ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাটিং ব্যর্থতা, দুঃসময়ে মুশফিক

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ব্যাটিং ব্যর্থতা, দুঃসময়ে মুশফিক

মোঃ মামুন রশীদ ॥ সবার কাছ থেকে সমান প্রত্যাশা থাকে না, কারও কারও কাছে চাওয়া এবং পাওয়ার পর্যায়টা থাকে অনেক উঁচুতে। সেখানেই কিছুটা প্রশ্ন বাংলাদেশের ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ নাম পাওয়া মুশফিকুর রহীমের দিকে। তিন ফরমেট মিলিয়ে বাংলাদেশের এখন সেরা ব্যাটসম্যানদের বিবেচনা করলে তিনজনের নামই আগে চলে আসে। সর্বাধিক রান করার তালিকায় ক্রমানুসারে নাম তিনটি তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহীমের। কিন্তু টানা ১৬ আন্তর্জাতিক ম্যাচে মুশফিক ১৪ ইনিংস ব্যাট করে ১৩.১৮ গড়ে করতে পেরেছেন মাত্র ১৪৫ রান! নেই কোন অর্ধশতকও। দীর্ঘ সাড়ে দশ মাস পর বাংলাদেশ দল ওয়ানডে খেলতে নামে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে। গত বছরটা ওয়ানডেতে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন মুশফিক। কিন্তু প্রথম ওয়ানডেতে এই টানা ব্যর্থতারই ছাপ দেখা গেছে, মাত্র ৬ রান করে ফিরে গেছেন মুশফিক। তাই দারুণ এক অর্জন ছোঁয়া হয়নি। তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে ওয়ানডেতে ৪ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করার জন্য আর মাত্র ৭৪ রান প্রয়োজন মিডলঅর্ডারের এ নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানের। আফগানদের বিরুদ্ধে সিরিজের বাকি দুই ওয়ানডেতে সেটা পারবেন মুশফিক? ২০০৬ সালে ওয়ানডে অভিষেক হওয়ার পর এখন পর্যন্ত সেরা সময়টা গত বছরই কাটিয়েছেন মুশফিক। বাংলাদেশ দলের ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে সাফল্যময় বছরটিতে মুশফিকও ছিলেন দুর্দান্তÑ ৪টি অর্ধশতক ছাড়াও দুটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। ১৮ ওয়ানডের ১৬ ইনিংসে ব্যাট করেছেন- ৫১.১৩ গড়ে করেছেন ৭৬৭ রান। আর কোন একটি বছর এত বেশি গড়ে এত রান করতে পারেননি মুশফিক। রবিবার আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে খেলতে নামার আগে বাংলাদেশ সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছিল গত বছর ১১ নবেম্বর। সে ম্যাচে ২৮ রান করেছিলেন মুশফিক। তখন থেকেই সময়টা খারাপ মুশফিকের? না, খরাটা শুরু হয়েছিল আগেই। টেস্ট ক্রিকেটে দারুণভাবে ব্যর্থ হচ্ছিলেন একের পর এক। ১১ টেস্ট ইনিংসে ব্যর্থতার পর অবশেষে গতবছর জুলাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে একটি অর্ধশতক হাঁকাতে পেরেছিলেন। আর জিম্বাবুইয়ের বিরদ্ধে তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথমটিতে ১০৭ রানের একটি ঝকঝকে ইনিংস খেলে রানে ভালভাবে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু পরের দুই ম্যাচে তিনি ২১ ও ২৮ রান করেন। এরপর আর কোন ওয়ানডে কিংবা টেস্ট খেলেনি বাংলাদেশ দল। খেলেছে শুধু টি২০। টি২০ ক্রিকেটের ক্ষেত্রেও তামিম-সাকিবরা দাবি করছিলেন এ ফরমেটে দেশের সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিক। আবার পেশাদারিত্বের দারুণ নমুনা দেখা যায় তার মধ্যেই। অনুশীলনে কঠোর পরিশ্রম করেন, সবার আগে প্র্যাকটিসে এসে ফিরে যান সবার পরে। কিন্তু সেসবের লেশমাত্র দেখা যায়নি প্রায় এক বছর তার ব্যাটিংয়ে। এর মধ্যে তিনি ১৬ টি২০ খেলেছেন, ১৪ ইনিংস ব্যাট করে ১৩.