ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থাপনাই সরকারী স্বাস্থ্যসেবার অন্যতম বাধা

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২২ অক্টোবর ২০১৬

কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থাপনাই সরকারী স্বাস্থ্যসেবার অন্যতম বাধা

নিখিল মানখিন ॥ সরকারী স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো ব্যবহারের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ‘কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি’। এমন অভিযোগ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয়, সংগ্রহ, রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও সংস্কারের জন্য প্রচলিত সরকারী নীতিমালা সময়সাপেক্ষ ও জটিল হওয়ায় সেটিই স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে অন্তরায় হয়ে ওঠে। পর্যাপ্ত জনবল, আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতাসহ প্রয়োগধর্মী জাতীয় স্বাস্থ্য গবেষণা ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। এতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও কর্মসূচী, সেবা প্রদান ও গরিববান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন এবং গবেষণার মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন বিঘিœত হয়। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ব্যবস্থাপনা উন্নত করার উদ্দেশ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার এখনও যথেষ্ট নয়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য জনশক্তির দক্ষতার অভাব এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অপ্রতুলতা বেশ দৃশ্যমান। সরকারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ওষুধ সরবরাহের অপর্যাপ্ততা, জনবলের অভাব, যন্ত্রপাতি ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপনায় রক্ষণাবেক্ষণের দুর্বলতা ও প্রশাসনের জটিলতা এবং সুসংগঠিত রেফারেল পদ্ধতি না থাকায় স্বাস্থ্য অবকাঠামোর পূর্ণ সদ্ব্যবহার করা যাচ্ছে না। দেশে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার দিক দিয়ে সন্তোষজনক নয়। পূর্ণ স্বাস্থ্যসেবার অর্জনের জন্য সরকারী এবং বেসরকারী খাতে অর্থের সঙ্কুলান ও ব্যবস্থাপনা অপর্যাপ্ত। এতে দেশের মোট জনসংখ্যার বড় অংশ এখনও বিভিন্ন জটিল রোগের উন্নত চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে পারে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা এখনও অনেকটাই জেলা ও বিভাগকেন্দ্রিক। উপজেলা পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। জটিল জটিল অসংক্রামক রোগে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক গুণ বেড়েছে। চিকিৎসা ব্যয় ও ওষুধের দামও অনেক বেড়েছে। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তি ও ভোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শ্রেণীর জনগোষ্ঠীর মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। কিছু কিছু অসমতা এতটাই তীব্র ও প্রতিকূল যে, সমষ্টিগতভাবে তা দেশের অগ্রগতির অন্তরায়। কোন কোন ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যখাতে অর্জিত সাফল্য টিকিয়ে রাখাই কষ্টকর। আবার কিছু ক্ষেত্রে স্থবিরতার লক্ষণ দৃশ্যমান। সুস্বাস্থ্য এখনও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিশেষ করে বস্তিবাসীদের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। বেসরকারী হাসপাতালের ব্যয়বহুল চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে পারে না অধিকাংশ সাধারণ মানুষ। সরকারী স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবার সঙ্গে সম্পৃক্তদের দায়িত্ব পালনে অবহেলার বিষয়টি দীর্ঘ বছর ধরে বেশ আলোচিত হয়ে আসছে। বর্তমান সরকারও এ সমালোচনা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। বর্তমান সরকারও স্বাস্থ্য সেক্টরকে দুর্নীতি ও দলীয় লোকজনের অহেতুক হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত রাখতে পারেনি। নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির অনেক ঘটনায় অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে । স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, থানা ও জেলা পর্যায়ে কম খরচে জটিল রোগের চিকিৎসার সুব্যবস্থা নিশ্চিত করা হলে দরিদ্র মানুষ উপকৃত হতো। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে যাতায়াত ও থাকা-খাওয়ার জন্য ব্যয় করতে হতো না। মানসম্মত স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার বিষয়টি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সেবাদানকারীদের মনমানসিকতার ওপর নির্ভর করে। মানসম্মত সেবাদানের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা না থাকলে ভাল স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব নয়। স্বাস্থ্য সেক্টরের উন্নয়নে বর্তমান সরকার বহুমুখী কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে চলেছে। জনবল বৃদ্ধির পাশাপাশি রোগীদের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, স্বাস্থ্য খাতের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কয়েকটি বিষয় চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে, সেবা সরবরাহের ক্ষেত্রে দুর্বল ব্যবস্থাপনা, সম্পদের সীমাবদ্ধতা ও সেবার দুর্বল গুণগতমান। আর সেবা গ্রহীতার তথা চাহিদার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের অসামর্থ্য না থাকা, জ্ঞান ও স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী জীবনযাপন পদ্ধতি অনুসরণ না করা। সুস্বাস্থ্য এখনও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিশেষ করে বস্তিবাসীদের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার বিভাগের সক্ষমতা এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের ভূমিকা এখনো পর্যাপ্ত নয়। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট জনশক্তির দক্ষতা সংমিশ্রণের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভারসাম্যহীনতা স্বাস্থ্য সেবা কাঠামোর বিভিন্ন স্তরে মানসম্মত প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানে অন্তরায় হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বিকেন্দ্রীকরণ করা যেতে পারে। কারণ স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে শুধু মাত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নয়, আরও বেশ কিছু মন্ত্রণালয়ের সম্পৃক্ততা রয়েছে। তিনি বলেন, দ্রুততর সময়ের মধ্যে জনবল বাড়াতে হবে। আর বর্তমান সরকারের ইতোমধ্যে গৃহীত ও চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। স্বাস্থ্য সেক্টরের বাজেট বৃদ্ধি করা দরকার। আর তৃণমূল পর্যায়ে যারা কাজ করবেন, তাদের জন্য উৎসাহ ভাতার ব্যবস্থা করা উচিত মনে করেন বিএমএ মহাসচিব। স্বাস্থ্য অধিদফতর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে কিডনি, লিভার, ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার মাত্রা কয়েকগুণ বেড়েছে। অসংক্রামক রোগ মোকাবেলায় কোন জাতীয় দিক নির্দেশনা নেই। কেন্দ্রীয়ভাবে নেই কোন ব্যবস্থাপনা। প্রথমবারের মতো এ জাতীয় রোগ নিয়ে বিশেষ গবেষণা কার্যক্রম শুরু করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো নিজেদের মতো করে ব্যবসায়িক মনোভাব নিয়ে এ জাতীয় রোগের চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে। নতুন করে বিশেষ কার্যক্রম সাজাতে গিয়ে পদে পদে প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হচ্ছে। সংক্রামক রোগ ধীরে ধীরে কমছে, দ্রুত বাড়ছে অসংক্রামক রোগ। অসংক্রামক রোগের চিকিৎসাব্যয় দেশের অধিকাংশ মানুষের সামর্থ্যরে বাইরে চলে যাচ্ছে। আর অনেক অসংক্রামক রোগের শতভাগ চিকিৎসা ব্যবস্থা দেশে নেই। তাই অনেক অসংক্রামক রোগীকে চিকিৎসার অভাবে অকালে মৃত্যুবরণ করতে হচ্ছে। বর্তমানে দেশের শতকরা ৬১ ভাগ রোগই হচ্ছে অসংক্রামক রোগ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও স্বাস্থ্য সেক্টরে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশে মারাত্মক পানিজনিত সমস্যা বিদ্যমান। আর জলবায়ুর পরিবর্তন এ সমস্যাকে আরও ঘনীভূত করেছে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে রক্ষার জন্য দারিদ্র্যের সঙ্গে সম্পর্কিত রোগসমূহ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী। গ্রীনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমানোর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কমানো এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট প্রায় সকল পরিবেশগত ও সামাজিক বিপর্যয় চূড়ান্তভাবে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। জলবায়ু পরিবর্তন এ অঞ্চলের সকল দেশের ওপর প্রভাব ফেলবে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিদ্যমান অসমতার কারণে সৃষ্ট ব্যাপক প্রতিবন্ধকতা নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যথেষ্ট সক্ষম নয়। নগর পরিকল্পনা, পরিবহন ব্যবস্থা এবং খাদ্য উৎপাদন ও মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে আন্তঃসেক্টর পরিকল্পনার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমানো সম্ভব। ডক্টরস ফর হেলথ এ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সভাপতি অধ্যাপক রশিদী-ই মাহবুব জনকণ্ঠকে জানান, জলবায়ু পরিবর্তনে স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই বাংলাদেশের। বিদ্যমান