ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চিকিৎসা কেনার সুযোগ সরকারি হাসপাতালেও

প্রকাশিত: ১৯:৫০, ২৬ অক্টোবর ২০১৬

চিকিৎসা কেনার সুযোগ সরকারি হাসপাতালেও

অনলাইন ডেস্ক ॥ অনেক আগেই হয়তো ভাবা যেতে পারত। এখন সেই পথে হাঁটতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। রাজ্যের সরকারি চিকিৎসা পরিষেবায় জুড়তে চলেছে ‘ফ্যালো কড়ি মাখো তেল’ ব্যবস্থাও, যেখানে চাইলে টাকা দিয়ে বাড়তি স্বাচ্ছন্দ্য কেনা যাবে। অর্থাৎ, কার্যত সরকারি নার্সিংহোম! কিংবা সরকারি মালিকানার ‘কর্পোরেট’ হাসপাতাল! তেমনই ঝাঁ চকচকে করে ইউনিটগুলি তৈরির নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। সেখানে আধুনিক চিকিৎসার যাবতীয় বন্দোবস্ত থাকবে। স্বাস্থ্যকর্তাদের আশা, এই পরিষেবা কিনতে টাকা খরচ করার মতো লোকের অভাব হবে না। এতে রাজ্যের যেমন আয় হবে, তেমন সরকারি চিকিৎসার চলতি বন্দোবস্তে রোগীর চাপ কিছুটা কমার সম্ভাবনা। ‘‘কারণ এখন সরকারি হাসপাতালে যাঁরা ভিড় করেন, তাঁদের একটা অংশ অন্তত নতুন ব্যবস্থায় আগ্রহী হতে পারেন।’’— মন্তব্য এক স্বাস্থ্যকর্তার। কী পাওয়া যাবে এখানে? স্বাস্থ্য-সূত্রের খবর, বেসরকারি হাসপাতালের মতো ঝকঝকে পরিবেশ থাকবে। খরচ পড়বে তুলনায় অনেক কম। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বেশি অপেক্ষা করতে হবে না। অভিজ্ঞ সরকারি ডাক্তারদের অধীনেই ভর্তি থাকবেন রোগী। তবে এটা করতে গিয়ে গরিবদের ‘ফ্রি’ চিকিৎসায় যাতে ফাঁক না পড়ে, সে দিকে কড়া নজর রাখতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্থির হয়েছে, সরকারের দু’টি ব্যবস্থাই সমান্তরাল ভাবে চলবে। নতুন প্রকল্পটি পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করতে ভাবা হয়েছে এসএসকেএমের উডবার্ন ওয়ার্ড সংলগ্ন অংশের কথা। উডবার্নের পাশে গড়ে উঠবে পঞ্চাশ বেডের নতুন ‘লাক্সারি’ ইউনিট। পরের ধাপে আসতে পারে বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজিতে (বিআইএন)। স্নায়ু চিকিৎসার উৎকর্ষকেন্দ্রটির পাশে নার্সিংহোমের ধাঁচে ওয়ার্ড হবে। ক্রমে আরও ক’টি মেডিক্যাল কলেজকে তালিকায় আনার পরিকল্পনা। ‘‘দরকারে হাসপাতালের জমি ছাড়াও অন্যত্র তা চালু হতে পারে। সবটাই নির্ভর করছে প্রকল্পের সাফল্যের উপরে।’’— বলেন এক স্বাস্থ্যকর্তা। এবং তাঁরা এগোচ্ছেন ভেলোরের ‘রবিনহুড মডেল’কে সামনে রেখে। মানে যাঁদের সামর্থ্য আছে, তাঁদের থেকে নিয়ে গরিবের চিকিৎসা। ফারাক একটাই। এখানে সামর্থ্য থাকলেও নিখরচার চিকিৎসা পেতে বাধা নেই। তবে কেউ অতিরিক্ত স্বাচ্ছন্দ্য কিনতে চাইলে ‘সরকারি নার্সিংহোমের’ দরজা খোলা পাবেন। স্বাস্থ্যভবনের খবর: সম্প্রতি স্বাস্থ্য দফতরের মাথাদের নিজের এ হেন পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য— সরকারি হাসপাতালে সেরা ডাক্তারেরা মজুত। অথচ অনেক রোগী সেখানকার পরিবেশের সঙ্গে মানাতে পারেন না। তাদের জন্য সরকারি পরিকাঠামোতেই বেসরকারি হাসপাতালের মতো পরিবেশ তৈরি করা যেতে পারে। টাকা দিয়ে যা কেনা যাবে। ‘পিপিপি’তে নয়, পুরোদস্তুর সরকারি ভাবেই প্রকল্পটি রূপায়ণ করা হবে। তার ভাল-মন্দের দায় যেমন সরকারের, তেমন মুনাফাও পুরোটা ঢুকবে সরকারের ঘরে। বছর দেড়েক আগে মেডিক্যাল কলেজ পর্যন্ত সর্বত্র যাবতীয় চিকিৎসা ‘ফ্রি’ ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি হাসপাতালে কেমো, রেডিয়েশন, অস্ত্রোপচার-সহ ক্যানসার-চিকিৎসার সমস্ত খরচ আগেই মকুব হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, ওপেন হার্ট সার্জারি, বাইপাস, ভাল্ভ প্রতিস্থাপন, পেসমেকার ও স্টেন্ট বসানোর মতো হার্টের চিকিৎসা নিখরচায় হবে। লিউকোমিয়া, অ্যাপলাস্টিক অ্যানিমিয়া, থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলিয়ার মতো রক্ত-রোগের চিকিৎসার ব্যয়ভারও সম্পূর্ণ রাজ্যের। সিদ্ধান্তকে কিছু মহল থেকে স্বাগত জানানো হলেও প্রশ্ন উঠেছিল। বিশেষত স্বাস্থ্যকর্তারা টের পেয়ে যান, কলসি উপুড় করতে করতে খালি হওয়ার জোগাড়। বিকল্প আয় ছাড়া বেশি দিন ‘ফ্রি’ চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। উপরন্তু অভিযোগ, ক্ষমতা থাকতেও অনেকে নিখরচায় চিকিৎসা করাচ্ছেন। ফলে যাঁদের দরকার, তাঁদের সুযোগ কমছে। এক শীর্ষ কর্তার আক্ষেপ, ‘‘শুধু প্লাস্টিক সার্জারিতেই দেখেছি, অনেক হতদরিদ্র বঞ্চিত হচ্ছেন। ফ্রি’র ফায়দা লুটছেন প্রভাবশালীরা।’’ তাই একটা বিভাজনরেখার জন্য স্বাস্থ্যকর্তাদের হা-পিত্যেশ ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবে ওঁরা হাতে চাঁদ পেয়েছেন। এক আধিকারিকের প্রতিক্রিয়া, ‘‘দরকার ছিল ম্যাজিশিয়ানের, যিনি জাদুকাঠি বুলিয়ে নিমেষে কোটি কোটি টাকা হাজির করতে পারেন। বাস্তবে যা অসম্ভব। তবে এখন যে অন্তত বাস্তবের মাটিতে পা রাখার চেষ্টা হচ্ছে, সেটাই অনেক।’’ সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×