ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শেষ ওভারে মাহমুদুল্লাহর ৩ উইকেটে রাজশাহী কিংসকে ৩ রানে হারাল খুলনা টাইটান্স

মাহমুদুল্লাহর ওভারেই বাজিমাত খুলনার

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ১০ নভেম্বর ২০১৬

মাহমুদুল্লাহর ওভারেই বাজিমাত খুলনার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ টান টান উত্তেজনার ম্যাচে শেষ ওভারে রাজশাহী কিংসের জিততে ৭ রান লাগে। হাতে থাকে ৩ উইকেট। শেষ বলে জিততে লাগে ৪ রান। এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে ছক্কা হাঁকাতে চাইলেন নাজমুল। বলটি ব্যাটে লাগলই না। স্ট্যাম্পিং হয়ে গেলেন। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ সে কি দৌড় দিলেন। দুই হাত পাখির মতো করে ছুটছেন তো ছুটছেন। শেষ ওভারে তার দুর্দান্ত বোলিংয়েই যে জিতল খুলনা টাইটান্স। শেষ ওভারে ৩ রানের বেশি হতে দেননি মাহমুদুল্লাহ। আবার ৩ উইকেটও তুলে নিলেন। ৩ রানে জিতে গেল খুলনা। ১৩৩ রান করে রাজশাহীকে ১৩০ রানের বেশি করতে দেয়নি। টুর্নামেন্টে শুভ সূচনাও করল খুলনা। মাহমুদুল্লাহও দেখিয়ে দিলেন, কিভাবে নেতৃত্ব দিতে হয়। প্রয়োজনে কিভাবে দায়িত্ব নিতে হয়। ব্যাটিংয়ে অবশ্য খুলনার দুর্বলতাই প্রকাশ পেয়েছিল। কিন্তু বোলিংয়ে সেই দুর্বলতা কাটিয়ে দেয়। পাকিস্তান পেসার জুনায়েদ খানতো ২৪ রানেই রাজশাহী কিংসের ৩ উইকেট শিকার করে নিলেন। এরপর ৫৯ রানে গিয়ে ইংল্যান্ডের সামিত প্যাটেলকে আউট করে দেন আরেক পাকিস্তান স্পিনার মোহাম্মদ আসগার। শুরুতে যে ৪ উইকেটের পতন ঘটল রাজশাহীর, সবকটি পাকিস্তানী বোলারদের দখলে গেল। এরপর পঞ্চম উইকেটে গিয়ে মমিনুল হক ও অধিনায়ক ড্যারেন সামি প্রতিরোধ গড়েন। দুইজন মিলে দলকে জয় এনে দেয়ার স্বপ্নও দেখান। ৫২ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। দলের জিততে তখন ১৮ বলে ২৩ রান লাগে। এমন সময় সামিকে (৩১) আউট করে দেন পেসার শফিউল। সামির আউটে খেলা যেন ৫০/৫০ অবস্থায় দাঁড়িয়ে যায়। কিন্তু দুইবার নতুন জীবন পাওয়া মমিনুল হক থাকায় রাজশাহীর আশা থাকে। সেই আশা অবশ্য নিমিষিই শেষ হয়ে যায়। ১৮তম ওভারের প্রথম বলে সামি আউট হন। এরপর তৃতীয় ও চতুর্থ বলে টানা দুটি বাউন্ডারি হাঁকান মমিনুল। ব্যবধান কমিয়ে আনেন। জিততে তখন ১৪ বলে ১৪ রান লাগে। এমন সময়ই শট খেলতে গিয়ে আউট হয়ে যান মমিনুল। তবে সাজঘরে ফেরার আগে ৫৭ বলে ৬ চারে ম্যাচের সর্বোচ্চ ৬৪ রানের ইনিংসটি খেলেন। তার এ ইনিংসে জয়ের কাছাকাছিও চলে যায় রাজশাহী কিংস। ১২ বলে জিততে যখন ১৩ রান