতু নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শীঘ্রই উত্তীর্ণ হচ্ছে, সেহেতু বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত গ্রহণ সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশন গঠনে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। সেই লক্ষ্যে আগামী ১৮ ডিসেম্বর বিকেলে সাড়ে চারটায় বঙ্গ ভবনে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আপনার দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময়ের সানগ্রহ সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন।’ জানা গেছে, বেলা আড়াইটার দিকে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে প্রেরিত চিঠিটি নয়াপল্টনের দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গ্রহণ করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ১০ সদস্যের নামের তালিকার বিষয়ে রিজভী জানান, দলের চেয়ারপার্সনের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এটি ঠিক করবেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রতিনিধি দলের নাম চূড়ান্ত হওয়ার পর তা বঙ্গ ভবনে পাঠানো হবে।
×