ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ২ সন্ত্রাসীকে মিয়ানমারের কাছে সোপর্দ

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১২ অক্টোবর ২০১৬

বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ২ সন্ত্রাসীকে মিয়ানমারের কাছে সোপর্দ

এইচএম এরশাদ, সীমান্ত থেকে ফিরে ॥ মিয়ানমারের মংডুতে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর বাংলাদেশে পালিয়ে আসা দুই সন্ত্রাসীকে ধরে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীর কাছে সোপর্দ করেছে বিজিবি। এদের একজন গুলিবিদ্ধ। সীমান্ত গলিয়ে যাতে কোন সন্ত্রাসী প্রবেশ করতে না পারে, এ জন্য মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষীদল বিজিবিকে অনুরোধ জানিয়েছিল। রবিবার মধ্যরাতে টেকনাফের হ্নীলা মৎস্য প্রকল্প এলাকা দিয়ে এদেশে অনুপ্রবেশের সময় বিজিবি এদের আটক শেষে পত্র প্রেরণ করে মিয়ানমারে। মঙ্গলবার বেলা ১২টায় টেকনাফ স্থলবন্দরে বিজিবি মিয়ানমারের নাগরিক কাউয়ার বিল মাঝের পাড়ার আবুল বশরের পুত্র গুলিবিদ্ধ আনোয়ার কামাল (২৫) ও একই এলাকার কমল আহমদের পুত্র মোঃ ইসমাইলকে (২৩) দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করেছে। গুলিবিদ্ধসহ ধৃত যুবকদ্বয় আরএসও ক্যাডার বলে ধারণা করছেন সীমান্তে বসবাসকারী অনেকে। বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে বলে বিজিবি সূত্রে জানা গেছে। মিয়ানমার অভ্যন্তরে সংঘটিত ঘটনায় বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্কের কোন ক্ষতি হবে না এবং ব্যবসা-বাণিজ্যসহ দু’দেশে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সীমান্ত রক্ষাসহ চোরাচালান রোধে ও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশের সীমান্তে টহল জোরদার করেছে বিজিবি। সাগরপথেও নিয়মিত টহলে রয়েছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড সদস্যরা। সীমান্ত থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, মিয়ানমারে পুলিশ পোস্টে সন্ত্রাসী হামলার পর রবিবার থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সব ধরনের বাণিজ্যিক ও অন্যান্য ফটক। এলাকায় পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত সীমান্ত বন্ধ থাকবে। কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, মিয়ানমার থেকে ব্যবসায়ীরা মুঠোফোনে জানিয়েছেন, দেশটিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত প্রতিবেশী বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাণিজ্য পুনরায় শুরু করা সম্ভব হবে না। তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাসের সার্বিক সহযোগিতায় ৯ সদস্য বিশিষ্ট রাখাইন প্রদেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে এসে স্থানীয় প্রশাসন এবং কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত বাণিজ্য উন্নয়ন শীর্ষক দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক শেষে গত ২৯ সেপ্টেম্বর আস্থা এবং ভালবাসায় সিক্ত হয়ে ফিরে গেছেন স্বদেশে। মিয়ানমারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এ সম্পর্ক অটুট রয়েছে এবং থাকবে জানিয়ে কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ব্যবসায়ী নেতা আবু মোর্শেদ জনকণ্ঠকে বলেন, একটি বিশেষ মহলের ছত্রছায়ায় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ঘাপটি মেরে থাকা আরএসও নেতা মৌলভী নুর হোসেন, শফিক, মৌলভী মোঃ সেলিম ওরফে আবু আবদুল্লাহ, কাতার ফেরত আরএসও জঙ্গী মৌলভী আবদুর রহিম ও রুহুল আমিনসহ রোহিঙ্গা জঙ্গীদের খোঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে মিয়ানমারে বিজিপি ক্যাম্পে হামলার ঘটনার পর মংডুতে আটকা পড়া বাংলাদেশী ১৮ জন ব্যবসায়ী সোমবার সন্ধ্যায় টেকনাফ স্থলবন্দর হয়ে ফিরে এসেছেন। রবিবার ইমিগ্রেশনে যাতায়াত বন্ধ থাকায় ওই ব্যবসায়ীরা মংডু শহরে আটকা পড়েছিলেন। তারা টেকনাফ, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বাসিন্দা। টেকনাফ ইমিগ্রেশন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান ১৮ ব্যবসায়ী ও দুই শিশুসহ ২০ জনকে সোমবার মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ একটি ট্রলারে করে টেকনাফে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। ফিরে আসা ব্যবসায়ীরা জানান, মংডু শহরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিপুল সংখ্যক সেনা ও সরকারী বাহিনীর আনাগোনা লক্ষ্য করেছেন তারা। সীমান্ত অঞ্চল ঘুরে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশের কোথাও আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপ আরএসও’র ঘাঁটি নেই। পার্বত্য বান্দরবানের লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তে আরএসওর প্রশিক্ষণ ঘাঁটি স্থাপনের প্রচার থাকলেও তা মিয়ানমার অভ্যন্তরে গহীন অরণ্যে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বিচ্ছিন্নতাবাদী একাধিক গ্রুপের অবাধে বিচরণ থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রের ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রশাসন তা ছত্রভঙ্গ করে দেয়। অভিযান চালিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র। ওইসময় গ্রেফতার করা হয় বহু ক্যাডারকে। মিয়ানমারে সেনা সমাবেশ ॥ রবিবার মিয়ানমারে সন্ত্রাসী হামলায় ৯ পুলিশসহ ১৪ জনের প্রাণহানির ঘটনায় সেনা সমাবেশ করতে যাচ্ছে সেদেশের সরকার। মিয়ানমারের সেনা ও সীমান্তরক্ষীদল যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে ৯ পুলিশ সদস্য হত্যার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে সেনা সমাবেশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। এটি টেকনাফ থেকে অন্তত ১৫ এবং ঘুমধুম সীমান্ত থেকে অন্তত ৪২কি.মিটার দূরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে সেনা সমাবেশ ঘটালেও বাংলাদেশ সীমান্তে কোন ধরনের উত্তেজনা, উদ্বেগ ও আতঙ্ক নেই। তারপরও সীমান্ত রক্ষা ও অনুপ্রবেশ রোধে বিজিবি অতিরিক্ত সতর্কতায় টহল জোরদার করেছে।
×