ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বই সংগ্রহ জরুরী যত্ন

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বই সংগ্রহ জরুরী যত্ন

মানুষের যত ভাল গুণ বা অভ্যাস আছে, বই পড়ার অভ্যাস তার মধ্যে অন্যতম। বই পড়ার অভ্যাস হয় সেই ছোট্টবেলায় যখন প্রথমবার গড় গড় করে পড়তে শেখে ঠিক তখন থেকেই। একজনের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে পরিবেশ থেকে। পরিবার এবং বন্ধুবান্ধব এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা রাখে। জুলির বয়স ২০ বছর। সদ্য গ্রাজুয়েশন শেষ করে নতুন চাকরি পেয়েছে। নতুন বই কেনা ও পড়া তার একমাত্র নেশা। তার বই পড়ার অভ্যাস সেই ’৯৮/’৯৯ এর দিক থেকেই। তার বাবার এবং বড় ভাইদের ছিল বইয়ের কালেকশন। আর সেখান থেকেই নিয়মিত বই চুরি করে পড়া, সঙ্গে প্রতি বছর বই মেলায় যাওয়া, এক কথায় সেই শৈশবেই বইয়ের নেশা বীজ হিসেবে বপন করা হয়ে গিয়েছিল, আর কালে সেটাই একটা মহীরুহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বই সংগ্রহ করা নিয়ে তার কোন আফসোস নেই, খেয়ে না খেয়ে কতদিন কতভাবে পয়সা জমিয়ে বই কিনেছে তার ইয়ত্তা নেই। কেবল বই কেনার অভ্যাসের জন্য তার অন্য কোন বদভ্যাস বাসা বাঁধতে পারেনি। একসময় সে মাটির ব্যাংকে পয়সা জমাত কেবলই বই কিনবে বলে। আর সেখানে সমস্যা ছিল একটাই, সেই ছোট বেলায় বইয়ের যতœ করা হয়ে ওঠেনি। উদারহস্তে বই দিয়ে দিত মানুষকে পড়তে, আবার তাদের ভাড়া বাড়ি বলে প্রায় সময়ই বাসা পরিবর্তন করতে হতো, আর তার ছোট ভাই-বোন তো ছিলই এসব ছিঁড়ে খুঁড়ে নষ্ট করার জন্য। এ যাবত যত বই কিনেছে তার মাত্র এক-পঞ্চমাংশ রয়ে গেছে, আর বাকি সবই বিসর্জন হয়ে গেছে। এসব কারণে আজ জুলি বইয়ের যতেœ অতি সচেতন। পুরনো বই (স্কুল জীবনে) যা কিনেছে সেগুলো একটু ‘আউলাঝাউলা’ হলেও এখন যা কিনছে সবই অতি যতেœ ঠিক নবজাত শিশুর মতোন আদরে লালিত পালিত হচ্ছে। তাই যারা ব কেনেন, বই পড়েন, তাদের বইয়ের যতœও করতে জানতে হবে। আপনি আর বই কিন্তু পরস্পরের বন্ধু। বই আপনাকে যা দিচ্ছে সেটার মূল্য অপরিমেয়। তাই কৃতজ্ঞচিত্তে অন্তত আপনার এতটুকু করা কর্তব্য, যেন বইগুলো ভাল এবং সুন্দর থাকে। আর এই সামান্য যতœ করতে গেলে কিন্তু খুব বেশি সময় নষ্ট হয় না। দরকার কেবল একটুখানি ইচ্ছা, আর বইয়ের প্রতি অপরিসীম মমতা। মফিজুল ইসলাম খান বই যখন পড়বেন : # কখনও খাবার দাবার বা পানীয় আর বই একসঙ্গে নেবেন না। এটা জঘন্য একটা অভ্যাস। খেয়ে দেয়ে পরিষ্কার আর শুকনা হাতে বই ধরা উচিত। খেতে গেলে খাবারের সূক্ষ্ম কণা বইয়ের পাতায় পড়তে পারে, এটা মথ/পোকা আকর্ষণ করে, বইয়ের পাতা নষ্ট করে। # তেল, কালি, ভেজা বা ঘর্মাক্ত হাত দিয়ে বই ধরতে হয় না। এতে বইয়ের ভেতর ছত্রাক জন্মাতে পারে। # বইয়ের পাতায় শুধু আঁকাআঁকি করবেন না, শুরুর পাতায় আপনার নাম, সংগ্রহ নম্বর বা প্রয়োজনীয় তথ্য থাকতে পারে। আর শেষের পাতায় আপনি ছোট্ট একটা মন্তব্য লিখে রাখতে পারেন, কিন্তু পুরো বইতে আঁকাআঁকির অভ্যাস খুব খারাপ, এতে কাগজ দুর্বল হয়ে যায়। # বই পড়ার সময় বুকমার্ক ব্যবহার করতে পারেন, কিন্তু বেশি ভারি/ডিজাইন করা বুকমার্ক বন্ধ করে রাখা বইয়ের পেজ নষ্ট করে। # পেজ জোড়া দেয়া থাকলে স্টিলের স্কেল দিয়ে মসৃণভাবে কেটে আলাদা করে ফেলুন। অনেক সময় কোণায় বাড়তি অংশ ঝুলে থাকে, সেটাও কেটে ফেলা (ছিঁড়ে ফেলা যাবে) উচিত। # থুঁতু আঙ্গুলের ডগায় লাগিয়ে পেজ উল্টানোর অভ্যাস একেবারে রুচিহীন একটা বদভ্যাস। আপনার আর বইয়ের