ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল চিনি তেল লবণ

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১২ নভেম্বর ২০১৬

বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে  চাল চিনি  তেল লবণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সরবরাহ বাড়লেও কমছে না সবজির দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৮ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি পুরনো আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। চাল, ডাল, আটা, চিনি এবং ভোজ্যতেল আগের মতো বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে লবণের দাম না কমলে লবণ আমদানি উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। প্রতি কেজি লবণ বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকায়। তবে কাঁচাবাজারে মাছের সরবরাহ বেড়েছে। নদী-নালা, খাল-বিল এবং জলাশয়ের পানি কমতে শুরু করায় দেশীয় মিঠাপানির মাছ আসছে বাজারে। সাগর ও নদীতে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। তাই বছরের অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে স্বস্তি আছে ইলিশের বাজারে। ভারতীয় নতুন পেঁয়াজ বাজারে এসেছে। এ কারণে মসলাজাতীয় এ পণ্যটির দাম ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে রয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে, দুই দফায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন লবণ আমদানির অনুমতি দেয়ার দুই মাস পার হলেও এখনও দেশে পৌঁছায়নি আমদানি লবণের বড় একটি অংশ। ফলে খুচরা পর্যায়ে দ্বিগুণ দামে ভোক্তাদের অত্যাবশ্যকীয় এ পণ্যটি কিনতে হচ্ছে। প্রতি কেজি লবণ পেতে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকা। অথচ গত এক বছর আগেও এ লবণের দাম ছিল ১৫-২৪ টাকা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, আমদানিকৃত আড়াই লাখ টন ক্রুড লবণের মধ্যে দেড় লাখ টন লবণ দেশে আনা হয়েছে। এর মধ্যে ৭০ হাজার টন লবণ মিলগুলোতে প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ শুরু হয়েছে। বাকি এক লাখ টন কিছুদিনের মধ্যেই আসবে। এছাড়া চলতি মাসের শেষ নাগাদ দেশীয় লবণ উৎপাদন মৌসুম শুরু হবে। একই সঙ্গে ঘাটতি মেটাতে প্রয়োজনে আরও এক লাখ টন লবণ আমদানি করা হবে। এ লবণ আমদানির বিষয়টি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারীভাবে আরও এক সপ্তাহ বাজার মনিটরিং করা হবে। এর মধ্যে আমদানিকৃত সব লবণ বাজারে প্রবেশ করবে। তারপরও যদি লবণের বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসে বাধ্য হয়ে সরকার লবণ আমদানি উন্মুক্ত করে দেবে। এতে ১০ দিনের মধ্যে বাজার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। এজন্য ব্যবসায়ীদের দ্রুত লবণ আনার নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য সচিব বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বেশি হওয়ার কারণে দেশে ভোজ্যতেল ও চিনির দাম বেড়েছে। তবে চিনির দাম কোনভাবেই ৫৮-৬০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। ভোগ্যপণ্যের সঠিক দাম নির্ধারণে কাজ করা হচ্ছে। আশা করছি, সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম কমে আসবে। যদিও আমদানিকারকরা বলছেন, লবণবোঝাই মাদার ভেসেল বঙ্গোপসাগরে ভিড়েছে। কিন্তু লাইটার জাহাজের সঙ্কট থাকায় লবণ খালাসে দেরি হচ্ছে। পাশাপাশি লাইটার জাহাজ সঙ্কটের কারণে মাদার ভেসেলের ভাড়া বেড়ে গেছে। এছাড়া শিপমেন্টের সময় মাত্র ৩০ দিন। এ বাস্তবতায় শিপমেন্টের সময় বাড়িয়ে ৪৫ দিন করার কথা বলছেন তারা। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী খোলা লবণ ২০-২৫ টাকার মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে বলেও দাবি করছেন মিল মালিকরা। এদিকে, অত্যাবশ্যকীয় চার পণ্য চাল, চিনি, ভোজ্যতেল এবং লবণ বিক্রি হচ্ছে অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি দামে। এছাড়া দাম বাড়ার তালিকায় আছে নিত্যপণ্য শাকসবজি। এসব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে সরকারীভাবে কিছু পদক্ষেপ থাকলেও বাজারে তার কোন প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বরং আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও দেশে দফায় দফায় বাড়ছে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য চাল, চিনি, ভোজ্যতেল, লবণ, রসুন এবং ডালের দাম। পেঁয়াজ ছাড়া গত এক বছরে ১১৪টি খাদ্যপণ্যের সবগুলোর দাম বেড়েছে। ২২টি নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী