ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আজ জিতলেই সিরিজ বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

আজ জিতলেই সিরিজ বাংলাদেশের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ প্রথম ওয়ানডে জেতার পর আফগানিস্তানের বিপক্ষে আজ দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বেলা আড়াইটায় ম্যাচটি শুরু হবে। ম্যাচটি জিতলেই সিরিজ বাংলাদেশের হয়ে যাবে। এক ম্যাচ হাতে রেখেই তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ জিতে নেবে বাংলাদেশ। ম্যাচটির আগে কঠোর অনুশীলনই করেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। ব্যাটসম্যানরা ব্যাটিং কোচ থিলান সামারাবিরার তত্ত্বাবধানে ইনডোরে ব্যাটিং অনুশীলন সারেন। পেসাররা পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালসের তত্ত্বাবধানে লাইন ও লেন্থ বজায় রেখে গতির ঝড় তোলেন। আরেকদিকে মঙ্গলবার দুপুরে অনুশীলন শুরু হতে কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে সেন্ট্রাল উইকেটে ইমরুল কায়েস ও সৌম্য সরকারকে নিয়ে নেমে পড়েন। স্লিপে দুইজনকে দাঁড় করিয়ে ক্যাচ ধরার জন্য প্রস্তুত করতে লাগলেন। প্রথম ওয়ানডেতে হাত থেকে ক্যাচ ফেলে দেয়া ইমরুল ক্যাচ প্র্যাকটিসে দুর্দান্তভাবে ক্যাচগুলো ধরলেও সৌম্যর মনোযোগ যেন ক্যাচ ধরাতে ছিল না। তাই বারবার মিস করতে লাগলেন। একবারতো ব্যাটসম্যান হয়ে গিয়ে ইমরুল ও সৌম্যকে বারবার ক্যাচ দেয়া হাতুরাসিংহের মেজাজই খারাপ হয়ে গেল। তা বোঝাই গেল, যখন সৌম্যর হাত থেকে একটি ক্যাচ মিস হতেই হাতুরাসিংহে ব্যাটটি দিয়ে উইকেটে জোরে আঘাত করে বসলেন। এমনিতেই ২০১৬ সাল জুড়েই ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ হচ্ছেন সৌম্য। বছরে ১৭টি ম্যাচ খেলে একটিতেও অর্ধশতক নেই। বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন। আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতেও রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফিরেছেন। আবার অনুশীলনেও ক্যাচ মিস করছেন। হাতুরাসিংহের মেজাজ খারাপের কারণও হয়ে উঠছেন। তাহলেতো সৌম্যকে আজ বসিয়েও রাখতে পারেন হাতুরাসিংহে। সেই সম্ভাবনাও আছে। প্রথম ওয়ানডেতে ব্যাটসম্যানের সঙ্গে একজন স্পিনারের অভাববোধও হয়েছে। সেটি বেশি হয়েছে আসলে ৭ নম্বর ব্যাটসম্যান থেকেই। সেই স্থানেই একজনকে আজ দেখা যেতে পারে। মঙ্গলবার নাসির হোসেন ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ইনডোরে পুরোদমে ব্যাটিং করে গেলেন। হতে পারে সৌম্যকে বসিয়ে নাসির অথবা সৈকতের যে কোন একজনকে খেলাতে পারেন কোচ। যে করেই হোক, প্রথম ওয়ানডের মতো কষ্টের জয় যে আর চান না কেউই। আজ জিতলেই সিরিজ জয় হয়ে যাবে। তাই আজই সেই অর্জনটি চান সবাই। অধিনায়ক মাশরাফি যেমন বলেছেন, ‘প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। তবে দ্বিতীয় ম্যাচটি জিতলে যেহেতু সিরিজ জয় হয়ে যাবে, তাই ম্যাচটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন হবে। আমরা চাইব দ্বিতীয় ম্যাচেই যেন সেটা হয়।’ আজ সিরিজ জয় নিশ্চিত করে নিতে পারলে টানা ষষ্ঠ দ্বিপক্ষীয় সিরিজ জিতবে বাংলাদেশ। ২০১৪ সালের নবেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত কোন দ্বিপক্ষীয় সিরিজ হারেনি বাংলাদেশ। ২০১৪ সালের নবেম্বরে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজ জেতার পর গতবছর পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুইয়েকে সিরিজে হারায় মাশরাফিবাহিনী। টানা পঞ্চম দ্বিপক্ষীয় সিরিজ জিতে নেয়। এবার আফগানদের পালা। শুধু সিরিজ জয়ই বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন হবে এমনটি নয়। সঙ্গে আরও একটি বড় অর্জন আছে। ম্যাচটি জিতে গেলে শততম ওয়ানডে জয়ও হয়ে যাবে বাংলাদেশের। এরই মধ্যে ৩১৩ ম্যাচ খেলে ২১০ হার ও ৪টি ম্যাচের রেজাল্ট না হওয়ার বিপরীতে ৯৯টি জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। আজ জিতলেই ওয়ানডেতে শততম জয় মিলে যাবে। না জিতলেও পরের ম্যাচে সুযোগ থাকবে। তবে আজই সেই অর্জনগুলো মুঠোয় ভরে নিতে চান মাশরাফি। