নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ, ১১ অক্টোবর ॥ নওগাঁর রাণীনগর ইসলামিক ফাউন্ডেশন যেন এক অনিয়ম আর দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা যেন এর মাত্রাকে আরও দ্বিগুণ করে দিয়েছে। কোন কোন কেন্দ্রের কেয়ারটেকার একসময়ের সক্রিয় জেএমবি ক্যাডার। শত অনিয়ম আর দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ার পরও কোন প্রদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ক্রমশ তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জানা গেছে, উপজেলার প্রায় ২০-৩০টি কেন্দ্র পরিচালনা না করে সুপারভাইজারকে ম্যানেজ করে কেন্দ্রের নামে প্রতি মাসে বেতন উত্তোলন করে ভোগ করে আসছে কতিপয় শিক্ষক। প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুসারে প্রতিটি কেন্দ্রে সর্বনি¤œ ৩০ শিক্ষার্থীকে পাঠদান করার বিধান থাকলেও আদৌ প্রায় ২০ থেকে ২৫টি কেন্দ্রে ৩০জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করানো হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। উপজেলার প্রায় ২০টি কেন্দ্র নামে মাত্র চালানো হচ্ছে। একই শিক্ষার্থীর নাম খাতায় একাধিক বার দেখিয়ে প্রতি মাসে সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে কতিপয় প্রভাবশালী শিক্ষক। একাধিক শিক্ষকদের নকল সার্টিফিকেট ব্যবহার করে চাকরি করে আসছেন দীর্ঘদিন। আর টাকার বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া এই প্রতিষ্ঠানে এখন একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। কেন্দ্র পরিদর্শনকারী দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা প্রতিটি কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে শিক্ষকদের কাছ থেকে নিয়ে আসেন বাড়তি টাকা। টাকা দিতে না চাইলে তারা এই ক্ষুদে বেতনভোগী শিক্ষকদের নানা রকমের ভয়ভীতি প্রদান করে আসেন। ভোটের সময় কেন্দ্রে ভোটগ্রহণকারী প্রতিটি শিক্ষকের পাওনা সম্মানী থেকে কেটে নেয়া হয় ১শ’ থেকে ৩শ’ টাকা। উপজেলার বিভিন্ন মসজিদের জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয় ফাউন্ডেশনের এসব শিক্ষক দ্বারা। এই জরিপের জন্য সামান্য কিছু ভাতার ব্যবস্থা থাকলেও শিক্ষকরা আদৌ এই সম্মানী ভাতা সঠিকভাবে পান না।
ভোগ করেন সুপারভাইজার ও কেয়াটেকারগণ। একই অবস্থা উপজেলার ৬নং কালিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের আবাদপুকুরের সাধারণ রিসোর্স সেন্টার। নীতিমালা অনুসারে রিসোর্স সেন্টার থেকে প্রায় ২ কিমি দূরত্বের মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ কেয়ার টেকারের বাড়ি অবস্থিত হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমান সাধারণ কেয়ারটেকার আবু বকর সিদ্দিকের বাড়ি রিসোর্স সেন্টার থেকে প্রায় ১৮ কিমি দূরে এনায়েতপুর গ্রামে অবস্থিত। তিনি একসময়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। বাংলাভাইয়ের সক্রিয় ক্যাডার হিসেবে এলাকায় তার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। তবুও তিনি প্রকাশ্যে অর্থের জোরে এখানে চাকরি করে আসছেন। কিন্তু এত কিছু জানার পরও নীরব কর্তৃপক্ষ। তাই বর্তমানে এই রিসোর্স সেন্টারটি চলে দায়িতরত্ব এই সাধারণ কেয়ারটেকারের ইচ্ছে মাফিক। ইসলামিক ফাউন্ডেশন যেন এক অভিভাবকহীন প্রতিষ্ঠান। সুপারভাইজার ও কেয়াটেকারগণের আত্মীয়-স্বজনদের কেন্দ্র পরিদর্শন করা হয় না। এমনকি শুক্রবার কেন্দ্র পরিদর্শন করার নিয়ম এখানে রয়েছে। পদাধিকার বলে সুপারভাইজারই হচ্ছেন এই প্রতিষ্ঠানের সর্বেসর্বা। তাই তার অধীনস্ত কোন ব্যক্তিই তার বিরুদ্ধে কোন কিছু বলতে পারেন না। নীতিমালা অনুসারে প্রতিটি কেন্দ্র আড়াই ঘণ্টা চালানোর কথা থাকলেও তা চালানো হয় না। মাসে অধিকাংশ কেন্দ্রে ৭দিনও পাঠদান করানো হয় না।
একই কেন্দ্রের শিক্ষার্থী দিয়ে একাধিক কেন্দ্র চালানোর অভিযোগ রয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিয়ম অনুসারে একই শিক্ষক একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে পারবেন না। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের ম্যানেজ করে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা রাজস্বভুক্ত মাদ্রাসায় চাকরি করে আসছেন। এদিকে উপজেলার কোন জনবহুল স্থানে একটি সাধারণ রিসোর্স সেন্টার (পাঠাগার) স্থাপন করা বাধ্যতামূলক যেখানে সাধারণ পাঠকরা এসে তাদের পছন্দমতো বই ও পত্রিকা পড়বে। এই সাধারণ রিসোর্স সেন্টারটি (পাঠাগারটি) প্রতিদিন দুপুর ২টা হতে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পাঠকদের জন্য খোলা রাখার বিধান থাকলেও তা মানা হয় না। কিন্তু এর দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ কেয়াটেকার কারিমুল্লাহ নিজের ইচ্ছেমতো এবং সুপারভাইজারের যোগসাজশে পাঠাগার তার গ্রামের বাড়ি দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামে নিয়ে গিয়ে স্থাপন করেছেন।
যেখানে কোন পাঠকের পক্ষে যাওয়া সম্ভব না। অপরদিকে জাল শিক্ষা সনদ দাখিল করে চাকরি করার দায়ে গত ২০১৫ সালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম পাটওয়ারী একাধিক শিক্ষককে বহিষ্কার করলেও চলতি বছর মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সুপারভাইজারের যোগসাজশে বহাল তবিয়তে এখনও চাকরি করছেন তারা এবং সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে এলেও নীরব ভূমিকায় কর্তৃপক্ষ। ইফার উপজেলা সুপারভাইজার আ ন ম রাশেদুল ইসলাম জানান, আমি নতুন করে দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর থেকে সার্বিক অনিয়মগুলোকে নিয়মে আনার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে আমার পূর্বের সুপারভাইজারের আমলে কি হয়েছে, তা আমার জানার বাইরে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: