ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্বস্তির ছোঁয়া ২

সবুজ গ্রাম আর সাদা মেঘের ভেলা, যাপিত জীবনে ভিন্ন স্বাদ

প্রকাশিত: ০৫:২১, ৩ অক্টোবর ২০১৬

সবুজ গ্রাম আর সাদা মেঘের ভেলা, যাপিত জীবনে ভিন্ন স্বাদ

রশিদ মামুন/রিফান-বিন-ত্বহা/ আব্দুর রউফ সরকার/এম রহমান মুকুল ॥ ঢাকা থেকে দূরের কোন এক গ্রামে হঠাৎ করে চোখ স্থির হয়ে যায়। চারপাশে ফিরে তাকাতে সুন্দর-সুন্দর আর সুন্দরের সম্ভার। পাখি ডাকছে, ঝর্ণা বয়ে চলছে, মুক্তদানার মতো জ্যোৎস্নার আলোয় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সন্ধ্যে বেলা। সে নড়াইলের পানিপাড়ার অরুনিমা কিম্বা রংপুরের গঙ্গাচড়ার গঞ্জিপুরের ভিন্ন জগত- সবখানের সৌন্দর্য বিমোহিত হওয়ার মতোই। সর্ব উত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়া দাঁড়িয়ে হিমালয়ের শরীর ছুঁয়ে যাওয়া সাদা মেঘের ভেলা দেখেই যে কেউ ভাষা হারাবেন বর্ণনার। চোখ জুড়ানো এ সৌন্দর্য মন ভরে দেখার পাশাপাশি এসব জায়গায় থাকার জন্য গড়ে উঠেছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসমৃদ্ধ কটেজ এবং রেস্ট হাউস। শীতে ভিড় বেশি হলেও সারাবছরই এসব জায়গায় মানুষ ছুটে যান একটু নিরিবিলিতে, মনের টানে; মুগ্ধ হতে। কখনও ফিঙে দেখেছেন? নিশ্চয়ই, বলবেন তো। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন কুচকুচে কালো পাখিটি এই রূপ পেল কোত্থেকে। কেন একদৃষ্টিতে তকিয়ে থাকেন! আবারও কি দেখতে ইচ্ছা করছে ফিঙে। চটজলদি মনে পড়ছে ফররুখ আহমেদের হরফের ছড়া- ঝ এর পাশে ঝিঙে/ ঝিঙে লতায় ফিঙে/ঝিঙে লতা জড়িয়ে গেলো/কালো গরুর শিঙে। ছেলেবেলায় বহুবার পড়া হয়েছে। আবার বুলবুলি, লালপুচ্ছ বুলবুলি বা কালচে বুলবুলি। মনে পড়ছে বেশ বুলবুলি বলতেই তো সেই ছোট্ট পাখিটা। মাথায় ঝুটি। আহা এ এক পাখির রাজ্য। এ চিত্র দেখা যাবে নড়াইলের অরুনিমায়। আচ্ছা যদি এমন হয় নাগরিক ব্যস্ততা পেরিয়ে কোলাহল ছাড়িয়ে পাড়াগাঁয়ের পথে হাঁটতে ইচ্ছা করছেÑ যাওয়া যেতে পারে অরুনিমায়। মেঠো পথ, গাছের ছায়ায় সবুজের মায়া আকৃষ্ট করবে সকলকে। শুনতে পাওয়া যাবে পাখির কিচিরমিচির। চোখ জোড়ানো ফিঙে আর বুলবুলি দেখতে পাওয়া যাবে। পাওয়া যাবে ময়ূরকণ্ঠী হাঁস, সুইচোরা, ফটিকজল, শ্যামা। আবার শালিক, সাদা বকের ঝাঁক যদি পাওয়া যায় তাহলে তো কথাই নেই। আপনাকে পাখি দেখতে হলে অরুনিমায় যেতেই হবে। এখানে গাছের ছায়ায়, পাখির গান শুনতে শুনতে, জলের ধারে অনায়াসে কাটিয়ে দেয়া যায় অনেকটা সময়। আবহমান গ্রামবাংলার চিরচেনা রূপ আর আধুনিকতার সুপরিকল্পিত সমন্বয় ঘটানো হয়েছে এখানে। সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ অরুনিমায় নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পানিপাড়া গ্রামে ছুটছেন। নড়াইলের পানিপাড়া, অন্ধকার গ্রাম একেবারে গ-। এখানে বিদ্যুত থাকলেও অন্ধকারই ডুবে থাকে সব সময়। রাতে কানপাতলেই ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শুনতে পাবেন, হুক্কা হুয়া করে ছুটে যাবে চতুর শিয়াল। পিচ ঢালা পথ, ইট বিছানো পথ, মেঠো পথ ছুরির মতো এঁকেবেঁকে একপর্যায়ে বিলের কোলে হারিয়েছে। সেখানেই অরুনিমা। সব মিলিয়ে ১৫০ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে অরুনিমা। এখানে ৬৬ বিঘাতেই রয়েছে জলের সৌন্দর্য। ১৯টি পুকুর আর পুকুরপাড়ের গাছে বাসা বেঁধেছে নানা রঙের পাখি। অরুনিমায় এক হাজার ৪০০ প্রজাতির ফলজ, বনজ, ওষুধি গাছ রয়েছে। প্রতিনিয়ত দেশ-বিদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত বিনোদনপ্রিয় মানুষ ও পর্যটক আসছেন চিত্রা-কাজলা-নবগঙ্গা ও মধুমতি বিধৌত বরেণ্যশিল্পী এসএম সুলতানের নড়াইলের এ অরুনিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবটিতে। শীত মৌসুমের আগেভাগেই এ পর্যটন কেন্দ্রের কটেজগুলো বুকিং দিয়ে রেখেছেন। দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আবাসিক সুবিধার জন্য এখানে রয়েছে এসি, নন-এসি ২০টি কটেজ; যার মধ্যে রুম রয়েছে ২৪টি এবং দুই রুমবিশিষ্ট ভাসমান কটেজ রয়েছে ৩টি। রয়েছে সুইমিংপুল, টয়ট্রেনসহ নানান প্রজাতির পশু-পাখি। এখানে আবাসিক বোটসহ প্রতিটি কটেজেই রয়েছে খাবারের সুব্যবস্থা। এখানে লেকের মাঝে রয়েছে দ্বীপ রেস্টুরেন্ট। রয়েছে ৪০০ জন ধারণক্ষমতার সেমিনার হল। এছাড়াও রয়েছে ৭৫ জনের আবাসিক সুবিধাসহ ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা। তবে সবকিছু ছাড়িয়ে অরুনিমা হয়ে উঠেছে পাখিদের অভয়ারণ্য। আকাশের বুকে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়তে থাকে অতিথি পাখির দল। সাধারণত শীতের শুরুতে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে বাংলাদেশে আসতে শুরু করে অতিথি পাখি। কিন্তু এ বছর শীত মৌসুম শুরুর আগেই নড়াইলের অরুনিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাব পরিণত হয়েছে পাখিদের রাজ্যে। এখানে বছরে প্রায় ৮ থেকে ৯ মাস অতিথি পাখি এবং সারাবছরই দেশী পাখি দেখতে পাওয়া যায়। আকাশের বুক চিড়ে পাখিদের কিচিরমিচির সবাইকে মুগ্ধ করে তোলে আগতদের। সন্ধ্যায় পার্কের প্রায় প্রতিটি গাছ নেচে ওঠে সাদা বক আর অতিথি পাখির ডাকাডাকির ছন্দে। পাখি দেখতে আসা এবং পার্কে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা জানালেন তাদের অনুভূতির কথা। পাখি দেখে তাদের মধ্যে অন্যরকম ভাললাগার কথা বললেন সকলেই। অরুনিমায় ঘুরতে আসা ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী তাবাচ্ছুম প্রিয়া জানান, জীবনেও এত পাখি একসঙ্গে দেখেননি। এত পাখি কোথাও একসঙ্গে থাকতে পারে তাও ধারণায় ছিল না। তিনি জানান, একবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখি দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেখানেও এত পাখি দেখতে পাননি, যা রয়েছে অরুনিমায়। অরুনিমার খুব কাছেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় নিদর্শন। কালিয়া উপজেলায় রয়েছে বিশ্বখ্যাত সেতার বাদক রবীশংকর ও নৃত্যশিল্পী উদয় শংকর ভ্রাতৃদ্বয়ের জন্মস্থান, কিংবদন্তি চিত্রনায়িকা সুচিত্রা সেনের কৈশোর স্মৃতিবিজড়িত দৌহিত্র ভবানী সেনের বসতবাড়ী এবং সেখানে রক্ষিত কয়েক শ’ বছরের পুরনো ২০০ মণ ওজনের পিতলের রথমন্দির। প্রায় ২ কিলোমিটার পূর্ব-পশ্চিমে নবগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত শুকতাইল গ্রামে হাজার বছরের স্থাপত্য নিদর্শন শুকতাইল মঠ, যা প্রায় ১৭শ’ বছর পূর্বে সম্রাট অশোকের শাসনামলে নির্মিত বলে লোকমুখে প্রচলিত আছে। এছাড়া ৩০ কিলোমিটার পশ্চিমে নড়াইল জেলা শহরের মাছিমদিয়া গ্রামে বরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের বসতবাড়ি। সেখানে তিনি শিশুদের জন্য নিজহাতে গড়েছেন শিশুস্বর্গ। শিল্পীর মৃত্যুর পর নিজহাতে আঁকা মূল্যবান ছবিগুলোসহ তাঁর শিল্পকর্ম ও ব্যবহার্য জিনিসপত্র সেখানে সংরক্ষিত রয়েছে এবং সেজন্য সরকারীভাবে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা। এর পাশেই রয়েছে চিত্রা নদীতে জমিদারের স্মৃতিবিজড়িত বাঁধাঘাট, যা অনায়াসেই পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে। এই নড়াইলেই ছড়িয়ে রয়েছে কবিয়াল বিজয় সরকারের অসংখ্য স্মৃতি। অরুনিমায় বেড়াতে গেলে আশপাশের নিদর্শনগুলোও চোখ এড়ায় না পর্যটকদের। রংপুরের ভিন্নজগতের কথাই ধরা যাকÑ পৃথিবীর বাইরে নয়, এ জগত পৃথিবীর ভেতরেই; নাম তার ভিন্নজগত। শহর ছাড়িয়ে ১২ কিলোমিটার দূরে গঙ্গাচড়া উপজেলার খলেয়া গঞ্জিপুরে এর অবস্থান। সবুজ, শ্যামল, মায়াময় এ স্থানটিতে না গেলে বোঝা যায় না, কতটা আকর্ষণীয় এই ভিন্নজগত; যা বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। রংপুরের ভ্রমণ ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ভিন্নজগত অন্যতম। এটি রংপুরের সবচেয়ে বড় পিকনিক স্পট ও পর্যটনকেন্দ্র। বিশ্বের সপ্তমাশ্চর্যের মধ্যে আগ্রার তাজমহল, মিসরের পিরামিড, চীনের মহাপ্রাচীর, কিংবা ফ্রান্সের আইফেল টাওয়ার একসঙ্গে দেখার সুযোগ, সামর্থ্য হয়ত সবার হবে না। তবে সপ্তমাশ্চর্যের সবই একসঙ্গে দেখার সুযোগ রয়েছে ‘ভিন্নজগতে’। সবুজে ঘেরা এ পার্কটিতে রয়েছে লোকজ সংস্কৃতির ‘সোনার তরী’ কমিউনিটি সেন্টার, তিন তারকামানের রেস্ট হাউস ‘ড্রিম প্যালেস’ ও ‘রয়েল প্যালেস’, কারুকাজ খচিত মসজিদ। প্রবেশ পথে স্বাগত জানাতে প্রাগৈতিহাসিক যুগের দানবাকৃতির প্রাণী ডাইনোসর নির্মাণ করা হয়েছে কনক্রিটে। আকারে এবং প্রকারে যা বৈচিত্র্যময়। মনেই হবে এত ভয়ঙ্কর, সুন্দর। প্রবেশের পর দর্শনার্থীরা হারিয়ে যাবেন গ্রহ-নক্ষত্রের ভিড়ে। জানতে পারবেন ‘মহাবিস্ফোরণ’ এর মাধ্যমে পৃথিবী সৃষ্টির ইতিহাস। