জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ সংবিধান সংশোধন প্রশ্নে গণভোটে শোচনীয়ভাবে হেরে গেছেন ইতালির মধ্য বামপন্থী প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও রেনজি। পরাজয়ের পর তিনি পদত্যাগের ঘোষণাও দিয়েছেন। তবে ইউরোপের দেশে দেশে যখন দক্ষিণপন্থীদের উত্থান ঘটছে তখন তার বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে অস্ট্রিয়া। সেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দক্ষিণপন্থী প্রার্থী নরবার্ট হফারকে পরাজিত করে নির্বাচিত হয়েছেন উদারপন্থি গ্রিন পার্টির প্রার্থী আলেকজান্ডার ফন ডার বেলেন। খবর বিবিসির।
পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের ভূমিকা ও আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা কমিয়ে আনতে রবিবার ইতালিতে গণভোট হয়, যেখানে সব বিরোধী দলই সংবিধান সংশোধনের বিপক্ষে ছিল। দেশটির রাষ্ট্রীয় স¤প্রচার মাধ্যম আরএআই জানায়, ৪২ থেকে ৪৬ শতাংশ ভোটার প্রধানমন্ত্রী মাত্তিও রেনজির ডাকে সাড়া দিয়ে সংবিধান সংশোধনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। বাকি ৫৪ থেকে ৫৮ শতাংশ ভোটার তাকে ‘না’ বলে দিয়েছেন। গণভোটে অংশ নিয়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ ভোটার। এরপর গভীর রাতে সংবাদ সম্মেলনে এসে পদত্যাগের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী রেনজি।
দায়িত্ব নেয়ার আড়াই বছরের মাথায় রেনজির এই পদত্যাগের ফলে ইউরো জোনের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ইতালি নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে পড়তে পারে। অর্থনৈতিক সংস্কারের ধীরগতি নিয়ে সমালোচনার মুখে এনরিকো লেত্তার পদত্যাগের পর ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইতালির প্রধানমন্ত্রী হন ৩৯ বছর বয়সী মাত্তিও রেনজি। মধ্য বামপন্থী রেনজির প্রতিশ্রুতির মধ্যে নির্বাচন পদ্ধতি ও সংবিধান সংস্কারের পাশাপাশি শ্রমিক ও কর ব্যবস্থাপনার সংস্কারের কথাও ছিল। ইতালিকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় আরও এগিয়ে নিতে আমলাতন্ত্রের দৌরাত্ম্য কমিয়ে আনার কথা বলেছিলেন তিনি। আর সেজন্যই সাংবিধানিক সংস্কার করে সিনেটের প্রভাব ও আঞ্চলিক প্রশাসনের ক্ষমতা কমিয়ে আনার প্রস্তাব ছিল তার। কিন্তু বিরোধী দলগুলোর বক্তব্য ছিল, ওই প্রস্তাব মেনে সংবিধান সংশোধন করা হলে বাস্তবে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হবে প্রধানমন্ত্রীর হাতে। ইতালির গণভোটের ফল ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদেরও অস্বস্তিতে ফেলেছে। ‘না’ এর জয়কে দেখা হচ্ছে জনগণের প্রতিষ্ঠানবিরোধী মনোভাবের নির্দেশক হিসেবে। তবে অভিবাসনবিরোধী নর্দার্ন লীগের নেতা মাত্তিও সালভিনি এই ভোটের ফলকে বর্ণনা করেছেন ‘বিশ্বের তিন-চতুর্থাংশের পরাক্রমের বিরুদ্ধে জনগণের বিজয়’ হিসেবে।
এদিকে, ব্রিটেনের ব্রেক্সিট, ইতালিতে গণভোটে মাত্তিও রেনজির পদত্যাগের ঘোষণা নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যখন আতঙ্ক বাড়ছে তখন অস্ট্রিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে বেলেন আশ্বস্ত করলেন। তিনি ইউরোপের পক্ষে কথা বললেন। বললেন, এ বিজয় স্বাধীনতা, সমতা ও সংহতির ভিত্তিতে ইউরোপপন্থী অস্ট্রিয়ার বিজয়। তিনি অস্ট্রিয়ার পতাকার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, লাল-সাদা-লাল হলো আশা ও পরিবর্তনের প্রতীক। লাল-সাদা-লালের সংকেত এখন অস্ট্রিয়া থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়েছে।
তিনি আরও আশ্বস্ত করেন, তিনি হবেন খোলা ও উদার মনের। তবে সবার আগে তিনি হবেন ইউরোপপন্থী অস্ট্রিয়ার প্রেসিডেন্ট।
গত মে মাসে দেশটিতে দ্বিতীয় দফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। এতে স্বল্প ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন বেলেন। কিন্তু তিনি ডাক ভোটের অনিয়মের অভিযোগে প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। আদালত পুনরায় নির্বাচন আয়োজনের কথা বলে। এবার নির্বাচনে তিনি বিজয় পেলেন। মে মাসের নির্বাচনে তিনি এগিয়ে ছিলেন ৩০ হাজার ভোটে। এবার এ সংখ্যা ১০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তার নির্বাচনের পর অভিনন্দন জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক এক বার্তায় বলেছেন, হৃদয় উজাড় করা অভিনন্দন। জার্মানির সোস্যাল ডেমোক্র্যাট ভাইস চ্যান্সেলর সিগমার গাব্রিয়েল অস্ট্রিয়ার এ বিজয়কে দক্ষিণপন্থী পপুলিজমের বিরুদ্ধে বিজয় বলে আখ্যায়িত করেছেন।
অস্ট্রিয়া ইউরোপকে বেছে নেয়ায় এবং মুক্তমনের পরিচয় দেয়ায় দেশটিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ। আগামী বছর ইউরোপের তিনটি দেশে জাতীয় নির্বাচন। এগুলো হলো ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস ও জার্মানি। এসব দেশে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে মূল ধারাবিরোধী ও অভিবাসনবিরোধী দলগুলো।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: