ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পা কেটে ফেলা হয় হাসপাতালে ॥ আত্মসমর্পণের পর ১৩ আসামি জেলে, গ্রেফতার ৩

গ্রাম্য দলাদলিতেই হামলার শিকার শাহানুর

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৪ নভেম্বর ২০১৬

গ্রাম্য দলাদলিতেই হামলার শিকার শাহানুর

এম. রায়হান, ঝিনাইদহ থেকে ॥ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নলভাঙ্গা গ্রামে প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয়ে শাহানুর রহমান বিশ্বাসের (৫০) দুই পা কেটে ফেলার ঘটনায় প্রধান আসামিসহ ১৩ জন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে। বুধবার দুপুরে কালীগঞ্জ আমলী আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী আশরাফুজ্জামান তাদের জামিনের আবেদন না মঞ্জুর করে তাদের জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে পুলিশ গত ১৬ অক্টোবর ২ জন ও বুধবার ভোরে ১ জনকে গ্রেফতার করে। আত্মসমর্পণকারীরা হলো, কালীগঞ্জ কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নলভাঙ্গা গ্রামের কামাল হোসেন, মাহবুবুর বিশ্বাস, আজম, মোতালেব, আবু তালেব, হাসান, বিলাল হোসেন, জাহিদ হোসেন, রুহুল আমিন, শিপন, এমদাদুল, আরিফ হোসেন ও বিপ্লব। এছাড়া পুলিশ গ্রেফতার করেছে আজাদ, লিখন ও কোরবান নামে ৩ জনকে। হামলার শিকার দুই পা হারানো শাহানুর বিশ্বাস কালীগঞ্জ উপজেলার কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নের নলভাঙ্গা গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে। এ ঘটনায় সোমবার হাইকোর্ট থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এ মামলার সব আসামিকে গ্রেফতারের আদেশ দেয়া হয়। হাইকোর্টের জারি করা ওই আদেশে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, কালীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও কালীগঞ্জ থানার ওসিকে বিবাদী করা হয়। আদেশে আগামী ৭ দিনের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশও দেয়া হয়। এ বিষয়ে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাহানুর বিশ্বাসের ছোট মেয়ে শাহনাজ পারভীন জানান, আমি সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার পথে কামাল মেম্বরসহ গ্রামের কতিপয় ব্যক্তি আমাকে উত্যক্ত করে। আমার বড় বোনকেও উত্যক্ত করে। সে ঢাকায় রয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় তারা আমার পিতা ও আমার চাচা তো ভাইকে বেধড়ক মারপিট করে। আমার পিতার দুই পা ভেঙ্গে দেয়। তিনি এখন পা হারিয়ে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শাহানুরের বড় মেয়ে যশোর সরকারী মহিলা কলেজের স্নাতক শ্রেণীতে পড়েন। তিনি জানান মাহবুব মেম্বরের ছেলে আজম ও তার সহযোগীরা তাকে বিভিন্নভাবে উত্যক্ত করত। আমার পিতার কোন দোষ নেই। তিনি এসবের প্রতিবাদ করায় তাকে তারা লোহার রড, হাতুড়ি ও লাঠি দিয়ে বেদম মারপিট করে দুই পা ভেঙ্গে দেয়। দু’পা হারানো শাহানুর বিশ্বাস ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ বলেছেন, ‘আদালতের নির্দেশে পুলিশের ব্যাপক ধরপাকড়ের পর বাধ্য হয়ে আসামিরা আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে।’ তিনি বলেন, ঘটনাটি ইভটিজিং বা মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার কোন ঘটনা নয়’। সামাজিক বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের লোকজন শাহানুর বিশ্বাসের উপর হামলা করে তার দুই পা ভেঙ্গে দেয়।’ পরে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে শাহানুর বিশ্বাসের দুই পা কেটে ফেলতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গত ১৬ অক্টোবর শাহানুর গ্রামের ভেতর দিয়ে বাইসাইকেলে যাচ্ছিলেন। বর্তমান কাষ্টভাঙ্গা ইউপি মেম্বর কামাল হোসেন ও তার লোকজন শাহানুর বিশ্বাসকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। তাকে ঠেকাতে আসলে তারা শাহিন নামে আরও একজনকেও বেধড়ক পিটিয়ে জখম করে। তাদের প্রথমে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে শাহানুরের অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে ঢাকা পঙ্গুতে রেফার হয়। পঙ্গু হাসপাতালে বেশকিছুদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তার দুই পা কেটে ফেলা হয়। এখনও তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন। এছাড়া শাহিন নিজ বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ঘটনায় শাহানুরের বড় ভাই সামাউল বিশ্বাস ১৬ জনকে আসামি করে কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৬। এ মামলায় ইভটিজিং বা নারী উত্যক্তের কোন কথা উল্লেখ নেই। মামলায় সামাজিক বিরোধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ মামলার সব আসামি এখন জেল হাজতে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, দীর্ঘ ১০-১৫ বছর ধরে নলভাঙ্গা গ্রামের সাবেক ইউপি মেম্বর মশিউর রহমান ও বর্তমান ইউপি মেম্বর কামাল হোসেন গ্রুপের মধ্যে সামাজিক বিরোধ চলে আসছে। এ বিরোধের জের ধরে উভয় গ্রুপের লোকজনের নামে হত্যাসহ ১৮টি মামলা রয়েছে। ঢাকার পঙ্গুতে চিকিৎসাধীন শাহানুর বিশ্বাসের নামেও কালীগঞ্জ থানায় ১টি হত্যা মামলাসহ ৫টি মামলা রয়েছে। যা এখনও বিচারাধীন। গত ১৬ অক্টোবরে শাহানুর বিশ্বাসের উপর হামলার ঘটনাও সামাজিক বিরোধ বলে তিনি জানান।
×