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য এবং আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে বেসরকারীভাবে গড়ে ওঠা ভিন্নজগতেও রয়েছে পাখিদের অভয়ারণ্য, শপিংমল, ৫০০ আসনবিশিষ্ট আধুনিক কনফারেন্স কেন্দ্র স্কিল টেস্ট রোবট জোন ও সুইমিংপুল। আরও রয়েছেÑ শিশু-কিশোরদের জন্য শিশুকানন, মেরিগো রাউন্ড, হেলিকপ্টার ফ্লাইজোন, নাগরদোলা, ক্যাঙ্গারু মুভিং, স্পাইডার জোন, বাম্পার কার, রেসিং হর্স, সি-প্যারাডাইস, মকি ট্রেন, জলতরঙ্গ, থ্রিডি মুভি, বরফের দেশ, স্পেস জার্নি, শাপলা চত্বর। রয়েছে বিশাল আকৃতির নিজস্ব লেকে নৌ-ভ্রমণের ব্যবস্থা। এখানে একই সঙ্গে অন্তত ৫শ’টি পৃথক দলের পিকনিক করার ব্যবস্থা রয়েছে। এ পার্কে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ‘মুক্ত বিহঙ্গ’। ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়ে তাদের স্মরণীয় করে রাখতে নির্মাণ করা হয়েছে তাদের আবক্ষ ভাস্কর্য। প্রত্যেক ভাস্কর্যের নিচে লেখা রয়েছে তাদের নাম। বাংলার লোকজ সংস্কৃতিকে তুলে ধরার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ‘আজব গুহা’; যেখানে গ্রামবাংলার গরুর গাড়ি, বর-বধূসহ বিভিন্ন প্রতিকৃতি রয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা। সেখানে রয়েছে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন পশুপাখি। পার্কটির সীমানার ভেতরে চারপাশজুড়ে রয়েছে বিশাল লেক, আর লেকের মাঝে বনায়ন করা হয়েছে। ভিন্নজগতে দেশী-বিদেশী হাজারও রকমের গাছ আছে। যেখানে শোনা যায় নানান জাতের পাখির কিচিরমিচির। লেকের পরিষ্কার পানিতে খেলা করে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। লেকের পাশ দিয়ে ঘুরতে ঘুরতেই চোখে পড়ে মাছ ধরার জন্য ওতপেতে থাকা মাছরাঙা। সর্বউত্তরে রয়েছে তেঁতুলিয়া। দেশের শেষপ্রান্তও বলা চলে। এখানে মন ভরে যাবে হিমালয়ের সৌন্দর্য দর্শনে। পাহাড়ে সাদা শুভ্র মেঘও দেখতে এত সুন্দর হয়। আজকের তেঁতুলিয়া অবশ্য সেজেছে আরও নানান সাজে। সমতল ভূমির চোখজুড়ানো মনোরম চা বাগান আর মহানন্দার পাড়ে বসে সকালের ঘুম জড়ানো চোখে চায়ে চুমুক দিতে দিতে সু-বিশাল কাঞ্চন জঙ্ঘার মোহময় সৌন্দর্য উপভোগ করতে একটু বড় ছুটিতে বেড়াতে যেতে পারেন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। ভারত সীমান্ত ঘেঁষা এই তেঁতুলিয়ার দুই পাশে চা বাগান, সবুজ ধানক্ষেত আর ভারতীয় সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার সঙ্গে বৈদ্যুতিক আলোয় রাতের রোমাঞ্চকর অনুভূতিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে বেশ ভাল লাগবে। ঘুরতে ঘুরতে যদি ক্লান্তি এসে যায় তবে জিড়িয়ে নিতে পারেন করতোয়া আর ডাহুক নদীর পাড়ে। যারা দু’চোখ ভরে জলমাটি প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে চান, তাদের জন্য করতোয়া আর ডাহুকের পাড়ের কি আর কোন বিকল্প আছে। উঁচু নিচু সবুজে ঘেরা টিলা আর পাহাড় তার গাঁয়ে সারি সারি চা গাছ। চা বাগানের কথা উঠলেই এমন দৃশ্য চোখে ভাসে। কিন্তু সমতলের