ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানের বদলা নেয়ার কৌশল ॥ কাশ্মীরী ও পাকিস্তানীরা অবিচ্ছেদ্য : নওয়াজ

আরও সন্ত্রাসী হামলা হবে ভারতে

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ৫ অক্টোবর ২০১৬

আরও সন্ত্রাসী হামলা হবে ভারতে

ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের প্রতি পাকিস্তান সম্ভবত সামরিক আগ্রাসনের আকারে নয়, বরং কাশ্মীর উপত্যকা ও অন্যান্য স্থানে আরও সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমে জবাব দেবে। বারমুল্লা হামলা এ সন্দেহবোধকে শক্তিশালী করেছে। এ হামলায় বিএসএফ সৈন্য নিহত হয়। এদিকে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ সোমবার বলেছেন, কাশ্মীরীদের স্বাধীনতা আন্দোলন আর ভারতীয় নৃশংসতার মাধমে দমন করা যাবে না। কাশ্মীরী ও পাকিস্তানীরা অবিচ্ছেদ্য। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি ও এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের। ভারতের নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে চালানো অভিযানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ না নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী দায়িত্বশীল আচরণ করার কথা দাবি করে থাকে। কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনী লস্করই তৈয়বা (এলইটি) ও জইশ-ই-মোহাম্মদ জিহাদীদের দিয়ে এরূপ সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে যেতে পারে। কাশ্মীরের দিকে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন- এ ধারণায় ইন্ধন যোগানোই এর উদ্দেশ্য। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইসলামাবাদভিত্তিক বিদেশী মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ রেখায় এলওসি নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে সেই কৌশলের অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। যাদের প্রতিনিধিরা এলওসিতে গিয়েছিলেন এমন কয়েকটি সুপরিচিত আন্তর্জাতিক মিডিয়া হাউস ভারতের অভিযান নিয়ে অবিশ্বাস ব্যক্ত করেছে। এটিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতীয় সৈন্যরা যে কখনও এলওসি অতিক্রম করেনি তা পাকিস্তানীদের বোঝাতে প্রাথমিক সাফল্য হিসেবে দেখছে। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতীয় সৈন্যদের প্রবেশ নিবৃত্ত করতে এক সমন্বিত সামরিক জবাব দেয়া প্রয়োজন বলে যদি বাস্তবিকপক্ষেই পাকিস্তান মনে করে, তা হলে এরূপ জবাব দেয়ার প্রস্তুতি নিতে পাকিস্তানের জন্য সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু, ভারত এলওসি লঙ্ঘন করেছিল বলে পাকিস্তানের অস্বীকৃতি ঐারতেরও কাজে আসছে। কারণ এতে অদূর ভবিষ্যতে কোন সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধির সম্ভাবনা দূর হচ্ছে। ভারতের দৃষ্টিভঙ্গী অবশ্য সেনা প্রতিষ্ঠানের ওপর উরি ধরনের হামলা বা দেশের অন্যান্য স্থানে সন্ত্রাসী হামলার সম্ভাবনা দূর করবে না। মার্কিন সামরিক বিশেষজ্ঞ ও প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সাবেক উপদেষ্টা ব্রুস রিডেল বলেন, ভারত এর অভিযান চালিয়ে বিপদের সম্ভাবনা বাড়িয়েছে এবং পাকিস্তানের সেনাপ্রধান রাহিল শরীফ পিছু হটবেন না। তিনি সম্ভবত জবাব দেয়ার এমন পরিকল্পনা করবেন, যা উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেয়। আর এ সঙ্কট তার মেয়াদ বাড়াতে পারে। প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ সেনাপ্রধানের সঙ্গে কোন লড়াই চান না। এদিকে, ভারতের সশস্ত্র বাহিনী রাজনৈতিক নির্বাহী কর্তাকে বলেছে যে, কেবল ছয় মাসের মতো মধ্যমেয়াদী অভিযানই পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী অবকাঠামোকে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ভারত গত সপ্তাহে এলওসি অতিক্রম করে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানোর কথা প্রকাশ করার পর সশস্ত্র বাহিনীর নেতারা সরকারকে বলেন যে, মাঝে মধ্যে আঘাত করে সন্ত্রাসীদের সামর্থ্যকে বিনষ্ট করা যাবে না। সেজন্য মাঝারি মেয়াদী পরিকল্পনা নেয়া প্রয়োজন। রাশিয়া ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইককে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, প্রত্যেক দেশেরই আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। নয়াদিল্লীতে সোমবার রুশ রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার এম কাদাকিন বলেন, সীমান্তবর্তী সন্ত্রাসবাদ দমনে তার দেশ সব সময়েই ভারতের পাশে রয়েছে। এর দিনকয়েক আগে রাশিয়া পাকিস্তানকে এর ভূখ-ে সন্ত্রাসী দলগুলোর তৎপরতা বন্ধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানায়। নওয়াজ সোমবার ইসলামাবাদে পার্লামেন্ট নেতাদের এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে ভাষণে বলেন, পাকিস্তানী ও কাশ্মীরীরা অবিচ্ছেদ্য। আমরা সব আন্তর্জাতিক ফোরামে কাশ্মীরীদের দুর্দশা তুলে ধরতে চেষ্টার কোন কার্পণ্য করব না। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিশেষত কাশ্মীর প্রশ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধ। ঐ বৈঠকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ, অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার, পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো, জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম প্রধান মাওলানা ফজলুর রহমান, মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তানের নেতা ফারুক সাত্তার, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ নেতৃদ্বয় শাহ মাহমুদ কোরেশি ও শিরিন মাজাবি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×