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ৬১টি ওয়ানডে সিরিজ খেলে। ২০টি সিরিজে জিতে। ২০০৫ সালে জিম্বাবুইয়েকে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়ে সিরিজ জেতা শুরু করে বাংলাদেশ। এরপর ২০০৬ সালে দুইবার কেনিয়াকে, জিম্বাবুইয়েকে আরও দুইবার ও স্কটল্যান্ডকে একবার হারায়। ২০০৮ সালে আয়ারল্যান্ডকে সিরিজে হারায়। ২০০৯ সালে আবার জিম্বাবুইয়েকে তিনবার সিরিজে হারানোর সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও একবার সিরিজে হারায়। ২০১০ সালে আবার জিম্বাবুইয়েকে একবার সিরিজে হারায়। এবার নিউজিল্যান্ডকে সিরিজে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। ২০১২ সালে আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সিরিজে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে আবার বাংলাদেশের কাছে সিরিজে বধ হয় নিউজিল্যান্ড। ২০১৪ সালের নবেম্বর থেকেতো অন্য এক বাংলাদেশকেই চিনেছে বিশ্ব ক্রিকেট। এরমধ্যে জিম্বাবুইয়েকে দুইবার ও পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকাকে একবার করে হারিয়ে টানা পাঁচটি ওয়ানডে সিরিজ জিতে নিয়েছে। জিম্বাবুইয়েকে সবচেয়ে বেশি ৯টি সিরিজে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড, কেনিয়াকে দুইবার করে, পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ডকে একবার করে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে হারায় বাংলাদেশ। এবার আফগানিস্তানকে হারাতে পারলে টানা ষষ্ঠ দ্বিপক্ষীয় সিরিজ জয় হয়ে যাবে। আজকের ম্যাচটি জিতলে আবার শততম ওয়ানডে জয়ও হয়ে যাবে। টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি জয় পায় বাংলাদেশ। ৩৯টি ম্যাচে জিতে। এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮টিতে জিতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জিতে ৭টি ম্যাচে। ভারতের বিপক্ষে ৫টি, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪টি করে, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২টি করে ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ। শুধু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে কার্ডিফে ২০০৫ সালে একটি ম্যাচ জিতেছিল, সেই জয়ের পর আর অসিদের বিপক্ষে জয় ধরা দেয়নি। টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর বাইরে কেনিয়ার বিপক্ষে ৮টি, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৫টি, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৪টি, আফগানিস্তান ও বারমুডার বিপক্ষে ২টি করে এবং কানাডা, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও হল্যান্ডের বিপক্ষে ১টি করে ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ। আজ জিতলেই একসঙ্গে অনেক অর্জন মিলে যাবে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবার সিরিজ খেলেই তা জিতবে বাংলাদেশ। এক ম্যাচ হাতে রেখেই তিন ম্যাচের সিরিজ জিতে নেবে। আফগানিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগও থাকবে। টানা ষষ্ঠ দ্বিপক্ষীয় সিরিজ জয়ের সঙ্গে শততম ওয়ানডে জয়ও হয়ে যাবে। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা সবার আগে ম্যাচ জয়টাকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন। আজ জিতলেই যে সিরিজ জয় হয়ে যাবে। বাকি অর্জনগুলোতো তখন এমনিতেই মুঠোবন্দী হয়ে যাবে।
×