ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি বাড়ানোর উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১০ নভেম্বর ২০১৬

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি বাড়ানোর উদ্যোগ

এম শাহজাহান ॥ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রফতানি বাড়ানোর নতুন কর্মকৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে। আগামী মাসে টিকফা ফোরামের বৈঠকে দেশটিতে বাজার সম্প্রসারণসহ পোশাকের দাম বাড়ানোর আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে ঢাকা। ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে ওবামা প্রশাসনের স্থগিত করা জিএসপি পুনর্বহালে জোর লবিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকেও গ্রহণ করা হবে নানামুখী পরিকল্পনা। পোশাকখাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, নয়া মার্কিন সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে পোশাক রফতানি বাড়ানো হবে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, জিএসপি পুনর্বহালে নতুন সরকারকে শীঘ্রই প্রস্তাব দেয়া হবে। জানা গেছে, রানা প্লাজা দুর্ঘটনা ইস্যুতে গত তিন বছর আগে মার্কিন সরকার বাংলাদেশী রফতানি পণ্যের ওপর বিদ্যমান জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়। নিরাপদ কর্ম পরিবেশ এবং শ্রম অধিকার সম্পর্কিত ১৬ শর্ত সংবলিত বাংলাদেশ এ্যাকশন প্লান বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয় দেশটির বাণিজ্যবিষয়ক দফতর ইউএসটিআর। সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন উদ্যোগে সবগুলো শর্ত পূরণ করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। কিন্তু এরপরও ওবামা প্রশাসন রফতানিতে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা নিশ্চিত করেনি। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়মানুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের এটি ন্যায্য অধিকার। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকারের সঙ্গে জিএসপিসহ অর্থনৈতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে শীঘ্রই আলোচনা করা হবে। জিএসপি ফিরিয়ে দেয়ার অনুরোধ করা হবে। তিনি বলেন, তাদের দেয়া সব শর্ত পূরণ করা হয়েছে। এটি একটি চলমান ইস্যু। নতুন সরকারের কাছে অর্থনৈতিক সামগ্রিক বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অভিবাসীদের ওপর কোন চাপ আসবে না। চিন্তার কোন কারণ নেই, তাদের কিছুই হবে না। এছাড়া বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক অন্যান্য কর্মকা- আগের মতো চলতে থাকবে। বরং এটাকে আরও এগিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা গ্রহণ করবে সরকার। এদিকে, বাংলাদেশী বস্ত্র ও পোশাকের শীর্ষ গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে দেশটিতে বস্ত্র ও পোশাক রফতানি বাবদ আয় ১ শতাংশ বেড়েছে। ওই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ৩৩৬ কোটি ১৩ লাখ ৭১ হাজার ডলারের বস্ত্র ও পোশাক রফতানি হয়েছে। দেশটিতে বাংলাদেশী পোশাক আমদানি বেড়েছে প্রায় ১ শতাংশ। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অধীন অফিস অব টেক্সটাইলস এ্যান্ড এ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এক বছরের ব্যবধানে দেশটিতে বস্ত্র ও পোশাক রফতানি বেড়েছে ২ কোটি ৮৯ লাখ ১৪ হাজার ডলারের। গত বছরের একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ৩৩৩ কোটি ২৪ লাখ ৫৭ হাজার ডলারের বস্ত্র ও পোশাক রফতানি হয়েছিল। এ হিসেবে আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে দশমিক ৮৭ শতাংশ। যদিও চলতি অর্থবছরের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি ১২ শতাংশ কমেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পোশাক রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম মান্নান কচি জনকণ্ঠকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকারের সঙ্গে অবশ্যই পোশাক রফতানি বাড়ানোসহ জিএসপি পুনর্বহালে জোর লবিং চালাতে হবে। সরকার টু সরকার (জিটুজি) এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এছাড়া বিজিএমইএ থেকেও জিএসপি পুনর্বহালে ব্যবসায়ী টু ব্যবসায়ী পর্যায়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হবে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, দেশের পোশাক খাতে সহযোগিতা দেবে ট্রাম্প প্রশাসন। এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রথম সহসভাপতি আবুল কাশেম বলেন, পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সব শর্ত পূরণের পরও দীর্ঘদিন ধরে জিএসপি সুবিধা স্থগিত রাখা হয়েছে। আশা করছি, ট্রাম প্রশাসন জিএসপির দ্বার খুলে দেবে। বিজিএমইএ’র সহসভাপতি মোহাম্মদ নাসির বলেন, নতুন সরকারের সময় যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকের বাজার আরও বড় হবে। তৈরি পোশাকের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে ট্রাম প্রশাসন এগিয়ে আসবে বলে মনে করছি। এ লক্ষ্যে সরকার টু সরকার জরুরী বৈঠক হওয়া প্রয়োজন। এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক তাবারাকুল তোসাদ্দেক হোসেন টিটু বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এগিয়ে নিতে কাজ করবে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। পোশাক রফতানির পাশাপাশি এই বাজারে প্লাস্টিক, পাটপণ্যসহ বিভিন্ন সামগ্রী রফতানির সুযোগ রয়েছে। আশা করছি, নতুন সরকার বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা চালু করে দেবে। জানা গেছে, আনুষ্ঠানিকভাবে নয়া মার্কিন প্রশাসনের কাছে পোশাক রফতানিতে জিএসপি সুবিধা চাওয়া হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেল খুব শীঘ্রই এ ব্যাপারে ইউএসটিআরে চিঠি দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পোশাকে জিএসপি সুবিধা পাওয়া গেলে অতিরিক্ত আরও ৬ হাজার কোটি টাকার রফতানি আয় বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যুক্তরাষ্ট্র ৪ হাজার ৮৮০টি পণ্যে ১২৯ দেশকে শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা দিয়েছে। এ দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ ৫০ রফতানিকারক দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান। এছাড়া রফতানিতে বাংলাদেশের ৯৭ পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশের প্রধান রফতানি পণ্য গার্মেন্টস, টেক্সটাইল এবং নিটওয়্যার পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়া হয়নি। ফলে ৯৭ পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেয়া হলেও তার অধিকাংশ পণ্য বাংলাদেশ থেকে রফতানি হয় না। অথচ গার্মেন্টস, টেক্সটাইল ও নিটওয়্যার এই তিনটি পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাওয়া গেলে দেশের রফতানি আয় আরও বাড়ানো যেত। পোশাক রফতানিতেই জিএসপি প্রয়োজন ॥ পোশাক রফতানিতে জিএসপি সুবিধা না থাকায় বাংলাদেশ কখনও লাভবান হতে পারেনি। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের প্রধান রফতানি পণ্য হচ্ছে তৈরি পোশাক। ফলে জিএসপি বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের সুবিধা বয়ে আনছে না। বাংলাদেশের বাজারে ২ শতাংশ শুল্ক দিয়ে আমেরিকান পণ্য প্রবেশ করছে। অথচ আমেরিকার বাজারে পণ্য প্রবেশের ক্ষেত্রে গড়ে সাড়ে ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ শুল্ক গুনতে হচ্ছে। এ শুল্ক হ্রাস করা হলে রফতানি আয় কয়েকগুণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া ডব্লিউটিও, ইউএস কংগ্রেস ও ইউএম সরকারের মাধ্যমেও আমেরিকাতে বাণিজ্য বাড়ানো সম্ভব। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এলডিসি দেশ হিসেবে শুল্ক সুবিধা পাওয়া বাংলাদেশের অধিকার। এ সুবিধা প্রদান করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়বে। বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা স্টাডি করে দেখছি পোশাক রফতানিতে শুল্ক সুবিধা পাওয়া গেলে রফতানি আয় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে।
×