ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আভিজাত্যের ল্যাম্পশেড

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ১০ অক্টোবর ২০১৬

আভিজাত্যের ল্যাম্পশেড

বহু বছর ধরেই বাংলার অভিজাত পরিবারে ল্যাম্পশেড ব্যবহার হয়ে আসছে। সময়ের বিবর্তনে ল্যাম্পশেডে এসেছে ভিন্নতা। পিতল কিংবা কাঁচের ল্যাম্পশেডের পাশাপাশি এখন কাঠ, বাঁশ, বেত দিয়ে তৈরী ল্যাম্পশেডও অনেক সহজলভ্য। তাই সৌন্দর্য বিলাশী মানুষের ঘরে ঠাঁই পেয়েছে অভিজাত ল্যাম্পশেড। ১৭ শতকের শেষের দিকে মশাল আলো সাজিয়ে প্যারিসের রাস্তা আলোকিত করার আয়োজন শুরু করা হয়। মূলত তখন থেকেই ল্যাম্পশেডের ধারণা আসে। যদিও পরে তেলের প্রদীপ দিয়ে আলোর প্রজ্বলনের শুরু ইতালির মিলান শহরে। ১৮৭৯ সালে বৈদ্যুতিক বাল্ব আসলে ল্যাম্পশেড তার নব যাত্রা শুরু করে। ব্রিটেনের রানী ভিক্টরিয়ার সময় বাহারী ল্যাম্পশেড বানানোর তোড়জোড় শুরু হয়। মূলত সমানভাবে আলোর বণ্টন এবং আলোর বিচ্ছুরণ থেকে চোখ বাঁচাতেই ল্যাম্পশেডের প্রয়োজন পড়ে। পরে অবশ্য দেখা যায় ল্যাম্পশেড ব্যবহারে ঘরে নান্দনিক মাত্রা যোগ হয়। বাজারে নানা ধরনের ল্যাম্পশেড পাওয়া যায়। যেমন- স্ট্যান্ড ল্যাম্পশেড, ঝুলন্ত ল্যাম্পশেড বা টেবিল ল্যাম্পশেড। এইগুলো আবার কাপড়, কাগজ, প্লাস্টিক, রঙিন কাঁচ অনেক কিছু দিয়েই তৈরি করা হয়ে থাকে। স্ট্যান্ড ল্যাম্পশেডগুলো আকারে একটু বড় হয়। এতে নির্দিষ্ট জায়গার প্রয়োজন হয়। ঘরের জায়গা কম থাকলে ঝুলন্ত ল্যাম্পশেড বা টেবিল ল্যাম্পশেড ব্যবহার করা যেতে পারে। শোবার ঘরে টেবিল ল্যাম্পশেড রাখতে পারেন। ড্রইংরুমে ঝুলন্ত বা স্ট্যান্ড ল্যাম্পশেড মানানসই। যত্রতত্র ব্যবহার না করে ল্যাম্পশেডটি বসাতে হবে জায়গা বুঝে। ল্যাম্পশেডের রং নির্বাচনে গোলাপি, নীল, বেগুনি, কমলা, সবুজসহ অন্যান্য উজ্জ্বল রং ব্যবহার করা যেতে পারে। ল্যাম্পশেড ব্যবহার করতে প্রতিটি ঘর আলাদা করে ভাগ করে নেয়া ভাল। পাশাপাশি ঘরের ফার্নিচার টাইপ, দেয়ালের রং আর লাইট সোর্সও গুরুত্বপূর্ণ। বসার ঘরের ক্ষেত্রে হালকা রঙের ল্যাম্পশেড বেছে নিন। শোবার ঘরে গাঢ় নীল, সবুজ, লাল, হলুদ, ধূসর, নীলাভ ধূসর, ঘন সবুজ ধরনের ল্যাম্পশেড বেছে নিতে পারেন। বাচ্চাদের ঘরে ঝুলন্ত ল্যাম্পশেড ব্যবহার করা উত্তম। ঘরটা ছোট হলে হালকা রঙের ল্যাম্পশেড কিনতে হবে। এতে ঘর বড় দেখাবে। ঘরের দেয়ালের রঙের সঙ্গে বিপরীত (কনট্রাস্ট) কোন উজ্জ্বল রং যেমন লাল, কমলা, হলুদ ও বেগুনি রঙের ল্যাম্পশেড ব্যবহার করলে ঘরে একঘেয়ামি ভাবটা থাকবে না। টেবিল ল্যাম্প ঘরে স্নিগ্ধ ভাব এনে দেয় ও পর্যাপ্ত আলো ছড়ায়। পড়ার ঘর, শোবার ঘর বা বসার ঘরে এই ধরনের ল্যাম্পশেড রাখতে পারেন। খাবার ঘরে ল্যাম্পশেড রাখতে একই রকম ল্যাম্পশেড দুই দিকে মিলিয়ে রাখুন, দেখতে ভাল লাগবে। শোবার ঘরে আলো সরাসরি চোখে পড়লে তা অস্বস্তিকর হয়ে উঠে তাই পুরোটা ঢেকে থাকবে এমন কোন ল্যাম্পশেড ব্যবহার করে শোবার ঘরকে প্রাণবন্ত করতে পারেন। ইন্টেরিয়র ডিজাইনার এবং পরামর্শক অভি আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘ঘরে কোন ধরনের ল্যাম্পশেড ব্যবহার করবেন তা আগে থেকেই প্লান করে নিলে ল্যাম্পশেডের আলোয় ঘরে মুগ্ধতা আসে না। ল্যাম্পশেড যাতে বাচ্চাদের নাগালের বাইরে থাকে সে ব্যাপরে খেয়াল রাখতে হবে।’ ল্যাম্পশেড এমন স্থানে বসাতে হবে যেখান থেকে আলো ছড়িয়ে পড়তে পারে। ঘরের কোণে রাখতে চাইলে তার পাশে কোনো উঁচু ও ভারি কাজের আসবাব রাখবেন না। ল্যাম্পশেড যাতে বাচ্চাদের নাগালের বাইরে থাকে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। কোথায় পাবেন আড়ং, যাত্রা, আলমাস, কে ক্রাফটসহ অনেক ফ্যাশন হাউসের আউটলেটে কারুকার্যময় ল্যাম্পশেড পাবেন। মিরপুর ১০ নম্বরের লাইট হাউস দোকানে শুধুমাত্র বাহারী ল্যাম্পশেড বিক্রি হয়। এছাড়া সোবাহানবাগ, নিউমার্কেটের ও গুলশানের কয়েকটি দোকানে হরেক দামের ল্যাম্পশেড পাওয়া যায়। দাম সাধারণত নির্ভর করে ল্যাম্পশেডের কারুকার্য এবং এতে কি ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করা হয়েছে তার ওপর। বাঁশ, কাঠ, বেতের তরি ল্যাম্পশেডের দাম পড়বে ৬০০ থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে।
×