দুজনের স্বাস্থ্যের জন্যই ভীষণ রকম ক্ষতিকারক। # বই টেনে হিঁচড়ে নেয়া, ঝুলিয়ে নেয়া, আছাড় মারা, ছুড়ে দেয়া এসব করতে দেখি প্রায়ই, (বাইন্ডিং আর মলাট দুই-ই নষ্ট হয়), একটা ব্যাগ রাখলেই হয় কিন্তু। # বই মুড়ে/ভাঁজ করে পড়তে হয় না। এতে বাইন্ডিং আর মলাট দুই-ই নষ্ট হয়। # যেখানেই বই নেবেন, দয়া করে দু’হাতে ধরে নেয়া উচিত। এটা মুরগি না যে টেংরি ধরে ঝুলাতে ঝুলাতে নিয়ে যাবেন। # কোন বাক্য পছন্দ হলেই এক টান মেরে পাতা ছিঁড়ে নেয়া ঠিকনা, (ধারের বই আর লাইব্রেরির বই এভাবে অনেকেই নষ্ট করে) আবার লাল, নীল দাগ দিয়ে ভরে রাখাও ঠিক নয়, এ রকম অভ্যাস থাকলে অতি অবশ্যই সঙ্গে নোটবুক আর কলম রাখার অভ্যাস করুন, লিখে নিলে আপনারও সুবিধা, বইগুলোও বেঁচে যায়। # বই পড়া শেষ হয়ে গেলে বুকমার্ক সরিয়ে নেবেন। # বইয়ের পাতা মুড়ে রাখবেন না, (বিশেষ করে পেপার ব্যাক বইয়ের), চ্যাপ্টা পাতলা শক্ত কাগজের একটা বুকমার্ক ব্যবহার করা খুব কী কঠিন? বই যখন সংগ্রহ করবেন : # কাচঘেরা লক সিস্টেমের শেলফ সবচেয়ে বেস্ট। তালা না থাকলে মানুষজন আপনার বই উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার আগে দ্বিতীয়বার ভাববে না। দু’দিন অন্তর শেলফের লক খুলে বাতাস চলাচল করতে দেয়া উচিত। যদি একদম বন্ধ থাকে। # বইয়ে ধুলা জমতে দেবেন না, একদম না। নাক মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে একটা নরম ডাস্টার দিয়ে ঝাড়তে কতক্ষণ লাগে! ৩-৪ দিন পর পর অবশ্যই ঝাড়া উচিত। # একই উচ্চতার বই সিরিয়াল দিয়ে একসঙ্গে রাখবেন। বড়-ছোট মিলিয়ে রাখবেন না। # শুইয়ে একটার ওপর আরেকটা বই না রাখাই সবচেয়ে ভাল, লম্বালম্বিভাবে বইগুলোকে খাড়া করে রাখেন। এতে বইয়ের শেপ নষ্ট হবে না। # খুব বেশি চেপেচুপে বই রাখলে আকার নষ্ট হয় বইয়ের। সে জন্য কিছুটা আলগাভাবে রাখলে ভাল। # অতিরিক্ত উষ্ণ/ আর্দ্র/ বদ্ধ/ গুমোট/ অন্ধকার/ আলোকিত জায়গায় রাখা উচিত না। রাখতে হবে সবদিক অনুকূল জায়গায়। # বছরে অন্তত চার বার বই রোদে দেয়া উচিত। বর্ষাকালের আগে ও পরে এই দু’বার অবশ্যই দেয়া উচিত। # অতি আদর ভাল নয়, তাই বেশি যতœ করতে গিয়ে আবার প্লাস্টিকের ব্যাগে বই ভরে রাখবেন না যেন। # বইয়ে আঠা, স্কচটেপ, স্ট্যাপলিং পিন লাগানো একদম উচিত নয়। # ভেজা ন্যাকড়া দিয়ে বই মুছবেন না। বইয়ের ধুলা ঝাড়ার জন্য শুকনা ন্যাকড়াই যথেষ্ট (সাধারণত বই পড়া হলে ধুলা জমার সুযোগ পায় না, ঝরে পড়ে)। তবে যদি একান্তই মোছেনই অন্তত আধা ঘণ্টা রোদে শুকিয়ে নেবেন, না হলে ছত্রাক পড়ে যাবে। # বই ভিজে গেছে বলে চুলার আগুনে, মোমের আগুনে বই শুকাবেন না। সূর্যের আলোয় শুকান। # বই নামানোর সময় ঘাড় ধরে নামাবার মতন করে এর গোড়া ধরে টান দেবেন না, বেশি উঁচুতে হলে টুলে উঠে আলতো করে নামাবেন। # ইজিলি আভেইলেবল জায়গায় বই রাখবেন না, বাচ্চারা বা বইচোরদের নাগালে বই রাখতে নেই। তালা মেরে চাবি নিজের আঁচলে বেঁধে ঘুরবেন, আপনার বইয়ের জন্য বইপ্রেমী বা বইয়ের কদর করনেওয়ালা লোক ছাড়া আর কারও মমতা নেই, জেনে রাখুন, এক সঙ্গে শ’ হাজার বই দেখলে অনেকেরই সুড় সুড় করে বই পড়ার জন্য, অথচ বই নিয়ে এরা পড়েও না, ফেরতও দেয় না, নষ্ট করে ফেলে। # শেলফে ন্যাপথালিন রাখতে পারেন। আমি প্রাকৃতিক জিনিস রাখি। (ছোট সুতি কাপড়ের পুঁটলি বানিয়ে শুকনা নিম পাতা, তুলসী পাতা, বোরাক্স পাউডার, গোল মরিচের গুঁড়া, আর দারুচিনি গুঁড়া নিয়ে, একটা চোখা পেন্সিল দিয়ে কয়েকটা ফুটা করে দিই। সেটা রেখে দিই আমার বুক শেলফে। ভালই কাজ করে।)
×