ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

সাইক্লোন পূর্বাভাসের উন্নত কৌশল

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সাইক্লোন পূর্বাভাসের উন্নত কৌশল

সাগর ও স্থলভাগের ওপরকার আবহাওয়ার বিশেষ করে সাইক্লোন বা নিম্নচাপের পূর্বাভাস দেয়ার এক উন্নততর উপায় বের হয়েছে। সেটা অবশ্য আনকোরা নতুন কিছু নয় বরং পুরনো প্রযুক্তিরই এক নতুন ও উন্নতকর সংস্করণ। এই উন্নত সংস্করণের কাজটা করেছেন উইসকনসিন কেডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা টনি উইমার্স ও ক্রিস ভেলডেন প্রায় এক দশক আগে যে এলগোরিদম বা পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন তার ভিত্তিতে ওই বিজ্ঞানীরা সেটির নতুন সংস্করণ এনে এর সক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়েছেন। উইমার্স ও ভেলডেনের উদ্ভাবিত এলগোরিদমের কাজ ছিল পৃথিবীর পৃষ্ঠাদেশ থেকে বায়ুম-লে অতি শীর্ষভাগ পর্যন্ত আর্দ্র বায়ুর মধ্যে জলীয়বাষ্পের মোট পরিমাণ (টোটাল প্রিসপিটেবল ওয়াটার বা টিপিডব্লিউ) নির্ণয়ের জন্য কৃত্রিম উপগ্রহগুলোকে অধিকতর সক্ষম করে তোলা। সেই এলগোরিদম দিয়ে শুধু সাগরের উপরিভাগের টিপিডব্লিউ পরিমাপ করা যেত। এখন নতুন উন্নততর সংস্করণে স্থলভাগের ওপরকার বায়ুম-লেরও টিপিডব্লিউর মাত্রা নির্ণয় করা যাবে। টিপিডব্লিউর মাত্রা নির্ণয় করে এখন আবহাওয়ার পূর্বাভাসদানকারীরা জানতে পারেন আর্দ্র বায়ুর কু-লীতে কি পরিমাণ আর্দ্রতা থাকলে বৃষ্টি বা তুষারপাত হতে পারে। আর্দ্র ও উষ্ণম-লীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ে এবং আবহাওয়ার অন্যান্য গুরুতর অবস্থার পূর্বাভাস দেয়া ও সেগুলো কোথায় কি অবস্থায় আছে তা নির্ণয় করার এটা হলো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ এক পদ্ধতি। ২০০৩ সালে উইমার্স ও ভেলডেন মেরু অঞ্চলের ওপরের মহাশূন্যে প্রদক্ষিণরত স্যাটেলাইটের ইতোপূর্বে সংগৃহীত টিপিউডব্লিউ ড্যাটায় সময় শূন্যতা পূরণের চেষ্টা করেন। স্যাটেলাইটগুলো প্রতিটি এক থেকে ১৮ ঘণ্টায় ভূপৃষ্ঠের ওপরের বিপুল পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। উইমার্স ও ভেলডেন চাইলেন এমন এক এলগোরিদম তৈরি করতে, যার বদৌলতে প্রচলিত একটি কৌশল টিপিডব্লিউ ড্যাটার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। কিন্তু কৌশলটি কেবলমাত্র সমতল ক্ষেত্রেও বেলায়ও ব্যবহার করা গেছে। টিপিডব্লিউর স্তম্ভ বা স্তূপের মতো পরিমাণগত অবস্থার ক্ষেত্রে নয়। উইমার্স ও ভেলডেনের এই নবউদ্ভাবিত এলগোরিদম ২০০৭ সালে প্রথম চালু করা হয়। এলগোরিদমের নাম দেয়া হয় মিমিক টিপিডব্লিউ। তখন থেকেই এটা উচ্চম-লীয় আবহাওয়া বিশ্লেষণের অবিচ্ছেদ্য হাতিয়ারে পরিণত হয়। তার পরও এলগোরিদমটির আরও উৎকর্ষ সাধনের অবকাশা ছিল। