ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রস্তাব দেয়া হবে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি পোশাকের দাম বাড়ানোর

টিকফা বৈঠকে শীর্ষ পাঁচ খাতে মার্কিন বিনিয়োগ চাইবে ঢাকা

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৮ নভেম্বর ২০১৬

টিকফা বৈঠকে শীর্ষ পাঁচ খাতে মার্কিন বিনিয়োগ চাইবে ঢাকা

এম শাহজাহান ॥ টিকফা বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এবার অবকাঠামো উন্নয়নে শীর্ষ পাঁচ খাতের জন্য বড় অঙ্কের বিনিয়োগ চাইবে বাংলাদেশ। এগুলো হচ্ছে- বস্ত্র ও পোশাক, টেলিযোগাযোগ, ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, গ্যাস জ্বালানি এবং বিদ্যুত খাত। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে রফতানিকৃত তৈরি পোশাকের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হবে। পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, ‘ফেয়ার প্রাইস’ বা ন্যায্য দাম থেকে তারা বঞ্চিত। সঠিক দাম পাওয়া গেলে বস্ত্র খাতের সক্ষমতা আরও বাড়বে। আগামী ১৩ ডিসেম্বর টিকফা ফোরামের তৃতীয় বৈঠক রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ওই বৈঠকে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তির (টিকফা) তৃতীয় বৈঠকের তারিখ চূড়ান্ত করেছে মার্কিন বাণিজ্য বিষয়ক দফতর ইউএসটিআর। সংস্থাটির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্সিয়াল কাউন্সেলরকে ইতোমধ্যে চিঠি দিয়ে টিকফা বৈঠকে অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। ইউনাইটেড স্টেট ট্রেড রিপ্রেজেনটিটিভ (ইউএসটিআর) এর প্রধান কর্মকর্তা মি. মাইকেল জে ডিলানীর নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসবেন। শুধু তাই নয়, এবারের বৈঠকে আমেরিকার কয়েকটি বড় শিল্প গ্রুপের বিনিয়োগকারীরাও যোগ দিবেন বলে আভাস পাওয়া গেছে। এ জন্য ১৩ ডিসেম্বর টিকফা বৈঠকের পরের দু’দিনও সরকারী সরকারী-বেসরকারী প্রতিনিধিদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় অংশ নেবেন মার্কিন প্রতিনিধিরা। জানা গেছে, বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৪৫ কোটি মার্কিন ডলার। বিনিয়োগকৃত এই ৪৫ কোটি ডলারের মধ্যে ৩৯ কোটি ডলার এসেছে গ্যাস, পেট্রোলিয়াম ও বিদ্যুত খাত উন্নয়নে। শুধু তাই নয়, ১৯৯৬-৯৭ থেকে ২০১৫-১৬ সালে এই বিশ বছরের মধ্যে গত বছর আমেরিকার সর্বোচ্চ বিনিয়োগ এসেছে এদেশে। সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লম বার্নিকাট এক সেমিনারে জানিয়েছেন, এদেশের জ্বালানি ফার্মাসিউটিক্যালস, তথ্যপ্রযুক্তি এবং অবকাঠামো উন্নয়নে আমেরিকার বিনিয়োগ বাড়ানো হবে। এদিকে, দেশে শ্রমিক অধিকার রক্ষায় সরকারী নানামুখী উদ্যোগ ও জিএসপি এ্যাকশন প্ল্যানের বিষয়ে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের অগ্রগতিগুলো ইউএসটিআরে ইতোমধ্যে তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে হংকং মিনিস্ট্রিয়াল ডিক্লারেশন ও বালি ডব্লিউটিও মিনিস্ট্রিয়াল প্যাকেজের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত পণ্যের প্রবেশাধিকার নিশ্চিতে ডিএফকিউএফ অনুমোদনে উদ্যোগী হওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রণীত ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপের (টিপিপি) ব্যাপারে বাংলাদেশের উদ্বেগের কথা জানানো হয়। বাংলাদেশ সরকার মনে করে, টিপিপির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের রফতানি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, এবারের টিকফা ফোরামের বৈঠক বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বৈঠকের তারিখটি যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসটিআর ঠিক করেছে। তাদের আগ্রহে আমরাও টিকফা বৈঠকের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোক্তারাও বাংলাদেশে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন। আশা করছি, টিকফার এবারের বৈঠকে বিনিয়োগের বিষয়টি দু’দেশই গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। জানা গেছে, সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ চায় বাংলাদেশ। বিশেষ করে সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণের মতো অবকাঠামো খাত, মনোরেল, বিদ্যুত কেন্দ্রসহ অন্যান্য খাতে এ দেশে মার্কিন বিনিয়োগে উভয় দেশের মুনাফার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের ৮০ শতাংশই জ্বালানি এবং বিদ্যুত খাতে। এছাড়া ব্যাংক-বীমাসহ আর্থিক খাতেও কিছু বিনিয়োগ রয়েছে তাদের। এরকম অনেক খাত রয়েছে যেখানে অধিক মুনাফা এবং দু’দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে পোশাক রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সহসভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাসির জনকণ্ঠকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বড় অঙ্কের বাণিজ্য রয়েছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক রফতানিতে এ বাজারের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। তিনি বলেন, পোশাকের ফেয়ার প্রাইস নিশ্চিত হচ্ছে না। পোশাকের সঠিক দাম নিশ্চিত করতে টিকফা ফোরামের বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেনদরবার চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সরকারের হাল ছাড়া চলবে না। জানা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র মোট বিনিয়োগ করে ৩৩১ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন ডলার। ২০১৪ সালের সবশেষ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সরাসরি বিনিয়োগে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। তবে গোটা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের যে বিনিয়োগ তার তুলনায় বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ অনেক কম। পোশাক রফতানিতে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরগুলোতে বাংলাদেশ ৮ থেকে ২২ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিচ্ছে। গত বছর বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৫ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে, যার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কাছ থেকে ৮৩২ মিলিয়ন ডলারের শুল্ক পেয়েছে। এদিকে, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রফতানির বাধাদূরীকরণ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে টিকফা চুক্তিটি গত ২০১৩ সালের ২৫ নবেম্বর করা হয়েছিল। চুক্তি সইয়ের পর একটি ফোরাম গঠন করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিবছর অন্তত একবার কিংবা প্রয়োজনে যে কোন সময়ে টিকফার বৈঠক আহ্বান করতে পারবে যে কোন দেশ। টিকফা চুক্তি কার্যকর করতে হলে দেশে মার্কিন বিনিয়োগ বাড়াতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে জ্বালানি ও বিদ্যুত খাত ছাড়াও আরও বেশকিছু খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে সহজ কর অবকাশ সুবিধা, কম শুল্কে যন্ত্রপাতি আমদানি, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য শতভাগ সমান সুবিধা, বাধাহীন এক্সিট পলিসি, মুনাফা নিজ দেশে নেয়াসহ নানা সুবিধা দেয়া হচ্ছে।
×