জনস্বাস্থ্যসেবা ও জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনে নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দেবে। আর প্রতিটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বাড়বে স্বাস্থ্য ঝুঁকির মাত্রা। নতুন নতুন রোগে আক্রান্ত হবে মানুষ। চলমান জনস্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো দিয়ে তা মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। ওই অবস্থার জন্য থাকতে হবে বাড়তি প্রস্তুতি। কিন্তু ওই ধরনের প্রস্তুতি নেই বাংলাদেশের। বর্তমান জনস্বাস্থ্যসেবার অবস্থা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী এখনও ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত। যেখানে বিদ্যমান স্বাভাবিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকারের প্রস্তুতিতে প্রশ্ন থাকাটাই স্বাভাবিক বলে মনে করেন রশিদী-ই মাহবুব। সরেজমিনে দেখা গেছে, জনবল বাড়লেও সেবার মান বাড়েনি সরকারী চিকিৎসাসেবায়। সরকারী হাসপাতালে জটিল এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের বিনা মূল্যে চিকিৎসা প্রাপ্তি কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকারী নিয়ন্ত্রণে নেই বেসরকারী চিকিৎসাসেবা। দেশের অধিকাংশ মানুষ বেসরকারী হাসপাতালের উচ্চ চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে পারে না। অসুস্থতার চিকিৎসা করাতে গিয়ে দেশে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়ছে। সরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে সাধারণ মানুষের ন্যূনতম চিকিৎসা প্রাপ্তির সুযোগ সঙ্কুচিত করে তুলছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি। আর এমন অবস্থায় দরিদ্র-মধ্যবিত্ত-ধনী সব শ্রেণীর মানুষের জন্য ন্যূনতম মানসম্পন্ন সেবা প্রদান জরুরী হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক কোন নীতিই বাস্তবে কার্যকর করে তুলতে পারেনি সরকার। এদিকে অভিযোগ উঠেছে, সরকারী স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবার সঙ্গে সম্পৃক্তদের দায়িত্ব পালনে অবহেলার বিষয়টি দীর্ঘ বছর ধরে বেশ আলোচিত হয়ে আসছে। বর্তমান সরকারও এ সমালোচনা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, সরকারী চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে অনুপস্থিতির হার ফের বেড়েছে। তাদের কেউ কেউ কর্মস্থলে গিয়ে উপস্থিতি খাতায় স্বাক্ষর দিয়েই চলে যান। অনেকে আসেন দিনের শেষ বেলায়। থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে চিকিৎসকদের দেখা পায় না রোগীরা। তবে নিজেদের আবাসিক কক্ষে গড়ে তোলা অবৈধ চেম্বারে অফিস সময়ে চড়া ফি নিয়ে রোগী দেখতে ভোলেন না চিকিৎসকরা। কর্মস্থলে উপস্থিতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরিদর্শন টিমের কার্যক্রম নেই বললেই চলে। থানা পর্যায়ে টিমের সদস্যরা যান না। শুধু তাই নয়, থানা পর্যায়ে সকল রোগীকে বিনা টাকায় চিকিৎসা ও ওষুধ দেয়া হয় না। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের অনুকম্পা ছাড়া ফ্রি চিকিৎসা ও ওষুধ পাওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। চিকিৎসকরা যে রোগীকে নির্বাচন করেন, তাকেই ওই সুবিধা দেয়া হয়। এ কারণে থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অনেক রোগীকে সাধারণ ওষুধও বাইরে থেকে কিনতে হয়। আর হাসপাতালে কী কী ওষুধ বিনা টাকায় দেয়া হয়ে থাকে, তা রোগী ও তাদের অভিভাবকদের জানার সুযোগ দেয়া হয় না। এতে নিরূপায় হয়ে রোগী বাঁচানোর তাগিদে বাইরে থেকে ওষুধ কিনে আনেন রোগীর লোকজন। বর্তমান সরকারও স্বাস্থ্য সেক্টরকে দুর্নীতি ও দলীয় লোকজনের অহেতুক হস্তক্ষেপমুক্ত রাখতে পারেনি। নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির অনেক ঘটনায় অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদফতর, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ), বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন(বিএমএ)সহ স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং অনেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর নামও অর্থ বাণিজ্যের মাধ্যম হিসেবে ভূমিকা পালনকারীর তালিকায় উঠে এসেছে। আর বর্তমানে দেশের সব ক’টি স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান চলে সরকার দলীয় স্বাস্থ্য সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দের ইশারায়। সাধারণ ও অন্য রাজনৈতিক দলের আদর্শে বিশ্বাসী চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারী-কর্মকর্তারা সব সময়ই বদলি ও ডিমোশনের আতঙ্কে থাকে। আর বদলি ও ডিমোশনের ভয় দেখিয়ে অনেক সাধারণ কর্মচারী ও কর্মকর্তার কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
×