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলের আবহাওয়ার আরও ভালভাবে পূর্বাভাস দেয়ার সুযোগ ছিল। তথাপি এটা যে কাজ করবে প্রথম দিকে তা ভাবেননি উইমার্স যিনি ছিলেন প্রকল্পটির প্রধান। মেরু অঞ্চলের ওপর কম প্রদক্ষিণরত কিছু কিছু কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীকে স্ক্যান করে শঙ্কু বা মোচাকার বস্তুর প্যাটার্নে ড্যাটা সংগ্রহ করে থাকে। সুতরাং পৃথিবীজুড়ে সর্বক্ষণ তাদের অবস্থান পরিবর্তন ঘটে। চললেও ড্যাটা সংগ্রহের কাজটা সেই একই কৌণিক অবস্থান থেকে হয়। এতে করে ওগুলো অতি নিখুঁতভাবে পরিমাপের কাজটা করতে পারে। তবে যে এলগোরিদমের সাহায্যে যেটা করা হয় তার একটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এটা টিপিডব্লিউ তথ্য সংগ্রহের কাজটাকে সমুদ্রের মতো অভিন্ন সমতলের ক্ষেত্রেই কেবল সীমিত রাখে। স্থলভাগ সে তুলনায় যথেষ্ট অসমতল। বিশেষ করে যে সব জায়গায় ভূপ্রকৃতির মধ্যে তারতম্য আছে সেখানে তো এই এলগোরিদম চলতে পারে না। ইউএস নেভাল রিসার্চ ল্যাবরেটরির মতো ব্যবহারকারীদের কাছে এই এলগোরিদম যথেষ্ট কার্যোপযোগী ছিল। এ ল্যাবরেটরি এবং অন্যান্য সেসব সংস্থা সাধারণভাবে সাগরের আবহাওয়া এবং উষ্ণম-লীয় সামুদ্রিক ঝড়ের পরিবেশের পূর্বাভাস দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী তাদের কাছে মিমিক টিপিডব্লিউ নামক এলগোরিদমটির বছরও ছিল। উইমার্স ও ভেলডেন এর এমন এক বিকল্প সমাধান খুঁজে বের করার আশা করলেন যা স্থলভাগের ক্ষেত্রেও লক্ষ্য করা যাবে। শেষে গত বছর তারা সেই সুযোগটি পেয়ে গেলেন। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক এ্যান্ড এই মোসক্ষেরিক এডমিনিস্ট্রেশন (নোয়া) তাদের মাইক্রোওয়েভ স্ক্র্যানিং স্যাটেলাইটগুলো থেকে টিপিডব্লিউর তথ্য রিট্রাইভাল ব্যবস্থায় লক্ষণীয় উন্নতি ঘটায়। ব্যবস্থাটির নাম দেয়া হয় মাইক্রোওয়েভ ইন্টিগ্রেটেড রিট্রাইভাল সিস্টেম এমআইআরএস)। সামগ্রিকভাবে পিছু উচ্চতায় থাকা এই স্যাটেলাইটগুলো মোচাকৃতির স্ক্যানিং স্যাটেলাইটগুলোর তুলনায় অনেক বিশদ তথ্য উপাত্ত লাগাতে সক্ষম। উইমার্স বলেন এটি পৃথিবীর পূর্ণাঙ্গ বায়ুম-লের তথ্য রিট্রাইভাল ব্যবস্থা বিধায় তা স্থলভাগসহ সমস্ত পৃষ্ঠদেশে কাজ করতে সক্ষম। প্রকৃতপক্ষে তিনি ও ভেলডেন এমআইআরএস এলগোরিদম কিছু পরিবর্তন ঘটান। নতুন কৌশলটিকে তারা মরফোলজিক্যাল কম্পোজিটিং বলে উল্লেখ করেন যা স্থল, জলরাশি সবকিছুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। এখানে বায়ুম-লে মেঘমালার বুকে জলীয়বাষ্পের গতিটাই মূলত বিশ্লেষণ করা হয়। মিমিক টিপিডব্লিউর নতুন সংস্কারটি এখনও পুরোপুরি চালু না হলেও কেস স্টাডির জন্য ইতোমধ্যে বেশ সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে। সূত্র : ন্যাশনাল জিওগ্রাফি
×