ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মান বাড়াতে মাধ্যমিক শিক্ষকদের আইসিটি প্রশিক্ষণ

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১৪ নভেম্বর ২০১৬

মান বাড়াতে মাধ্যমিক শিক্ষকদের আইসিটি প্রশিক্ষণ

সমুদ্র হক ॥ শিক্ষার মান বাড়াতে সারাদেশের সব মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকদের তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তির (আইসিটি) বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলা হচ্ছে। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইজ) সরকারের এ বিশেষ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। গত অর্থবছর থেকে প্রথম পর্যায়ে দেশের ১২৫টি উপজেলায় অবকাঠামো স্থাপনা গড়ে তুলে মাধ্যমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু হয়েছে। সূত্র জানায়, পর্যায়ক্রমে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে প্রযুক্তির আওতায় এনে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আইসিটিতে দক্ষ করে তুলে মানবসম্পদে পরিণত করা হবে। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে মাধ্যমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে মাঠপর্যায়ের সকল স্কুলকে শিক্ষা প্রযুক্তিতে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। ব্যানবেইজ সূত্র জানায়, প্রথম পর্যায়ের ১২৫টি উপজেলার সরকারী ও বেসরকারী মাধ্যমিক সকল স্কুলের শিক্ষকদের আইসিটিতে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এসব উপজেলায় ইতোমধ্যে অবকাঠামো স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। দ্বিতল এ ভবনের নিচতলায় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় ও দোতলায় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এ প্রকল্পের নাম উপজেলা আইসিটি ট্রেনিং এ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার ফর এডুকেশন (ইউআইটিআরসিই)। বগুড়ার নন্দীগ্রাম, শিবগঞ্জ ও গাবতলী উপজেলায় এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। নন্দীগ্রাম উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোতাহার হোসেন জানান, তার এলাকার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। প্রতি ব্যাচে ২৪ শিক্ষককে মাল্টিমিডিয়ার জ্ঞানে দক্ষ করে তোলা হয়েছে, যাতে তারা নিজেদের স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষিত করে তুলতে পারে। এ বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল মোমিন জানালেন, তার উপজেলার ১০৮টি মাধ্যমিক স্কুলের সকল শিক্ষককে আইসিটি প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। এমপিওভুক্ত ও এমপিওভুক্ত হয়নি এমন সব স্কুলের শিক্ষককে পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। ভবনের দোতলায় ৩৫টি ডেস্কটপ ও তিনটি ল্যাপটপ কম্পিউটার স্থাপিত হয়েছে। প্রতি ব্যাচে ২৪ শিক্ষক করে ১৫ দিন মেয়াদী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তাদের ভেতর থেকে মাস্টার ট্রেইনার বের করে পরবর্তী ব্যাচের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রথম পর্যায়ের সকল উপজেলায় একই ভাবে এ প্রশিক্ষণ চলছে। এক সূত্র জানায়, দেশের অনেক মাধ্যমিক স্কুলে এখনও কম্পিউটার পেঁৗঁছেনি। সেসব স্কুলে দ্রুত কম্পিউটার পৌঁছানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যেখানে কম্পিউটার পৌঁছেনি সে স্কুলের শিক্ষকদেরও প্রশিক্ষণ দিয়ে রাখা হচ্ছে যাতে তারা কম্পিউটার পৌঁছামাত্র করে ক্লাস শুরু করতে পারে। এ বিষয়ে ব্যানবেইজ সূত্র জানায়, প্রথম পর্যায়ে ১২৫টি উপজেলার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৬০টি উপজেলায় এবং তৃতীয় পর্যায়ে ২০৪টি উপজেলায় অবকাঠামো গড়ে তুলে মাধ্যমিক শিক্ষদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রতিটি অবকাঠামো চারতলার ভিত দিয়ে নির্মিত। বর্তমানে দ্বিতল করে গড়ে তোলা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনে চারতলা করে আইসিটির নানামুখী কর্মসূচী চালু হবে। আগামীতে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদেরও আইসিটিতে দক্ষ করে তোলা হবে। একজন প্রশিক্ষিত শিক্ষক জানান, ডিজিটাল শিক্ষা নিশ্চিত করতে ইন্টারনেট মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, ডিজিটাল পাঠ্যক্রম ও ব্যবস্থাপনার পদ্ধতির কোন বিকল্প নেই। একই সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তির মূল উপকরণ ইন্টারনেট বাধ্যতামূলক। এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণে জ্ঞান দেয়া হচ্ছে। অনেক শিক্ষক এ প্রশিক্ষণ পেয়ে নিজেরা কম্পিউটার কিনে জ্ঞানে সমৃদ্ধ হচ্ছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের এক সূত্র জানায়, শিক্ষার ডিজিটালাইজেশনে বেশকিছু প্রকল্প চলমান। টিচিং কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট তার একটি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র জানায়, ৩৩ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাল্টিমিডিয়ার আওতায় এসেছে। তবে এখনও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে মাল্টিমিডিয়ার আওতায় আনা যায়নি। তবে পর্যায়ক্রমে দ্রুত মাল্টিমিডিয়ার আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত কম্পিউটার থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যেসব স্কুলে কম্পিউটারের প্রশিক্ষক নেই সেসব স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে।
×