১৮ গড়ে করতে পেরেছেন মাত্র ১৪৫ রান! অথচ এর মধ্যে টি২০ ক্রিকেটেও বাংলাদেশ দল দুরন্ত হয়ে উঠেছে। সেখানে ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ মুশফিকের ক্ল্যাসিক ব্যাটিং কোথায়? এই ইনিংসগুলোর মধ্যে ৭টিতেই তিনি দুই অঙ্কের কোঠায় (১০ রান) পৌঁছুতে পারেননি। দুটি সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ২৪ ও ২৬ রানের! ১৩ নবেম্বর ২০১৫ থেকে ২৬ মার্চ ২০১৬ পর্যন্ত টি২০ খেলা মুশফিকের ইনিংসগুলোর চেহারা এমনটাই বেহাল! কি হলো মুশফিকের? আফগানদের বিরুদ্ধে প্রথম ওয়ানডে খেলতে নামার আগে আর মাত্র ৮০ রান প্রয়োজন ছিল তার তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে ৪ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁতে। কিন্তু ইনিংসের ৪১তম ওভারে নেমে ৪৩তম ওভারেই সাজঘরে ফিরে গেলেন ঠা-া মাথার নির্ভরযোগ্য এ মিডলঅর্ডার! মাত্র ১১ মিনিট ক্রিজে থেকে ৬ রান করেই বিদায় নিলেন। ফলে এখনও ৭৪ রান দূরে তিনি তামিম-সাকিবের পাশাপাশি পৌঁছুনো থেকে। ওয়ানডেতে তামিম ১৫৪ ম্যাচে ৪৭৯৩ রান করে সবার ওপরে, সাকিব ১৫৮ ম্যাচে ৪৪৪৬ রান নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে। আর মুশফিক ১৫৯ ম্যাচে করেছেন ৩৯২৬ রান। ওয়ানডে ক্রিকেটের বিবেচনায় হয়তো মুশফিক এখনও ব্যর্থ না। কারণ অধিনায়ক মাশরাফিও বললেন, ‘আপনি যদি শেষ দেড় বছরের পরিসংখ্যান দেখেন তাহলে দেখবেন মুশফিকের গড় রান ৪০-৪৯। ৫০ গড়ে যে রান করেছে তাকে বলা ঠিক কিনা সে রানের মধ্যে নাই! আমার কাছে মনে হয় না। আমার কাছে মনে হয় কোচ এবং মুশফিক খুব ভাল জানে ওদের কি পরিকল্পনা। ও নিজেও ওর ব্যাটিং নিয়ে অনেক কাজ করে। খেলোয়াড় ও সতীর্থ হিসেবে ওর প্রতি আমার অগাধ আস্থা।’ তবে সাম্প্রতিক সময়ে মিডলঅর্ডারদের রান করার সুযোগ কমে গেছে। দেশের টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানরা তাই সুযোগ পাচ্ছেন না বড় রান করার। এ বিষয়ে সাকিব বলেন, ‘শেষ এক বছরে দল এত ভাল খেলছে যে ব্যাটিংয়ের সুযোগ হচ্ছে না খুব একটা। টপে ওরা এত রান করছে! ওরা এত ভাল খেলছে যে ৩০-৪০ ছাড়া বেশি করার সুযোগ নাই।’ তাহলে কি মুশফিকের চার হাজার রানের অপেক্ষা আরও বাড়বে? ২০১৪ সালের ২১ নবেম্বর জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ৩ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছিলেন মুশফিক। কিন্তু বাকি ১ হাজার রান করতে দীর্ঘ অপেক্ষাই করতে হচ্ছে ৬ নম্বরে ব্যাট করা এ টেস্ট অধিনায়ককে। বাকি দুই ওয়ানডেতে ব্যাটে খরা যাওয়া মুশফিক কি পারবেন হাতছানি দেয়া মাইলফলকটা ছুঁতে?
×