ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

রাহুগ্রস্ত ফুটবল

প্রকাশিত: ০৪:২০, ৪ নভেম্বর ২০১৬

রাহুগ্রস্ত ফুটবল

বাংলাদেশের ফুটবলের বুঝি অন্তিম দশা চলছে। ফুটবলের কফিনে সর্বশেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই খেলাটির দেখভালকারী সংস্থা ফিফার অঙ্গসংগঠন এএফসি বা এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন। ২ নবেম্বর মালয়েশিয়ায় শুরু হওয়া সলিডারিটি কাপ টুর্নামেন্টে না খেলার জন্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে (বাফুফে) এএফসি জরিমানা করেছে ২০ হাজার ডলার। নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ব্রুনাই দারুস সালামসহ আরও কয়েকটি দেশ অংশগ্রহণ করছে এ খেলায়। দুঃখজনক হলো, সলিডারিটি কাপে খেলার জন্য বাংলাদেশ নাম নিবন্ধন করেছিল। এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বে যেতে না পারা দলগুলোর জন্যই মূলত এই টুর্নামেন্টের আয়োজন করে থাকে এএফসি। বাংলাদেশ এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে যেতে ব্যর্থ হয়েছে। ভুটানের কাছে বিধ্বস্ত ৩-১ গোলে হারের নিদারুণ লজ্জা নিয়ে দেশে ফিরেছে জাতীয় দল। এর পরই, ‘এই জাতীয় দলটি কিছু পারবে না’ মর্মে সিদ্ধান্তে পৌঁছে বাফুফে। তবে দেশীয় ফুটবল সংগঠনটির এহেন উপলব্ধি হয়েছে অনেক পরে, ভুটানের কাছে হারের পর। অথচ তার আগেই মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত সলিডারিটি কাপে খেলার জন্য নাম নিবন্ধন করেছিল তারা। অতঃপর এই অর্বাচীন ও ক্ষমার অযোগ্য ভুলের জন্য বাফুফেকে তার কোষাগার থেকে দিতে হবে বৈদেশিক মুদ্রায় বিশ হাজার ডলার গচ্চা, যা প্রকারান্তরে দেশ ও জনগণের টাকা। দেশের ফুটবলের এ রকম শোচনীয় অবস্থার জন্য কে বা কারা দায়ী তা তদন্ত অনুসন্ধান করে দেখার সময় এসেছে। তবে সঠিক দায়দায়িত্ব ও জবাবদিহি যে বাফুফেকেই করতে হবে, সে বিষয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। সার্বিক অর্থে কতিপয় কর্মকর্তার দিকে উঠেছে অভিযোগের আঙ্গুল। মুষ্টিমেয় যে ক’জন ফুটবল অন্তপ্রাণ অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছেন এবং এর বাইরে যারা সত্যি সত্যিই ফুটবল ভাল বাসেন, তারা প্রায় সবাই বাফুফের কর্মকা-ে নাখোশ ও অসন্তুষ্ট। তাদের প্রধান অভিযোগ, বাফুফে কোন ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করে না, পৃষ্ঠপোষকতা তো দূরের কথা। বরং তারা নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়েই সর্বাধিক ব্যস্ত থাকে। আরও রয়েছে ঘুষ, দুর্নীতি, দলাদলি, রাজনীতি, হিংসা-বিদ্বেষ ইত্যাদি। আর এর ফলেই ঘনিয়ে এসেছে ফুটবলের অন্তিম তথা মরণদশা। বিশ্ব ফুটবল সংস্থা ফিফার র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ এখন একেবারে নিচের দিকে। ২০৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে ১৮৮ নম্বরে। দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানই কেবল বাংলাদেশের পেছনে। অথচ এমন দুর্দশা ছিল না আমাদের। ২০০৮ সালে বাফুফের বর্তমান সভাপতি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৭৮। সে অবস্থায় এই অবনমনের কারণ কী? জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক, অভিজ্ঞ ফুটবলার ও ফুটবল অন্তপ্রাণ দর্শক- প্রায় সবাই বাফুফের বর্তমান কমিটির ব্যাপারে বীতশ্রদ্ধ। ফুটবলের এহেন সমস্যা সঙ্কট ও মরণদশা থেকে রাতারাতি উত্তরণ সম্ভব নয়। তবে জাতীয় পর্যায়ে ক্ষমতাসম্পন্ন ও শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করা অত্যাবশ্যক। এর পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী কাপ, শেরে বাংলা কাপ ও অন্যান্য টুর্নামেন্ট চালু করতে হবে অবিলম্বে। তৃণমূল পর্যায় থেকে খেলোয়াড় সৃষ্টির লক্ষ্যে চালু করতে হবে আন্তঃস্কুল জেলা-উপজেলা ফুটবল টুর্নামেন্ট। এর পাশাপাশি নিশ্চিত করতে হবে ভাল মানের খেলার মাঠ, ফুটবলসহ আনুষঙ্গিক খেলার উপকরণ। তাহলেই বাঁচবে ফুটবল। ফিফা প্রতিবছর ফুটবলের উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশকে পাঁচ লাখ ডলার অনুদান দেয়। জাতীয় বরাদ্দের পাশাপাশি এরও সদ্ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়।
×