এবং ১৪টি সেবা সার্ভিস নিতে মানুষকে আগের তুলনায় বেশি খরচ করতে হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের জাঁতাকলে পড়ে ভোক্তাদের ত্রাহি অবস্থা। স্বল্প আয়ের মানুষ ভোগ্যপণ্য কিনতে উপার্জনের সবটুকু ব্যয় করছেন। তারপরও স্বস্তি মিলছে না। সংশ্লিষ্টদের মতে, বাজার ব্যবস্থায় এ নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির লাগাম টেনে ধরা ও কারসাজি রুখতে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় সরকারকে আরও কঠোর ও কৌশলী হতে হবে। কার্যকর করতে হবে প্রতিযোগিতা কমিশন আইন। জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের ঘুম ভাঙ্গাতে হবে। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগ করে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেয়ারও তাগিদ দিয়েছে দেশে ভোক্তা অধিকার আন্দোলনের সংগঠনগুলো। এদিকে, সরকার নিয়ন্ত্রিত ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, বর্তমানে প্রতি কেজি সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬-৫৬ টাকায়। এক্ষেত্রে এক বছরে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১১ শতাংশ, মাঝারি মানের ৪০-৪৫ এবং মোটা স্বর্ণা, চায়না ও ইরি জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকায়। এক্ষেত্রে মোটা চালের দাম বেড়েছে প্রায় ১৯ শতাংশ। প্রতি লিটার লুজ সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৮৪-৮৬ টাকা এবং গত এক বছরে দাম বেড়েছে প্রায় ১২ ভাগ। চিনির বিক্রি হচ্ছে ৭২-৭৫ টাকা কেজি এবং এক্ষেত্রে দাম বৃদ্ধির হার ৭৩ শতাংশ, লবণ দ্বিগুণ দামে ৩৫-৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত এক বছরে অত্যাবশ্যকীয় এ পণ্যটির দাম বেড়েছে ৫২ ভাগ পর্যন্ত। ৭০ শতাংশ দাম বেড়ে রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮৫ টাকা কেজি। মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯৫-১৫০ টাকা কেজি এবং এক্ষেত্রে দাম বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত। গত এক বছরে শুধু পেঁয়াজের দাম হ্রাস পেয়েছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০-৩৫ টাকায় এবং এক বছরে দাম কমেছে প্রায় ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত। এ বাস্তবতায় ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ে চরম অস্বস্তিতে দেশের কোটি কোটি সাধারণ ভোক্তা। লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে অস্বস্তি বিরাজ করছে সব শ্রেণীর ক্রেতাদের মধ্যে। ক্যাব সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমানের মতে, বাজার ব্যবস্থায় প্রতিযোগিতা হ্রাস ও আইনী নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণেই অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট গড়ে উঠছে। তারা অযৌক্তিক মুনাফার উদ্দেশ্যে সময় ও সুযোগ বুঝে বাজার বিভাজনের মাধ্যমে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে আসছে। এ প্রবণতা ভোক্তা কিংবা সরকার কারও জন্যই শুভকর নয়। সাপ্তাহিক বাজারদর ॥ রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলো ভরে উঠেছে শীতের সবজিতে। কিন্তু দাম কমছে না। রাজধানীর কাওরানবাজারসহ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে এ চিত্র লক্ষ্য করা যায়। সরেজমিন দেখা যায়, শীতকালীন সবজিসহ বিভিন্ন সবজির গত সপ্তাহে যে দাম ছিল তা স্থিতিশীল রয়েছে। দু-একটি সবজির দাম কিছুটা কমলেও আলুর দাম আবার বেড়ে গেছে। নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি। ফুলকপি, বাঁধাকপি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শিম ৫০ টাকা, টমেটো ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহেও এই দামে বিক্রি হয়েছে। লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা দামে। পেঁয়াজ-রসুনের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ (দেশী) ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। আমদানি পেঁয়াজ ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। রসুন ১২০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের তুলনায় বাজারে বয়লার ও লেয়ার মুরগির দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকায়। এছাড়া আকারভেদে দেশী মুরগি কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকায়। গরু ও খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকায়। এছাড়া প্রতি হালি ফার্মের ডিম ৩০-৩৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
×