ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের ফোন ধরব কিনা তা বেজিংয়ের বিষয় নয় ॥ সাক্ষাতকারে ট্রাম্প

‘এক চীন’ মানতে বাধ্য নই

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬

‘এক চীন’ মানতে বাধ্য নই

নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ান ‘এক চীনের’ অংশ বলে দীর্ঘদিনের মার্কিন অবস্থান মেনে চলতে অবশ্যই বাধ্য নয়। তিনি প্রায় চার দশকের এ নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বেজিং বিক্ষুব্ধ হতে পারে। ট্রাম্প ‘ফক্স নিউজ সানডে’র সঙ্গে এক সাক্ষাতকার দিচ্ছিলেন। এর আগে তিনি ২ ডিসেম্বর তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে এক টেলিফোন কল গ্রহণ করলে চীন এর কূটনৈতিক প্রতিবাদ জানায়। এদিকে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির অফিসিয়াল পিপলস ডেইলি পত্রিকার প্রকাশিত প্রভাবশালী ট্যাবলয়েড গ্লোবাল টাইমস এক সম্পাদকীয়তে বলেছে, ট্রাম্প কূটনীতিতে শিশুর মতোই অবুঝ এবং ‘এক চীন নীতি’ বেচাকেনা করা যায় না। খবর বিবিসি, এএফপি ও ইয়াহু নিউজের। ট্রাম্প ফক্সকে বলেন, আমি ‘এক চীন’ নীতি পুরোপুরি বুঝি, কিন্তু আমরা বাণিজ্যসহ অন্যান্য বিষয়ে চীনের সঙ্গে বোঝাপড়ায় না পৌঁছা পর্যন্ত কেন আমাদের এক ‘চীন নীতি’ মেনে চলতে বাধ্য থাকব, তা আমি জানি না। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের ওই ফোন কল গ্রহণ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন। স্বশাসিত দ্বীপ তাইওয়ানকে পুনরেকত্রীকরণের অপেক্ষায় রয়েছে- এমন এক দুর্বৃত্ত প্রদেশ বলে মনে করে থাকে চীন। এটি যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক দশকের কূটনৈতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ। এই ঐতিহ্যে চীনের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে বেজিংকে স্বীকৃতি দেয়া হয়। এ বোঝাপড়াই ১৯৭২ সালে রিচার্ড নিক্সন চীন সফর করার পর দুটি দেশের সম্পর্কের অন্যতম মূলস্তম্ভ হয়ে রয়েছে। প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ১৯৭৯ সালে তাইওয়ানের ওপর থেকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি প্রত্যাহার করে নিয়ে চীনকে সেই স্বীকৃতি দেয়ার পর এই প্রথম কোন নবনির্বাচিত বা দায়িত্বরত মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাইওয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। ট্রাম্প বলেন, চীনের মুদ্রানীতি উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ চীন সাগর সম্পর্কিত উত্তেজনা প্রশমনে সহযোগিতা করছে না। তিনি তার এ অভিযোগ পুনর্ব্যক্ত করেন যে, চীন মুদ্রার কারসাজি করছে। তিনি বলেন, দেশটির মুদ্রার অবমূল্যায়ন করায় আমরা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তিনি অন্যান্য উত্তেজনাপূর্ণ বিষয়ে চীনের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, যখন আমরা তাদের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করি না, তখন তারা সীমান্তে আমাদের পণ্যের ওপর শুল্ক ধার্য করে, তারা দক্ষিণ চীন সাগরের মধ্যে এক বিশাল দুর্গ নির্মাণ করছে, অথচ এটি করা উচিত নয়। পরমাণু অস্ত্র প্রসঙ্গে ট্রাম্প যুক্তি দেখান যে, উত্তর কোরিয়ার প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে চীন ওই সমস্যার সমাধান করতে পারে। তিনি বলেন, খোলাখুলি বলতে গেলে চীন উত্তর কোরিয়ার বিষয়ে আমাদের একেবারেই সহায়তা করছে না। ট্রাম্প ফক্স নিউজকে বলেন, তিনি তাইওয়ানের নেত্রীর ফোন ধরবেন কিনা, সে সিদ্ধান্ত নেয়া চীনের বিষয় নয়। তিনি বলেন, আমি চাই না চীন আমাকে হুকুম করুক এবং এ ফোন আমার কাছে এসেছিল। এটি খুব সুন্দর কল ছিল। সংক্ষিপ্ত। আমি একটি কল ধরতে পারব না, একথা কেন অন্য কোন দেশ বলতে পারবে? তিনি বলেন, সত্য কথা কি, ওই কল না ধরা আসলেই খুব অশ্রদ্ধাজনক কাজ হতো। চীনা গ্লোবাল টাইমস বলেছে, যখন সময় আসবে তখন চীনের মূল ভূখ- তাইওয়ানের প্রতি চূড়ান্ত নতুন নীতি গ্রহণ করবে। পত্রিকাটি বলেছে, আমরা প্রমাণ করব যে, যুক্তরাষ্ট্র, তাইওয়ান প্রণালীর ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে সবসময়ই অসমর্থ হয়েছে এবং বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ট্রাম্পের ‘এক চীন’ নীতি বিকিয়ে দেয়ার অভিলাষ এক বালসুলভ কৌতুহল। অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক চীন নীতির চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু রয়েছে একথা চিন্তা করা চীনের পক্ষে কঠিন। বেজিং তাইওয়ানকে এর নিজস্ব ভূখ-ের অংশ বলে গণ্য করে থাকে। চীনের সব কূটনৈতিক অংশীদারকেও প্রকাশ্যে এ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে বলে বেজিং দাবি জানিয়ে থাকে। চীন সম্প্রতি ট্রাম্প ও তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েনের মধ্যকার টেলিফোন কলকে খাটো করিয়ে দেখিয়েছে। কিন্তু যদি ট্রাম্প চীনের প্রতি মার্কিন নীতির পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে বলে আভাস দিয়ে যান, তবে চীন ক্রমশ শঙ্কিত হবে।
×