ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

হাতুড়ে ডাক্তারের চিকিৎসা ॥ শিশু মৃত্যুশয্যায়

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১৭ অক্টোবর ২০১৬

হাতুড়ে ডাক্তারের চিকিৎসা ॥ শিশু মৃত্যুশয্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেশবপুর, ১৬ অক্টোবর ॥ কেশবপুরে হাতুড়ে ডাক্তারের অপচিকিৎসায় সাড়ে সাত বছরের এক শিশু মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। সামান্য জ্বর ও খিচুনি হওয়ায় আজিম হোসেন নামের ওই শিশুকে কেশবপুর হাসপাতাল সংলগ্ন জিয়া হুজুর ভুল ইনজেকশন দিলে সঙ্গে সঙ্গে সে অচেতন হয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হলে শনিবার রাতে আজিমকে কেশবপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রবিবার দুপুরে তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। কেশবপুরের পার্শ্ববর্তী দুর্বাডাঙ্গা গ্রামের অন্ধ আব্দুল আলীমের স্ত্রী তানজিলা বেগম জানান, শনিবার দুপুর ১২টার দিকে শিশু আমিজকে কেশবপুর হাসপাতাল মোড়ের জিন তাড়ানোর হুজুর জিয়াউর রহমান জিয়ার কাছে ঝাড়াতে নিয়ে যান। ঝাড়ানোর পর ওই হুজুর দু’হাতে ইনজেকশন দেয়। সঙ্গে সঙ্গে আজিমের নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায়। হুজুরের কাছে কি হলো জানতে চাইলে সে বলে বাড়ি নিয়ে যাও ঠিক হয়ে যাবে। মা তানজিলা হুজুরের কথামতো আজিমকে বাড়ি নিয়ে যান। কিন্তু ধীরে ধীরে আজিমের পেট ফুলে উঠতে থাকে এবং প্রেসার বন্ধ হয়ে যায়। বারবার জিয়া হুজুরের কাছে ফোন করলে কাল ঠিক হয়ে যাবে বলে জানায়। অবস্থা খারাপ বুঝে আজিমকে শনিবার রাত ১১টার দিকে কেশবপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের কর্মকর্তা ডাক্তার শেখ আবু শাহিন জানান, আজিমের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। কিছু না বুঝে তাকে ট্রাক্সন ও বারবিট ইজেকশন দেয়া হয়েছে। অজ্ঞতার কারণে অতিরিক্ত মাত্রায় ওষুধ ব্যহারের কারণে রোগী অচেতন হয়ে গেছে। সে এনকেফালাইটিস রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলে ডাক্তার জানিয়েছেন। অপচিকিৎসার অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজাপ্রাপ্ত ব্যাপক আলোচিত জিয়াউর রহমান জিয়া হুজুর নিজেকে পল্লী চিকিৎসক দাবি করে জানান, ঝাড়ানোর পাশাপাশি আজিমকে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে ওই ইনজেকশন দিয়েছি। প্রায়ই এমন চিকিৎসা দিয়ে থাকি। তিনি আরও বলেন, আমার এলএমএফ সার্টিফিকেট আছে। এলাকাবাসী জানান, এই জিয়া হুজুর আরবি লাইনে পড়াশোনা করেননি। তার পিতা কাওছার আলীও আরবি লাইনে না পড়েও এলাকায় হুজুর নামে পরিচিত একজন হাতুড়ে ডাক্তার। কেশবপুরের কোমরপোল গ্রামের এই পিতাপূত্র কেশবপুর হাসপাতাল মোড়ে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে জিন তাড়ানোসহ যাবতীয় রোগের চিকিৎসা করে আসছে প্রায় দুই যুগ ধরে।
×