ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে ‘কায়ান্ট’ ॥ এগোচ্ছে অন্ধ্রের দিকে

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৭ অক্টোবর ২০১৬

ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে ‘কায়ান্ট’ ॥ এগোচ্ছে অন্ধ্রের দিকে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘কায়ান্ট’ বাংলাদেশের সীমানা থেকে ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে। বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম থেকে ৬৪৫ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করলেও সন্ধ্যার মধ্যেই তা ৮শ’ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে সরে গেছে। এভাবে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ঘূর্ণিঝড়টি সামনে না এগিয়ে কক্সবাজার বন্দর থেকে ২২৫ কিমি, মংলা থেকে ৭৫ কিমি এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৫ কিমি দূরে সরে গেছে। বর্তমান গতিপথ ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ। বাংলাদেশে আঘাত হানার তেমন আশঙ্কা নেই। তবে বৃষ্টিপাতের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এর বিস্তৃতি খুব ব্যাপক হবে না। ঘূর্ণিঝড়টির এর কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। দেশের সকল সমুদ্রবন্দরকে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে হয়েছে। আবহাওয়াবিদ সানাউল হক বলেন, মঙ্গলবার সকালে নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। আগামীকাল ২৮ অক্টোবর তা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এখন পর্যন্ত ঝড়ের সম্ভাব্য গতিপথ ভারতের দিকে। বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদরা সর্বক্ষণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিশেষ বুলেটিনে নিয়মিত পরিস্থিতি সম্পর্কে সবাইকে জানানো হবে। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ উপকূলের দিকে আসার আশঙ্কা কম। পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘনীভূত হয়ে দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতরের সর্বশেষ বিশেষ বুলেটিনে (১৭নং) বুধবার সন্ধ্যায় জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮শ’ কিমি দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৫০ কিমি দক্ষিণ পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭১৫ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৯৫ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিমির মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিমি, যা দমকা অথবা ঝড়োহাওয়ার আকারে ৮৮ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের আট দেশের আবহাওয়া দফতর ও বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেলের তালিকা অনুযায়ী এ ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয়া হয়েছে কায়ান্ট। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সানাউল হক খান জানান, কায়ান্ট নামটি প্রস্তাব করেছিল মিয়ানমার। স্থানীয় ভাষায় যার অর্থ কুমির। দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেতের মানে হলো- দূরে গভীর সাগরে একটি ঝড় সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিমি। বন্দরে এ ঝড়ের প্রভাব পড়ার আশঙ্কা আপাতত না থাকলে সাগরে থাকা জাহাজ ঝড়ের কবলে পড়তে পারে। সোমবার পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি শুরুতে পানির উষ্ণতা থেকে শক্তি সঞ্চয় করে মিয়ানমারের দিকে এগোলেও মঙ্গলবার তা উল্টো ঘুরে উত্তর-পশ্চিম দিকে ভারতের বিশাখাপত্তম উপকূলের দিকে এগোতে শুরু করে। স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘কায়ান্ট’ ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানায়, বঙ্গোপসাগরে গত ২১ অক্টোবর নিম্নচাপটি সৃষ্টি হয়। মঙ্গলবার তা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। এখনও এর অবস্থান অনেক দূরে। নড়াচড়া করছে ধীরগতিতে। বাংলাদেশের স্থলের দিকে আসার সম্ভাবনা নেই এমনটাই অভিমত আবহাওয়াবিদদের। এর গতিপথ ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের দিকে বলে জানিয়ে তারা জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এর বিস্তৃতি খুব ব্যাপক হবে না। ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের ভূখ- অতিক্রম করতে পারে। এর প্রভাবে বাংলাদেশে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম আবহাওয়া দফতর থেকে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় কায়ান্ট ক্রমেই বাংলাদেশের সীমানা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। যেদিকে সরছে তাতে ধারণা করা যাচ্ছে যে, ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের উপকূল অতিক্রম করতে পারে। তবে এর আগেই দুর্বল হয়ে নিষ্ক্রিয়ও হয়ে যেতে পারে। এই গতিতে সরতে থাকলে আজ কালের মধ্যে সতর্কতা সংকেত প্রত্যাহার করতে বলা হবে। এ ধরনের অনেক নৌযান উপকূলের দিকে এসে নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান নিয়েছে। স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার থেকে জানান, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘কায়ান্ট’ কক্সবাজার উপকূলে বিপর্যয়ের আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। সূত্রটি আরও জানায়, কক্সবাজার উপকূলে বৃষ্টি ছাড়া বড় কোন বিপর্যয়ের আশঙ্কা নেই। তবে বৃহস্পতি ও শুক্রবার বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘনীভূত হয়ে পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিম দিকে এগোতে পারে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া থেকে জানান, ঘূর্ণিঝড় কায়ান্টের প্রভাবে কলাপাড়ার পুরো উপকূলজুড়ে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার দিনভর থেমে থেমে কয়েক দফা মাঝিারি ধরনের বৃষ্টিপাত হয়েছে। আকাশ মেঘলা রয়েছে। সাগর মাঝারি ধরনের উত্তাল রয়েছে। কায়ান্টের খবরে কৃষককুলে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আর কয়েকদিন পরে এ বছরের আমন ফসল ঘরে তোলার স্বপ্নে বিভোর রয়েছে কৃষক ও জমির মালিকরা। এই মুহূর্তে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস হানা দিলে সর্বনাশ হয়ে যাবে ফসলের। ঘূর্ণিঝড়টি এখন পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬২০ কিমি দূরে গভীর বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে বলে আবহাওয়া বিভাগের বুলেটিনে উল্লেখ করা হয়েছে।
×