ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পেজটি বন্ধ হচ্ছে

ফেসবুকের আনসেন্সরড গ্রুপের ১২ জন গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৪ অক্টোবর ২০১৬

ফেসবুকের  আনসেন্সরড গ্রুপের  ১২ জন  গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও কয়েকটি খ্যাতিমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের ব্যক্তিগত ভিডিও ফাঁস এবং অন্যের ফেসবুক হ্যাক করে পর্ণোগ্রাফি প্রচার এবং পাইরেটেড সিডিসহ মোট ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, পাইরেসির সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই শাস্তি হবে। সে যেই হোক না কেন। পাইরেসি বন্ধ করতে আইনের সংস্কার করছে সরকার। বুধবার ও বৃহস্পতিবার ঢাকা ও গাজীপুর থেকে র‌্যাবের অভিযানে অস্ত্রসহ নকল সিডি-ডিভিডি নির্মাতা সেলিম খান (২৭) ও তার সহযোগী মোঃ শাহেদ আলী (৩০), মোঃ হোসাইন মোল্লা (২৮), মোঃ রুহুল আমিন ওরফে আল-আমিন (২২), মোঃ শফিকুল ইসলাম (৩৮), মোঃ হাফিজুর রহমান ওরফে বাবু চৌধুরী (৪৩), মোঃ আলম (২৩), মোঃ মামুন হোসেন মোল্লা (২৮) ও মোঃ শাকিল খান (১৮) গ্রেফতার হয়। তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল, পাঁচ রাউন্ড তাজা বুলেট, ফেনসিডিল, মদ, বিপুল পরিমাণ পর্ণ ছবি, পাইরেটেড বাংলা ছবিসহ নানা ধরনের আলামত উদ্ধার হয়। বৃহস্পতিবার এফডিসির ৮নং ফ্লোরে অশ্লীলতা এবং অডিও ভিডিও পাইরেসি রোধে টাস্কফোর্স আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের তরফ থেকে জানানো হয়, পাইরেসি চক্রের হোতা মোঃ সেলিম খাঁন ইতোপূর্বে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। চক্রের সদস্যরা বাইতুল মোকাররম, স্টেডিয়াম এলাকায় বিভিন্ন সিডির দোকানের কর্মচারী ছিল। তারা নিজেরাই সিনেমা হলে গিয়ে গোপন ক্যামেরায় সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলো ধারণ করত। এমন কর্মকা-ে কোন কোন সিনেমা হলের কলাকৌশলী ও মালিকরাও তাদের সহায়তাও করত। ছবিগুলোর পাইরেটেড কপির বিভিন্ন দৃশ্যের সঙ্গে মিলিয়ে অশ্লীল ছবি জুড়ে দিত। তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন নায়িকা ও সাধারণ ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ছবি সংগ্রহ করে ফটোসপ করে তাদের সিডি কভার হিসেবে ব্যবহার করত। সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, পাইরেসির সঙ্গে জড়িতদের কারাগারে পাঠানো হবে। ছবি চুরি এবং গান চুরির সঙ্গে যারা জড়িত সে হাকিম হোক আর সেলিম হোক সবাইকে কারাগারে যেতে হবে। এছাড়া পাইরেসি বন্ধ করতে আইনের সংস্কার করতে কাজ করছে সরকার। এফডিসির সংস্কার এবং শিল্পীদের জন্য কাজ করছে সরকার। এছাড়া আগারগাঁয়ে নতুন একটি ভবন তৈরি করা হচ্ছে। যেখানে বিভিন্ন ছবি ও গানের সিডি সংরক্ষণ করা হবে। জাতীয় চলচিত্র পুরস্কারের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, জাতীয় চলচিত্র পুরস্কারের ক্ষেত্রে আমরা দল নিরপেক্ষ। যে ভাল গায়ক বা অভিনেতা তাকেই আমরা পুরস্কার দিয়ে থাকি। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, যারা এতিমের টাকা চুরি করে, মানুষ খুন করে, অবৈধভাবে টাকা চুরি ও ক্ষমতা দখল করে, গুপ্তহত্যা করে, জঙ্গী হামলা করে তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আমরা মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে, রাজাকারে পক্ষে নই। অভিনেতা জায়েদ খানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, র‌্যাব মিডিয়া ইউংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান, সহকারী কমিশনার মিজানুর রহমান, চলচিত্র শিল্পী মৌসুমী, রোজিনা, সোহেল রানা, ইলিয়াস কাঞ্চন ও ওমর সানিসহ অনেকেই। এদিকে বৃহস্পতিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ডিবির যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন জানান, কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও কয়েকটি খ্যাতিমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের ব্যক্তিগত ভিডিও ফাঁস এবং অন্যের ফেসবুক হ্যাক করে পর্ণোগ্রাফি প্রচারের দায়ে ডেসপারেটলি সেকিং আনসেন্সরড নামে একটি ফেসবুক গ্রুপের সদস্য জুবায়ের আহম্মেদ (২১), তৌহিদুল ইসলাম অর্নব (১৯) ও মোঃ আসিফ রানাকে (১৮) গ্রেফতার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের স্পেশাল এ্যাকশন গ্রুপ। তাদের কাছ থেকে কম্পিউটার হার্ডডিস্ক ও মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একটি বহুল সমালোচিত আনসেন্সরড গ্রুপ। গ্রুপটির সদস্য সংখ্যা একলাখ ২২ হাজার। গ্রুপটির প্রতিষ্ঠাতা মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশী মোঃ রুহুল চৌধুরী। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গ্রুপটি বাংলাদেশের মেয়েদের তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে হেয় করে আসছে। চক্রটি অবাধে মেয়েদের ব্যক্তিগত আক্রমন, নোংরা ও বিকৃত যৌনতার ছবি প্রকাশ করছিল। তারা যে কোন অপরিচিত মানুষের ছবি, গোপনে ধারণ করা ভিডিও লিংক ফেসবুকে শেয়ার করে তাতে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করত। এদের দ্বারা সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি, অভিনেতা, অভিনেত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ অনলাইনে লাঞ্জনার শিকার হচ্ছেন। এ কাজে তাদের একটি বিশাল ওয়েবসাইট রয়েছে। গ্রুপটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে পড়ুয়া এক মেয়ের ব্যক্তিগত ভিডিও অনলাইনে ফাঁস করে দেয়। মেয়েটির পরিচয় ও তার ভিডিওর লিংক সকল সদস্যের এ বিশাল গ্রুপ থেকে একের পর এক শেয়ার হয়ে ফেসবুকে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। গ্রুপটির ১৮ থেকে ২০ জন এ্যাডমিন রয়েছে। মূল হোতা রাহুল চৌধুরী মূলত গ্রুপটি পরিচালনা করে। বাংলাদেশেও বেশ কয়েক এ্যাডমিন রয়েছে। ফেসবুক পেইজটি বন্ধ করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ডিএসইউ-এর মূল ওয়েবসাইটটি বন্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে ডিবির উত্তর, দক্ষিণ, পশ্চিম ও মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম, মাশরুকুর রহমান খালেদ, সাজ্জাদুর রহমান ও মাসুদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
×