ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিসের সেমিনার

সঠিক ব্যবস্থাপনায় অভিবাসী সঙ্কট মোকাবেলা সম্ভব

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ৫ অক্টোবর ২০১৬

সঠিক ব্যবস্থাপনায় অভিবাসী সঙ্কট মোকাবেলা সম্ভব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশ্বব্যাপীই চলছে অভিবাসন সংকট। এই সময়ের জন্য এটি একটি বড় ধরনের সমস্যা। কিন্তু এ সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। বর্তমান সময়ে দেশগুলোর মধ্যে বৈরিতা বাড়ায় পৃথিবীজুড়ে অভিবাসীরা এমন সংকটে পড়েছেন। সঠিক ব্যবস্থাপনাই পারে এই সংকটের মোকাবেলা করে অভিবাসনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন আনতে। মঙ্গলবার ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ’ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থার (আইওএম) সহযোগিতায় বিআইআইএসএস এ সেমিনারের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন আইওএম’র অপারেশন ও জরুরী বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ আবদিকার। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, আইওএম বাংলাদেশ মিশনের প্রধান শরৎ দাস, বিআইআইএসএস’র বোর্ড অব গবর্নরস চেয়ারম্যান মুন্সী ফয়েজ আহমদ প্রমুখ। বক্তারা বলেন, অভিবাসন একটি নিয়মিত ঘটনা। এটা যেমন দেশের ভেতরেও হয়। আবার আন্তর্জাতিক পর্যায়েও হয়। আমরা এখানে আলোচনা করছি আন্তর্জাতিক অভিবাসন নিয়ে। অভিবাসন নিয়ে কর্তৃপক্ষের উদাসীন মনোভাব, লাখ লাখ অভিবাসীকে চরম দুর্ভোগের মধ্যে ফেলে দেয়। কর্তৃপক্ষ সঠিক কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে অভিবাসন কার্যক্রম পরিচালনা করলে দেশে কোন অভিবাসীই বিপাকে পড়ত না। এটা শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নয়, বিশ্বের সব দেশের জন্যই একই বিষয়। তবে উন্নত দেশগুলোর অভিবাসন প্রক্রিয়া যথেষ্ট স্বচ্ছ। তাই তাদের অভিবাসন নিয়ে তেমন কোন সমস্যার কারণ হয় না। তাছাড়া একজন নাগরিকের জন্যও চূড়ান্তভাবে দায়িত্বশীল। আর আমাদের দেশে অভিবাসীদের প্রতি যথাযথ নজর না দেয়ায় বিশ্ব জুড়ে অভিবাসীরা নানা ধরনের সংকটে রয়েছেন। এই সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে না পারলে ভবিষ্যতে এই সেক্টরে বড় রকমের বিপর্যায় দেখা দেবে। বক্তারা বলেন, সংকটপূর্ণ দেশে অভিবাসন কমাতে হবে। এছাড়া অভিবাসীদের সুরক্ষায় অবৈধ অভিবাসনও কমিয়ে আনতে হবে। শুধু নিজ দেশের নাগরিকদের নয়, একটি দেশের সীমানার মধ্যে যারাই থাকুক না কেন তাদের সুরক্ষা সংশ্লিষ্ট দেশকে দিতে হবে। এছাড়া অভিবাসী প্রেরণকারী দেশগুলোকেও নিজ দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখতে হবে। দেশের জন্য অভিবাসন জরুরী। তবে অত্যাবশ্যকীয় নয়। একজন নাগরিককে বিপদে ফেলে দেয়া রাষ্ট্রের কাজ হতে পারে না। বিশ্বজুড়ে এখন অভিবাসন ও শরণার্থী সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এক পরিসংখ্যানে বলেছে, ২০১৫ সালেই গৃহহীন ও শরণার্থীর সংখ্যা ছিল ছয় কোটি ৫৩ লাখ। এর আগে বিশ্বব্যাপী শরণার্থী সংকট আর কখনও ঘটেনি। অভিবাসন একটি নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা। দিন যত যাচ্ছে, ততই অভিবাসন সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে প্রতিবছরই ভাগ্যোন্নয়নের আশায় অবৈধপথে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন অভিবাসন-প্রত্যাশীরা। আর এভাবে অবৈধপথে দেশ ছেড়ে যাওয়ার পথে নির্যাতনের শিকার হন তারা। কারও-কারও সাগরেই মৃত্যু হচ্ছে। কখনও আবার ঠাঁই হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশের গভীর জঙ্গলে। যেখানে চরম অনিশ্চয়তায় কাটে তাদের প্রতিটি মুহূর্ত। এই সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজন রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ভাগ্যোন্নয়নের জন্য চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশী অবৈধ ও বিপজ্জনক পথে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। বিদেশে যাওয়ার পথে অনেকেই প্রাণও হারিয়েছেন। তারপরও থামেনি অবৈধ পথে বিদেশে পাড়ি জমানো। সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল, সমুদ্র পথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লোকজনের বিদেশে যাওয়ার চেষ্টার ঘটনা। সেটা আপাতত নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তারপরও আঞ্চলিক সহযোগিতা দরকার। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বিশ্বে প্রায় ৬৫ লাখ অভিবাসী রয়েছে। এর মধ্যে নয় লাখ ৬০ হাজার বাংলাদেশী বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশে কাজ করছে। গত দুই দশকে বাংলাদেশের রেমিটেন্স প্রায় ২০ গুণ বেড়েছে। যা দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অভিবাসীরা স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতিসংঘের লক্ষ্যমাত্রা পূরণেও অবদান রেখে চলেছে।
×