ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জুডিসিয়াল কর্মকর্তাদের আবাসিক সমস্যা সমাধানে ১শ’ ১৪ ফ্ল্যাট

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

জুডিসিয়াল কর্মকর্তাদের আবাসিক সমস্যা সমাধানে ১শ’ ১৪ ফ্ল্যাট

আনোয়ার রোজেন ॥ বিচার বিভাগীয় (জুডিসিয়াল) কর্মকর্তাদের আবাসন সমস্যার নিরসন হচ্ছে। কর্মকর্তাদের পূর্ণ আবাসিক সুবিধা দিতে বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। রাজধানীর আজিমপুরে সরকারী কলোনির ৪৩ ও ৪৪ নম্বর ভবন ভেঙ্গে সেখানে একটি ২০ তলাবিশিষ্ট ভবন তৈরি করা হবে। ছয়টি ইউনিটে মোট ফ্ল্যাট সংখ্যা হবে ১১৪টি। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন হবে সাড়ে বারো শ’ বর্গফুট। এ লক্ষ্যে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৯৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। ‘ঢাকার আজিমপুর জুডিসিয়াল কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ’ শীর্ষক এই প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে গণপূর্ত অধিদফতর। পরিকল্পনা কমিশন এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, সরকারী কর্মচারীদের আবাসন সঙ্কট নিরসনের জন্য দুই বছর আগে মতিঝিল ও আজিমপুর কলোনিতে একাধিক বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এজন্য ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর এ সংক্রান্ত পৃথক দুটি প্রকল্পে অনুমোদনও দেয় একনেক। তবে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা এই সুবিধার আওতায় ছিলেন না। এদিকে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিরাপদ পরিবেশে বাস করার মতো সরকারী কোন আবাসিক এলাকাও নেই। ফলে সরকারী বাসা না পেয়ে বেশির ভাগ কর্মকর্তাকেই থাকতে হচ্ছে ভাড়া বাড়িতে। এতে সরকারের অনেক অর্থ ব্যয় হচ্ছে। পাশাপাশি কর্মকর্তাদের যথাযথ নিরাপত্তা প্রদান করাও সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া সামাজিকভাবে নানা সমস্যার সম্মুখীন হওয়ায় তাদের কর্মদক্ষতাও হ্রাস পাচ্ছে। তাদের এ আবাসিক সমস্যা নিরসনের জন্য আজিমপুর কলোনির বিদ্যমান দুইটি চারতলা ভবন (৪৩ ও ৪৪ নম্বর) ভবন ভেঙ্গে একই জায়গায় একটি ২০ তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, রাজধানীতে আবাসিক ভবন নির্মাণে জায়গার সঙ্কট রয়েছে। তাছাড়া সম্ভাব্য আবাসন উপযুক্ত এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয়ও অনেক বেশি। তাই অল্প ব্যবহৃত জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করে সকলের আবাসন সমস্যা লাঘব করা প্রয়োজন। আজিমপুর সরকারী কলোনিতে ছোট আয়তনের জায়গা রয়েছে, যেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ সম্ভব। বিদ্যমান চারতলা ভবন দুটি ভেঙ্গে ২০ তলা করার মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের আবাসিক সমস্যা নিরসনের জন্য এ স্থানটিকে প্রকল্প এলাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য প্রয়োজনীয় ফিজিবিলিটি স্টাডিও (প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই) ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। সূত্র আরও জানায়, ২০তলা আবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য এই প্রকল্পটি ১০০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রায় দুই বছর আগে প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাব মতে প্রকল্পের কাজ শুরুর কথা ছিল ২০১৫ সালের জুলাই থেকে। কিন্তু সেসময় নানা জটিলতায় প্রকল্পের কাজ আর এগুয়োনি। অবশেষে চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি প্রকল্পটির উপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আনা সাপেক্ষে প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়। ওই পিইসি সভার সিদ্ধান্তের আলোকে বর্তমানে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। পুনর্গঠিত প্রকল্প ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৯৬ কোটি ২১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। নতুন করে মেয়াদকালও নির্ধারণ করা হয়েছে ২০১৬ সালের জুলাই হতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ সরকারী অর্থে (জিওবি) বাস্তবায়ন করা হবে। সূত্র জানায়, প্রকল্পের প্রধান প্রধান কার্যক্রমের আওতায় বেসমেন্টসহ ২০তলা ভিত্তির ওপর ২০ তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। ছয়টি ইউনিটে নির্মাণ করা হবে ১ হাজার ২৫০ বর্গফুট আয়তনের ১১৪টি ফ্ল্যাট। থাকবে ১৬ হাজার ৬৮৩ দশমিক ৯ বর্গমিটার অভ্যন্তরীণ পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা ও ১৬ হাজার ৬৮৩ দশমিক ৯ বর্গমিটার বহিঃবিদ্যুতায়ন ব্যবস্থা। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ২২৬ দশমিক ৮৩ রানিং মিটার সীমানা দেয়াল নির্মাণ, ১ লাখ গ্যালন বহিঃপানি সরবরাহ ব্যবস্থা, ২৩২ দশমিক ৬২ রানিং মিটার কম্পাউন্ড ড্রেন ও এ্যাপরণ নির্মাণ এবং ২টি মোটরসাইকেল ক্রয় ইত্যাদিসহ আনুষঙ্গিক কাজ করা হবে। প্রকল্প বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য খোরশেদ আলম চৌধুরী মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর আবাসনের সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা পরোক্ষভাবে তাদের কার্যক্রমে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে। তাছাড়া ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনুযায়ী আবাসিক সঙ্কট নিরসন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির সঙ্গে প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও প্রস্তাবিত কার্যক্রম সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।
×