ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মোদি-মমতার কলহ ছায়া ফেলছে তিস্তায়!

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৪ ডিসেম্বর ২০১৬

মোদি-মমতার কলহ ছায়া ফেলছে তিস্তায়!

বিডিনিউজ ॥ তিস্তায় পানি চুক্তি হওয়ার অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করবে এমন শঙ্কায় বিজেপি আর তৃণমূল কংগ্রেসের বিবাদ অস্বস্তি নিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ। নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে মাসখানেক ধরে চলা কেন্দ্র ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের মতপার্থক্য এখন বাদানুবাদে ঠেকেছে। গত সপ্তাহে মমতা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্রেরও অভিযোগ এনেছেন। কলকাতায় ফেরার সময় তার বিমানকে ল্যান্ডিংয়ের অনুমতি না দিয়ে অনেকক্ষণ আকাশে রাখা হয় বলে দাবি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর। তাকে বহন করা বিমানটির জ্বালানি ‘প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল’। দুদিন আগে তৃণমূলপ্রধান মমতা রাজ্যে সেনা অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ করেন। তার দাবি, ‘রাজ্যকে না জানিয়ে’ কেন্দ্রের পাঠানো সেনারা ‘জরুরী অবস্থা’ ঘোষণা করতে তৎপর ছিল। ‘গণতন্ত্র বাঁচাতে’ রাজ্য সচিবালয় নবান্নে সেনা অবস্থানের প্রতিবাদে ৩০ ঘণ্টা অবস্থানও করেছিলেন মমতা। তবে সেনাবাহিনীর ভাষ্য, বার্ষিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে তারা বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত দ্বিতীয় হুগলি সেতুতে সৈন্যরা অবস্থান করেছিল। মোদি-মমতার নতুন এ বিবাদের সূত্রপাত নোট বাতিলকে কেন্দ্র করে। গত ৮ নবেম্বর প্রধানমন্ত্রী মোদি দেশজুড়ে এক হাজার ও পাঁচশ রুপীর নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের কথা জানান। আচমকা এ সিদ্ধান্তে দরিদ্ররা বিপাকে পড়ছে অভিযোগ জানিয়ে বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে নিজের এক সময়ের দল কংগ্রেস এবং ‘চিরশত্রু’ বামদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলান তৃণমূল নেত্রী। এ নিয়ে বাদানুবাদের জেরে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে মমতার সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে বলে ধারণা করছেন অনেকেই। এরই অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগের তীর ছুড়ছেন তিনি। মমতার এ অভিযোগগুলো অবশ্য ‘হেসেই উড়িয়ে দিচ্ছেন’ বিজেপির শীর্ষ নেতারা। এর মধ্যে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও বিজেপিনেতা মনোহর পারিকার বলেছেন, ‘হতাশা’ ঢাকতেই এমনটা করছেন মমতা। পারিকারের এ মন্তব্য কেন্দ্র ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ‘চিড়’কে ইঙ্গিত করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন এক সময়ে এ বিবাদের সৃষ্টি হলো, যখন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে তিস্তা ইস্যুতে মতৈক্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল। ভারত এর আগে বাংলাদেশকে চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লী সফরের আগেই ঝুঁলে থাকা তিস্তা চুক্তি বিষয়ে ‘চূড়ান্ত পর্যায়ে’র কাজ শেষ করে আনতে পারবে বলে আশ্বস্ত করেছিল। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এখনও বলছেন, দেশের ভেতরকার রাজনৈতিক পার্থক্য ‘বন্ধু’ ও প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে নেয়া সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে না। তবে বিশ্লেষকরা এমনটা ভাবছেন না; তাদের ভাষ্য, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য ‘আকাশকুসুম কল্পনা’। মোদি সরকার অবশ্য প্রথম থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সমঝোতার ব্যাপারে পরিষ্কার বার্তা দিয়ে আসছিল। এর আগে মনমোহন সরকার তিস্তা চুক্তি নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেলেও মমতার বাধার মুখে সেখান থেকে সরে আসে। মমতা এ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ‘ন্যায্য চুক্তি’ দাবি করছিলেন বলে খবর দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যমের। ‘কিন্তু এখন নোট বাতিল ইস্যুতে মোদি ও মমতার যেরকম বিবাদপূর্ণ সম্পর্ক, তাতে মোদির কথা মমতা শুনবেন, এমনটা মনে হচ্ছে না,’ বলছেন কলকাতাভিত্তিক সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস এ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (সিএসআইআরডি) বিনোদ মিশ্র। গত কয়েক মাস ধরে মমতা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও উষ্ণ করতে চাইছেন, এমন ধারণা করা বিশ্লেষকদেরও একই শঙ্কা। ‘তিনি বাংলাদেশকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতেই দেখছিলেন, হাসিনা যেন তাকে বিশ্বাস করতে পারে সে ধরনের নিশ্চয়তাও তার ছিল’, বলেন বাংলাদেশ বিষয়ক গবেষক বিমল প্রামানিক। ধরে নেয়া হচ্ছিল- মনমোহন যেটা পারেনি, মোদি সরকার যদি সেই তিস্তা চুক্তি সম্পাদন করতে পারে তাহলে তা বিজেপির মুকুটে নতুন পালক যোগ করবে। মমতা এ সুযোগটাই মোদিকে নিতে দেবেন না বলে মনে হচ্ছে এখন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিস্তা চুক্তি নিয়ে এখনও আশাবাদী তারা। প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগেই এ বিষয়টি গতিপ্রাপ্ত হবে বলেও মনে করছেন তারা। এজন্য পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক’সহ সব ধরনের কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহতও আছে। ‘তিস্তা চুক্তির বিষয়ে ভারতের সরকার ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের প্রতি আমাদের যে আস্থা আছে, তা আমরা পুনরায় জানিয়েছি,’ বলেন ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী। বিশ্লেষকরা বলছেন, মোদি-মমতার বিবাদে উদ্বিগ্ন হওয়া এবং অপেক্ষা করা ছাড়া ঢাকার আর করারও কিছু নেই। তবে দিল্লী যদি তিস্তা চুক্তিতে তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না করতে পারে, তাহলে হাসিনার সমর্থনকে সঙ্গে রাখার বিষয়ে তাদের বিশাল চাপের মুখোমুখি হতে হবে, বলছেন তারা।
×