লাগে, এমন সময় আবার বল হাতে নেন জুনায়েদ। তার প্রথম বলেই থার্ড ম্যান অঞ্চল দিয়ে চার মেরে দেন ফরহাদ রেজা। জিততে যখন ৯ বলে ৯ রান লাগে, এমন সময় জুনায়েদের করা বলটি সামান্য বাউন্স হয়। বলে ছোয়া লাগাতে গিয়ে শর্ট কাভারে মাহমুদুল্লাহর হাতে ক্যাচ তুলে দেন ফরহাদ। জুনায়েদের ওভারে ৬ রান আসে। আর তাতে করে শেষ ওভারে জিততে ৭ রান লাগে। শেষ পর্যন্ত কে জিতবে? এ প্রশ্ন উঠতেই চমক। শেষ ওভারটি করতে বল হাতে নেন মাহমুদুল্লাহ। প্রথম দুই বলে ২ রান আসে। তৃতীয় বল ওয়াইড হয়। আর তাতে ৪ বলে ৪ রানের প্রয়োজন থাকে। কি উত্তেজনা ম্যাচে। চতুর্থ বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে রাজু আউট হয়ে যান। ৩ বলে ৪ রান লাগে। সামিকে বোল্ড করে দেন মাহমুদুল্লাহ। হ্যাটট্রিকেরও আশা জাগান মাহমুদুল্লাহ। জিততে ২ বলে ৪ রান লাগে। হাতে থাকে ১ উইকেট। হ্যাটট্রিক হয়েও যেত। যদি নাজমুল স্ট্যাম্পিং হয়ে যেতেন। কিন্তু হলেন না। ১ বলে জিততে ৪ রান লাগে। নাজমুল এবার স্ট্যাম্পিং হয়ে গেলেন। ২০ ওভারে ১৩০ রানের বেশি করতে পারল না রাজশাহী কিংস। অলআউটও হয়ে গেল। রাজশাহীর ইনিংসের আগে খুলনার ব্যাটসম্যানরাও ব্যাট হাতে ছন্নছাড়া ব্যাটিংই প্রদর্শন করেন। মেহেদী হাসান মিরাজ তার দুর্দান্ত ফর্ম বজায় রেখেছেন। প্রথম ২ ওভারে মাত্র ২ রান দেন। আবার ১টি উইকেটও শিকার করেন। সেটি আবার খুলনার হারান প্রথম উইকেট। তবে শেষ পর্যন্ত আর একটি ওভার করার সুযোগ দেয়া হয়নি মিরাজকে। ৩ ওভারে শেষ পর্যন্ত ১৫ রান দিয়ে ১ উইকেট শিকারই প্রথম ম্যাচে মিরাজের পুঁজিতে থাকে। মিরাজের বোলিং দেখার দিকেই সবার দৃষ্টি ছিল। তবে সেই দৃষ্টি নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেন পেসার আবুল হাসান রাজু। খুলনার ব্যাটসম্যানরা রাজশাহীর বোলারদের সামনে যেন অসহায় হয়ে পড়েন। ৭২ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে খুলনা। সেই ধাক্কা কিছুটা সামলে নেন মাহমুদুল্লাহ ও অলক কাপালী। দুইজন মিলে পঞ্চম উইকেটে ৩৯ রানের জুটি গড়েন। কিন্তু দলের ১১১ রানের সময় মাহমুদুল্লাহ (৩২) সাজঘরে ফেরেন। এরপর ১৪ রানেই নেই আরও ৩টি উইকেট। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান স্পিনার মোহাম্মদ আসগার অপরাজিত ৮ রান করেন। খুলনার স্কোরও ৮ উইকেটে ২০ ওভারে ১৩৩ রানে গিয়ে দাঁড়ায়। রাজুতো একাই ৫ উইকেট তুলে নেন। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। রাজশাহীর বোলিংয়ের চেয়েও যে খুলনার বোলিং দুর্দান্ত হয়। বিশেষ করে মাহমুদুল্লাহ কি বোলিং ঝলকই না দেখালেন।
×