ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিরোধই জবাব

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ৭ নভেম্বর ২০১৬

প্রতিরোধই জবাব

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে পাঁচ দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে আতঙ্কগ্রস্ত করে তোলার বিষয়টি নিয়ে দেশব্যাপী প্রতিবাদ হচ্ছে। এবার পেট্রোলের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে পাঁচটি বাড়ি। এর আগে গত ৩০ অক্টোবর নাসিরনগর উপজেলায় অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৫টি মন্দির ও শতাধিক বাড়িঘরে ভাংচুর এবং লুটপাট চালানো হয়। এর রেশ ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী উপজেলা হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুরেও। সেখানেও দুটি মন্দিরে হামলা ও ভাংচুর করা হয়েছে। স্মরণ করা যেতে পারে এ বছরের গোড়ার দিকে এক মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গনে হামলা চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে রীতিমতো ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছিল। এ ছাড়া এলাকাটিতে ছোটখাটো কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রায়ই ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি ও তাণ্ডব চালানোর ঘটনা ঘটছে। কেন সেখানে একের পর এক এ ধরনের ঘটনা ঘটছে, তা জানা প্রয়োজন এবং এসব প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া জরুরী হয়ে পড়েছে। এক সপ্তাহের ভেতর দুষ্কৃতকারীরা দু’দফা আক্রমণ চালানোর সাহস কিভাবে পেল? সঙ্গত কারণেই স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতার বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। কেন সেখানে আইনানুগ প্রতিরোধ গড়ে তোলা যাচ্ছে নাÑ এ প্রশ্নের জবাব কে দেবে? সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সুনাম রয়েছে। সেই সুনামকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে কোন্ মহল? তাদের পরিচয় যাই হোক না কেন অবশ্যই তাদের অবিলম্বে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে। সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধিকে যারা পুঁজি করে কোন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোকদের ওপর বর্বর আক্রমণ চালায় তারা কোনভাবেই দেশের মঙ্গলাকাক্সক্ষী হতে পারে না। অবশ্যই তারা দেশের শত্রু। এই সভ্যতাবিরোধী ঘটনার ফলে দেশের শান্তিকামী, ধর্মপ্রাণ প্রতিটি মানুষেরই ক্ষুব্ধ হওয়া স্বাভাবিক। কী লজ্জার কথা! সব ধর্মের মানুষ সহাবস্থান করবে, ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে কেউ কারও ওপর হামলে পড়বে নাÑ এটাই তো কল্যাণকামী চিন্তা। সরকারকে বিব্রত করা ও বেকায়দায় ফেলার জন্য কোন স্বার্থান্বেষী মহল পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালাচ্ছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখা দরকার। সর্ষের ভেতর ভূত থাকলে সেই ভূত তাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে এখনই। শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া নয়, সারাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের মনে অভয় জাগিয়ে তুলতে হবে। তাদের আতঙ্ক দূর করার জন্য এ ধরনের ঘটনাপ্রবণ এলাকায় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ বলয় গড়ে তোলা দরকার। প্রতিরোধই যে জবাব দেরিতে হলেও তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কামারগাঁও ঋষিপাড়া গ্রামের মানুষ। কোনভাবেই বহির্বিশ্বে ভুলবার্তা দেয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে ছোট একটি স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব নয়। বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। হতদরিদ্ররাও এখন দু’বেলা খেতে পারছে। সর্ববিচারেই দেশের উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। তাই কোন ধরনের দুরভিসন্ধিমূলক অপকর্ম, বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভেতর নিরাপত্তাহীনতার বোধ সৃষ্টি করে ফায়দা লোটার পথ বন্ধ করা চাই। আর বিলম্ব নয়, শক্ত হাতে ষড়যন্ত্রকারীদের লাগাম টেনে ধরতে হবে। আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও হবিগঞ্জে মন্দির এবং হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলার নিন্দা আগেও জানিয়েছি। এ দফায় বাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় আমরা ক্ষোভ এবং প্রতিবাদজ্ঞাপনকারীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছি। যারা হামলার শিকার হয়েছেন, তাঁদের প্রতি রইল আমাদের সমবেদনা। হামলাকারীদের চিহ্নিত ও গ্রেফতার করা গেলে যারা হামলার শিকার হয়েছেন, তাদের মধ্যে যে আস্থা ফিরে আসবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
×