ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ আব্দুল্লাহ

সিনিয়র সিটিজেনের মর্যাদা

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ২৭ অক্টোবর ২০১৬

সিনিয়র সিটিজেনের মর্যাদা

কথায় বলে- ওল্ড ইজ গোল্ড। সেই গোল্ড কথাটির যথার্থ মূল্যায়ন কি আজকের সমাজে হচ্ছে? আমাদের মতো দেশে দেখা যাচ্ছে একজন বৃদ্ধ কিংবা বৃদ্ধা সমাজের বোঝা। এটা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এ কথা আমি বলব না। তবে অধিকাংশ বৃদ্ধ-বৃদ্ধা আজ সংসারে অপাঙ্ক্তেয়, তাদের বোঝা মনে করা হচ্ছে। এর কারণ কি? কারণগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সংসারকে অর্থবিত্ত দিতে পারছে না বলে আজ তারা সমাজ সংসারের বোঝা। তাহলে দেখা যাচ্ছে তাদের সম্মান তো নেই-ই বরং তারা সংসারে বোঝা হয়ে আছে। অন্যের গলগ্রহ হয়ে বেঁচে থাকার বিড়ম্বনা তিনিই বোঝেন যিনি বৃদ্ধ বয়সে এই অবস্থার শিকার হয়ে থাকেন। অনেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা তাই তো বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নেন। জগত সংসারে প্রবীণদের সম্মান ক্ষুণ্ণ হয়, অথচ এই পৃথিবীতে প্রবীণদেরও সম্মান আছে- আছে আত্মসম্মানবোধ। অথচ এই প্রবীণদের হতে হয় অন্যের ওপর নির্ভরশীল, কাটাতে হয় মানবেতর জীবন। এমনটি হওয়ার কথা নয়। হওয়ার কথাও ছিল না। আজ আমাদের সংসারে তাই হচ্ছে। একজন প্রবীণ ‘সিনিয়র সিটিজেন’-এর মর্যাদা প্রাপ্য, আসলে কি তিনি তা পেয়ে থাকেন? আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। এই শিশুটিও বার্ধক্যে উপনীত হয়। মাঝখানে তার ঘর-সংসারে চাঁদেরহাট বসে। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সে নিজের সংসারটিকে গড়ে তোলে চাঁদেরহাট হিসেবে। তার জীবনের অর্জন তাকে মহান করে তোলে। সকাল-দুপুর পেরিয়ে সূর্য যেমন অস্তমিত হয়, মানুষের জীবন তেমনি শৈশব, কৈশোর, যৌবন পেরিয়ে বার্ধক্যে এসে উপনীত হয়। সে কারণেই তাকে বার্ধক্যের জন্য পাথেয় সংগ্রহ করে রাখতে হয়। কিন্তু সবাই কি পাথেয় সংগ্রহের কাজে সমভাবে মনোযোগী? বয়স এমন একটি জিনিস কেউ তার হাত থেকে রেহাই পায় না। উন্নত, অনুন্নত, উন্নয়নশীল সব দেশের মানুষকে বয়সের শিকার হতে হয়। যৌবনে স্বামী-সন্তান, স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে মানুষ সোনার সংসার গড়ে তোলে, সুখের নিবাসে কাল কাটায়, কিন্তু সময়ের বিবর্তনে বৃদ্ধ বয়সে সেই সুখ আর অক্ষুণ্ণ থাকে না। অনেকে আবার নিজ বাসস্থানে থেকে শেষ নিশ্বাস ফেলার সুযোগ পায় না! ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! যিনি নিজ হাতে গৃহনির্মাণ করলেন সেই গৃহে বসবাস করার ও শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার ভাগ্য তার হলো না। জন্মের পর শৈশব, কৈশোর, যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব, বার্ধক্য এই সকলকে মেনে নিয়ে জীবনযাপন করতে হবে। বার্ধক্যের জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনিকে সুশিক্ষায় সুশিক্ষিত করতে হবে যাতে তারা দায়িত্বশীল হয়। ¯স্নেহ-মমতা, প্রেম-প্রীতির বীজ বপন করতে হবে যাতে ভবিষ্যত বংশধরগণ দায়িত্বশীল হয়, সমাজ সচেতন হয়। যে মানুষের কল্যাণে নিজ জীবন উৎসর্গ করে সে শেষ জীবনে সুখ-শান্তির দেখা পায়। স্বার্থপর জীবনের পরিণতি ভাল নয়, তাই নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে জীবন গড়ে তুলতে হবে। তবেই সকলের মায়া-মমতা, স্নেহ-ভালবাসা পাওয়া যাবে, শেষ জীবন সুখের হবে। প্রবীণদের সম্মান করতে হবে। প্রবীণ ‘সিনিয়র-সিটিজেন’ এ ব্যাপারে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তাদের জন্য খাওয়া, চিকিৎসা, বাসস্থান ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রবীণদের সম্মান না করলে সমাজ অধঃপতনে যাবে। বৃদ্ধ বয়সে দেখাশোনা করার জন্য যাদের কেউ নেই সরকার তাদের প্রতিপালনের ব্যবস্থা নেবে এটাই কামনা। লেক সার্কাস, ঢাকা থেকে
×