ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

শীঘ্রই অভিযানে নামছে বিটিআরসি

লাইসেন্স ছাড়া ইন্টারনেট ব্যবসা করলে ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১০ ডিসেম্বর ২০১৬

লাইসেন্স ছাড়া ইন্টারনেট ব্যবসা করলে ব্যবস্থা

ফিরোজ মান্না ॥ লাইসেন্স ছাড়া কোনভাবেই ইন্টারনেট সেবা দেয়া যাবে না। যেসব প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স ছাড়া ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিটিআরসি। সম্প্রতি কমিশনের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পাড়া-মহল্লায় অবৈধ আইএসপি (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) ও সাইবার ক্যাফে পরিচালনাকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর আগে কয়েক দফা অবৈধ সাইবার ক্যাফেসহ ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করে দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এতেও অবৈধভাবে ইন্টারনেট সরবরাহ ও সাইবার ক্যাফে বন্ধ হয়নি। টেলিযোগাযোগ আইন অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া ইন্টারনেট সংক্রান্ত কোন ব্যবসা পরিচালনা করা যাবে না। এরপরও দীর্ঘদিন ধরে ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবসা চলছে। বিটিআরসি জানিয়েছে, অবৈধভাবে পরিচালিত ইন্টারনেট ব্যবসা দফায় দফায় সতর্ক করার পরও বন্ধ হয়নি। লাইসেন্স ছাড়া এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। পাড়া-মহল্লায় গজিয়ে ওঠা এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কোন বৈধতা নেই। ইন্টারনেটের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমকে তারা অপব্যবহার করছে। ২০০১ সালের বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের বিধান অনুযায়ী সাইবার ক্যাফে পরিচালনা, ইন্টারনেট সেবা প্রদানসহ যে কোন টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানের জন্য কমিশন হতে লাইসেন্স গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু তারা লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে। সারাদেশে কয়েক হাজার এ ধরনের প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে বলে বিটিআরসি এক হিসাবে জানিয়েছে। টেলিযোগাযোগ আইনের ৩৫ ধারার বিধান অনুযায়ী, লাইসেন্স ব্যতীত টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি স্থাপনসহ সেবা প্রদান করা একটি অপরাধ। এজন্য আইনে অনধিক ১০ বছর কারাদ- বা অনধিক ৩শ’ কোটি টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-ণীয় করার বিধান রয়েছে। কমিশন থেকে অবৈধ ইন্টারনেট এবং সাইবার ক্যাফে পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অভিযান পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সারাদেশে যে কোন স্থানে যে কোন প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিকে কমিশন থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। সূত্র জানিয়েছে, বিটিআরসি থেকে প্রায় ৫শ’ প্রতিষ্ঠান কলসেন্টার স্থাপনের জন্য লাইসেন্স নিয়েছিল। পরে ৫০টি কলসেন্টার নিজেরাই আবেদন করে লাইসেন্স বাতিল করেছে। বর্তমানে সাড়ে ৪শ’ লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। লাইসেন্স পাওয়ার পর প্রথম বছরে মাত্র চারটি প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম শুরু করেছিল। পরের বছর মাত্র ৫১টি প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম শুরু করে। বাকিরা দুই বছরেও কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। তবে তারা প্রতি বছর লাইসেন্স নবায়ন করে যাচ্ছে। সাইবার ক্যাফে করতেও লাইসেন্স নেয়ার বিধান থাকলেও তারা কোন লাইসেন্স নেয়নি। বিটিআরসির দেয়া সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিকেও তারা কোন গুরুত্ব দিচ্ছে না। এ অবস্থায় লাগামহীনভাবে সারাদেশেই গড়ে উঠেছে সাইবার ক্যাফে। অন্যদিকে, বৈধভাবে লাইসেন্স নিয়ে আরএসপি ব্যবসা করছে মাত্র সাড়ে ৪শ’র মতো প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এর বাইরে কয়েক শ’ অবৈধ আইএসপি ইন্টারনেট সেবা দিয়ে যাচ্ছে। ডিশ লাইনের মতো পাড়া-মহল্লায় মস্তানরা এ সেবা দিয়ে যাচ্ছে। লাইসেন্সবিহীন সাইবার ক্যাফের আড়ালে চলছে ইন্টারনেটভিত্তিক নানা অপরাধ। এ ধরনের ক্যাফে বন্ধে বারবার আইনী ব্যবস্থা নেয়ার নোটিস দিয়েও ফল পাচ্ছে না বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। মোবাইল কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে বর্তমানে ইন্টারনেট সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেলেও তরুণ প্রজন্মের একটি অংশ এখনও সাইবার ক্যাফের দ্বারস্থ হচ্ছে। সেখানে পর্নোগ্রাফি দেখাসহ নানা অপরাধমূলক কাজ হচ্ছে। ঢাকা মহানগরীতে লাইসেন্সধারী বৈধ সাইবার ক্যাফে ও ইন্টারনেট সেবা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র ১৪৫টি। কিন্তু সাইবার ক্যাফে ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (সিসিওএবি) দেয়া তথ্যানুসারে, রাজধানীতে বর্তমানে ৫শ’র বেশি সাইবার ক্যাফে ও ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা ইন্টারনেট সেবা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৭০ ভাগেরই লাইসেন্স নেই। এমনকি ঢাকায় এ্যাসোসিয়েশনের আওতাভুক্ত অনেক প্রতিষ্ঠানেরই লাইসেন্স নেই। সংগঠনের বাইরে ঢাকায় অন্তত দুই হাজার ইন্টারনেট সেবাভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিটিআরসি ইন্টারনেট ফিল্টারিংয়ের জন্য ইতোমধ্যে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে। অনলাইনে আপত্তিকর কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি কমিটিও করেছে। কমিটি কিভাবে ইন্টারনেট ফিল্টারিং করা যায় তার প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে। ওই সুপারিশের ভিত্তিতে ইন্টারনেটের অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইন্টারনেটকে এভাবে আর অরক্ষিত রাখা হবে না। বিটিআরসির এক কর্মকর্তা বলেন, এখানে কিছু নিয়ন্ত্রণ রাখতেই হবে। তা না হলে যার যা খুশি তাই লিখে সমাজে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি করে যাবে। যেসব পর্নো ওয়েবসাইট রয়েছে তা কিভাবে বন্ধ ও নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা নিয়েও কমিটি কাজ করছে। বিশ্বের অনেক দেশেই ইন্টারনেট ফিল্টারিং করেই মানুষের কাছে ব্যান্ডউইথ পৌঁছে দেয়া হয়। এ কারণেই অবেধ সাইবার ক্যাফে ও আইএসপি নিয়ন্ত্রণের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অল্পদিনের মধ্যে অবৈধ সাইবার ক্যাফে ও আইএসপিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করা হবে।
×