ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

হোসেনের নেতৃত্বে রাজাকার ও পাক আর্মি দুই মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

হোসেনের নেতৃত্বে রাজাকার ও পাক আর্মি দুই মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুই রাজাকার সৈয়দ মোঃ হোসাইন ও মোঃ মোসলেম প্রধানের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১৬তম সাক্ষী মোঃ বাচ্চু মিয়া জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ১১ অক্টোবর দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আসামি হোসেনের নেতৃত্বে রাজাকার ও পাকিস্তান আর্মিরা আমাদের গ্রামে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ করে। পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের গোলাগুলি বন্ধ হলে আমি জানালার ফাঁক দিয়ে দেখতে পাই, রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল ও সেলিমের লাশ ধানক্ষেত থেকে টেনে হোসেনপুর রাস্তার ওপর এনে পাকিস্তান আর্মির গাড়ির পেছনে দড়ি দিয়ে বেঁধে টেনে পূর্ব দিকে নিয়ে যায়। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শনিবার এ সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। সাক্ষীকে জবানবন্দীতে সহায়তা করেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। আসামি পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট আব্দুস সোবহান তরফদার। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম মোঃ বাচ্চু মিয়া, আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬১ বছর, আমার ঠিকানা- গ্রাম-প্যারাভাঙ্গা, থানা ও জেলা-কিশোরগঞ্জ, আমি লেখাপড়া করি নাই, আমি কলার ব্যবসা করি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি আমার বাবার সঙ্গে ব্যবসা করতাম। ওই সময় আমি প্যারাভাঙ্গায় আমাদের নিজ বাড়িতেই বসবাস করতাম। কিশোরগঞ্জ থেকে হোসেনপুর যাওয়ার রাস্তার পূর্ব পাশে আনুমানিক ২০ হাত দূরে আমাদের বাড়ি অবস্থিত। ১৯৭১ সালে আমাদের বাড়িতে টিনের ছাউনিযুক্ত একটি পাটখড়ির বেড়ার ঘর এবং একটি ছনের ঘর ছিল। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে আরও বলেন, ১৯৭১ সালের অগ্রহায়ণ মাসের ৯ তারিখ শুক্রবার এর কয়েকদিন পূর্বে মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের গ্রামে এসে অবস্থান নেয়। ১৯৭১ সালের অগ্রহায়ণ মাসের ৯ তারিখ শুক্রবার সকাল আনুমানিক ৯টা ১০টার দিকে পাকিস্তান আর্মি ও রাজাকাররা আমাদের প্যারাভাঙ্গা গ্রামের নাথ বাড়ির সামনে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। তখন মুক্তিযোদ্ধারাও তাদের প্রতি পাল্টা গুলিবর্ষণ করে। তখন আমরা আমাদের ঘরের ভেতরে একটি গর্তের ভেতর দিয়ে লুকাই। পাকিস্তান আর্মিরা হোসেনপুরের রাস্তা দিয়ে আসা যাওয়া করত। বিধায় আমরা ভয়ে আত্মরক্ষার জন্য ৫/৭ দিন পূর্বে ওই গর্তটি করেছিলাম। দুই পক্ষের মধ্যে আনুমানিক দুই/আড়াই ঘণ্টা গোলাগুলি চলে। গোলাগুলি বন্ধ হওয়ার পর আমি ঘরের ভেতর থেকে বেড়ার ফাঁক দিয়ে দেখতে পাই যে, রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল ও সেলিমের লাশ ধানক্ষেত থেকে টেনে হোসেনপুর রাস্তার ওপর নিয়ে এসে ওই দুইটি লাশ পাকিস্তান আর্মির গাড়ির পেছনে দড়ি দিয়ে বেঁধে টেনে নিয়ে যেতে আমি দেখি। হোসেনপুুরের ওই রাস্তাটি ওই সময় ইটের রাস্তা ছিল। পাকিস্তান আর্মি ও রাজাকাররা ওই দুটি লাশ নিয়ে যাওয়ার পর আমি আমাদের ঘর থেকে বের হয়ে হোসেনপুর রাস্তায় এসে সেখানে রক্ত দেখতে পাই।
×