ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

গাইবান্ধার বাড়ি থেকে ৬ লাখ টাকা ও পাঁচ ভরি স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার

অবশেষে ধরা পড়ল সেই জিনের বাদশা আশরাফ

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৪ অক্টোবর ২০১৬

অবশেষে ধরা পড়ল সেই জিনের বাদশা আশরাফ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গভীর রাতে ফোন করে কোন পরিচয় না দিয়েই- সুমধুর সুরে কোরান তেলাওয়াত শুরু করেন। তাতে মোহিত হয়ে গৃহবধূ শিরিন আক্তার বিগলিত কণ্ঠে জানতে চান নাম-পরিচয়। ওপাশের জবাব- আমিই সেই জিনের বাদশাহ আশরাফ। যিনি আপনার মতো বিপদগ্রস্ত নারীকে উদ্ধার করতে পারেন। শিরিন আরও আশ্বস্ত হন- যখন তার সন্তানের অসুখের কথাও আগাম বলে দেন জিনের বাদশাহ। পরদিন থেকে এভাবেই প্রলুব্ধ করে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। শিরিন যখন বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার- তখন স্বামীর কাছে খুলে বলেন সব। শিরিন বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করেন। তারপর সিআইডির জালে ধরা খান জিনের বাদশাহ আশরাফ। সঙ্গে আরও তিন সহযোগী। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার ওই মামলার আসামি হিসেবে গত শুক্রবার গাইবান্ধা থেকে আটক করা হয় জিনের বাদশাহ আশরাফুল ম-ল (৩৫), মোঃ মাহফুজ ডেবু (১৮), মোঃ আবু জাহিদ সিদ্দিকী ওরফে জাহিদ (৩৩) ও মোঃ তাহাজ উদ্দিন (২১)। তারা এখন একদিনের রিমান্ডে সিআইডিতে। এ বিষয়ে রবিবার বিকেলে সিআইডিতে ডিআইজি রওশান আরা বেগম ও এসএস আব্দুল কাহহার আখন্দ সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তারা জানান, এই জিনের বাদশা দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার নিরীহ সহজ সরল ও বিপদগ্রস্ত নারী পুরুষদের বিভিন্ন কৌশলে প্রতারণা করে আসছিল। যাত্রাবাড়ী থানার যে মামলায় আশরাফুল ম-লকে আটক করা হয়েছে- তার ভিকটিমও একজন মহিলা। শিরিন আক্তার নামের ওই গৃহবধূর এক সন্তান অসুস্থ। জিনের বাদশাহ তাকে সুস্থ করার অজুহাতে ধাপে ধাপে ২২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। তিনি যখন বুঝতে পারলেন প্রতারণার শিকার হয়েছেন- তখন আইনের আশ্রয় নেন। গত ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় আশরাফুলের নামে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার আসামি হিসেবে ২১ অক্টোবর গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ এলাকার গ্রামের বাড়ি থেকে তাদের ৪ জনকে আটক করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। এসএস আবদুল কাহহার আখন্দ বলেন, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের সময় জিনের বাদশাহ আশরাফুল ম-ল মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেয়ার কথা স্বীকার করেন। পরে তার দেয়া তথ্যমতে রবিবার গাইবান্ধার বাড়ি থেকে ৬ লাখ টাকা ও ৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়। এমন আর কত মানুষ প্রতারণার শিকার হয়েছে সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই জিনের বাদশাহ নাকি চাকরির মেয়াদ বাড়াতে পারেন জনকণ্ঠের পক্ষ থেকে এমনটি জানতে চাইলে আব্দুল কাহহার আখন্দ জবাব দেন- এটা এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। প্রতারণার স্টাইল সম্পর্কে সিআইডি জানায়, আশরাফুল মণ্ডল দালালের মাধ্যমে রাজধানীর ধনাঢ্য পরিবারের নানা সঙ্কটগ্রস্ত নারীদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করতেন। গভীর রাতে ফোন করে সুমধুর সুরে কোরান তেলাওয়াত করে সালাম দিয়ে নিজের পরিচয় দিতেন। তারপর যার যেই সমস্যা সেটা এমনভাবে গুছিয়ে বলতেন যাতে ভিকটিমের মনে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে এই জিন সবই অগ্রিম বলে দিতে পারেন। এ বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে কখনও নগদ টাকা কখনও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেয়। যাত্রাবাড়ীর শিরিনও একইভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
×