চা বাগান দেখলে চোখে ধাঁধা লেগে যাবে আপনার। দেশের সর্বউত্তরের এ উপজেলায় গড়ে উঠেছে চায়ের এমন প্রাণ জুড়ানো সবুজ বাগান। ইতোমধ্যে এ চা দেশের বাইরেও সুনাম অর্জন করেছে। পঞ্চগড়ের অধিকাংশ চা বাগান এ তেঁতুলিয়াতেই অবস্থিত। সমতল ভূমিতে সুন্দর পাকা রাস্তা। যতই এগোবেন সবুজ আপনাকে ক্রমেই মোহিত করতে থাকবে। সীমান্তের কাঁটাতারও যেন ঢাকা পড়ে যায় সবুজে। রাস্তার দুই পাশে বিস্তীর্র্ণ সবুজ। মুহূর্তেই ঢুকে যেতে পারেন সবুজের সমারোহে। দলে দলে নারীরা কাঁধে সাদা ব্যাগ ঝুলিয়ে অবিরাম চা পাতা তুলছেন। নয়নাভিরাম দৃশ্য! সন্ধ্যার পর যখন চাঁদ আসে তখন মনে হবে আপনি যেন ভেসে বেড়াচ্ছেন নীল পরীর দেশে। এখানে এলে পাবেন বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট। বাংলাদেশের ভূখ- যেখানে শেষ, সেখানে ভারতের শুরু; তার মধ্যবর্তী মাত্র কয়েক গজ জায়গা নোম্যান্স ল্যান্ড। এটিই বৈধভাবে দুই দেশের মানুষের মধ্যে আদান-প্রদান বা যোগাযোগের করিডর। এখান থেকে কয়েক গজ দূরে ভারতের ‘ফুলবাড়ী বিএসএফ ক্যাম্প’; আর মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক শহর শিলিগুড়ি। যে কারণে জায়গাটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে সম্ভাবনাময় বলা হচ্ছে। এর কারণ, এখান থেকে নেপালের কাঁকড়ভিটা সীমান্ত মাত্র ৩৫ কিলোমিটার। ভুটান ও সিকিমের সীমান্তও খুব দূরে নয়, চীনের বর্ডারও ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে। শিলিগুড়ি ১৫ মিনিটের রাস্তা। দার্জিলিং কয়েক ঘণ্টা। এখন ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রী এ পথ দিয়ে যাতায়াত করছে। সময় আর ভিসা সঙ্গে থাকলে শিলিগুড়ি, দার্জিলিং, কালিংপং, মিরিক, নেপালের কাঁকরভিটা, ভুটানের ফুয়েন্টসিলিং, কোচবিহার মহারাজার বাড়িও ঘুরে আসতে পারেন। তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোটি ঐতিহাসিক। এর নির্মাণ কৌশল অনেকটা ভিক্টোরিয়ান ধাঁচের। জানা যায়, কুচবিহারের রাজা এটি নির্মাণ করেছিলেন। তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদ একটি পিকনিক স্পট নির্মাণ করেছে। পিকনিক স্পটের পাশে আরও একটি আধুনিকমানের ডাকবাংলো নির্মাণ করা হয়েছে। পুরাতন ডাকবাংলো ঘেঁষে মহানন্দা নদী। নদীর ওপারেই ভারত। যে কারণে এই এলাকাটি সৌন্দর্যবর্ধনে বেশি ভূমিকা পালন করছে। মহানন্দা নদীর তীরঘেঁষা ভারতের সীমান্ত সংলগ্ন (অর্থাৎ নদী পার হলেই ভারত) সুউচ্চ গড়ের ওপর সাধারণ ভূমি থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিটার উঁচুতে পুরাতন ডাকবাংলো, পিকনিক স্পট ও নতুন ডাকবাংলো অবস্থিত। ডাকবাংলোর বারান্দায় দাঁড়ালে চোখে পড়বে ভারত-বাংলাদেশের অবারিত সৌন্দর্য। ওই স্থান থেকে শরত, হেমন্ত ও শীতকালে কাঞ্চন জঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। বর্ষাকালে মহানন্দা নদীতে পানি থাকলে এর দৃশ্য আরও বেশি মনোরম করে তোলে।
×