ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে আর কোন বাধা নেই

তাসকিন-সানির এ্যাকশন বৈধ প্রমাণিত

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

তাসকিন-সানির এ্যাকশন বৈধ প্রমাণিত

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ১৯ মার্চ যদি হয় অন্ধকার একটা দিন, তবে ২৩ সেপ্টেম্বর একটি আলোকিত দিন বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য। প্রথম তারিখটায় পেসার তাসকিন আহমেদ ও বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানি ত্রুটিযুক্ত বোলিং এ্যাকশনের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) তাদের অবৈধ করেছিল এ্যাকশন পরীক্ষার পর। টি২০ বিশ্বকাপের মাঝ সময়ে সেটা ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট এবং ১৬ কোটি ক্রিকেটপ্রেমী মানুষের দেশ বাংলাদেশের জন্য মর্মন্তুদ ঘটনা। হতাশা আর ক্ষোভের অনলে পুড়ে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছিল সকলের মন। আর দ্বিতীয় তারিখটায় আইসিসিই তাসকিন-সানির বোলিং এ্যাকশনকে ত্রুটিমুক্ত ঘোষণা করেছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইসিসি শুক্রবার তাসকিন ও সানির বোলিং এ্যাকশন বৈধ ঘোষণা করেছে। ফলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যে কোন সময় ফিরতে আর কোন বাধা নেই এ দুই নির্ভরযোগ্য বোলারের। গত ৮ সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন ন্যাশনাল ক্রিকেট সেন্টারের ল্যাবরেটরিতে বোলিং এ্যাকশনের পরীক্ষা দিয়ে নিজেদের বৈধ প্রমাণিত করেছেন তারা। ভারতের মাটিতে মার্চে টি২০ বিশ্বকাপ চলার সময় তাসকিন ও সানির বোলিং এ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। ৯ মার্চ ধর্মশালায় হল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচ চলার সময় এ দু’জনের বোলিং এ্যাকশনে ত্রুটি রয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন দায়িত্বরত দুই আম্পায়ার। এরপর ১২ মার্চ সানি ও ১৫ মার্চ তাসকিন চেন্নাইয়ের শ্রী রামচন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে নিজেদের বোলিং এ্যাকশনের পরীক্ষা দেন। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি দু’জনই। সানির এ্যাকশনে পরিষ্কারভাবে ত্রুটি ধরা পড়লেও তাসকিনের দুয়েকটি ডেলিভারিতে ছিল সমস্যা। অতীতে যাদের বোলিং এ্যাকশনের দুয়েকটি ডেলিভারিতে ত্রুটি চিহ্নিত হয়েছিল সেসব ক্ষেত্রে ওই বোলারকে সেসব ডেলিভারি দেয়া থেকে বিরত করা হয়েছে, পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়নি। কিন্তু আইসিসি এক্ষেত্রে তাসকিন ও সানি দু’জনকেই ত্রুটিযুক্ত এ্যাকশনের জন্য সাময়িকভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করে। সেটা ছিল বাংলাদেশ দলের জন্য বিশাল আঘাত, মানসিকভাবে মুষড়ে পড়েছিল উজ্জীবিত ও আত্মবিশ্বাসী দলটি। কারণ বিশ্বকাপে এবং এর আগে থেকেই তাসকিন ও সানি দু’জনই দুর্দান্ত বোলিং করে প্রতিপক্ষের জন্য ভয়ঙ্করতম হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করেছিলেন। সে কারণে এই নিষেধাজ্ঞা মানতে পারেনি বাংলাদেশের ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা এবং সাধারণ মানুষ। আইসিসির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আন্দোলন, মানববন্ধন, মিছিল, সমাবেশ হয়েছিল। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকেই এই সিদ্ধান্তের নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল। বিশ্বের অনেক সাবেক ক্রিকেটার, পেসাররা তাসকিনের এ্যাকশনে ত্রুটি নেই বলেও দাবি করেছিলেন। তবে আইসিসি অনড় থেকে সিদ্ধান্ত আর পাল্টায়নি। তাসকিন নিজেও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন নিজের এ্যাকশন নিয়ে। কিন্তু চেন্নাইয়ে দেয়া পরীক্ষার ফলটা পুরো দেশকে হতাশায় জর্জরিত করেছিল। কিন্তু কখনও নিজেদের বিশ্বাস, মনোবল হারাননি তাসকিন কিংবা সানি দু’জনই। চেষ্টা করে গেছেন নিজেদের বোলিংয়ে যে ত্রুটি আছে সেটা কাটিয়ে ওঠার। এমনকি ঘরোয়া ক্রিকেটেও খেলেছেন তারা। বোলিং কোচদের সঙ্গে নিজেদের বোলিং নিয়ে কাজ করা এবং পরীক্ষা দেয়ার পর ইতিবাচক ফল আসায় দু’জনই ছিলেন আত্মবিশ্বাসী আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার ব্যাপারে। দেশে অবৈধ বোলিং এ্যাকশন রিভিউ কমিটির কাছে দেয়া পরীক্ষায় তারা পাসও করেন। এরপর বিসিবি ‘টু-ডি’ প্রযুক্তিতে নিজেরাই পরীক্ষা করে দেখে দুই বোলারের এ্যাকশন। তাতে বিসিবির বিশেষজ্ঞরা সন্তুষ্ট হওয়ার পর দুজনকে পাঠানো হয় আবার এ্যাকশনের পরীক্ষা দেয়ার জন্য। অবশেষে গত ৮ সেপ্টেম্বর পুনরায় নিজেদের বোলিং এ্যাকশনের পরীক্ষা দিয়েছিলেন দু’জন। আত্মবিশ্বাসী ছিলেন দলের সাবেক বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিক ও রুয়ান কালপাগে ছাড়াও প্রধান কোচ চান্দিকা হাতুরাসিংহে। বিসিবির কর্মকর্তারা এবং নির্বাচকরাও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তাসকিনের ব্যাপারে। এ কারণে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ঘোষিত ১৩ সদস্যের দলে তাসকিনের জন্য জায়গা উন্মুক্ত রেখেছিলেন নির্বাচকরা। এবার আর তার ফেরার কোন প্রতিবন্ধকতা থাকল না। শুক্রবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইসিসির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘তাসকিন ও সানির কনুই বোলিংয়ের সময় কনুই প্রশস্ত করার ক্ষেত্রে আইসিসির নীতিমালায় যে ১৫ ডিগ্রীর সীমা আছে সেটা তার মধ্যেই আছে। এখন তাদের আর বোলিং করতে কোন বাধা নেই। তবে আম্পায়াররা তাদের বোলিং নজরদারি করবেন এবং তাদের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকছে ভবিষ্যতে তারা যদি সন্দেহজনক বোলিং করেন সেক্ষেত্রে রিপোর্ট করার।’ উল্লেখ্য, এর আগেও সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ হওয়ার পর এ্যাকশন শুধরে বোলিংয়ে ফিরেছিলেন বাংলাদেশের দুই স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক ও সোহাগ গাজী এবং পেসার আলআমিন হোসেন। প্রতিক্ষেত্রেই জয়ী হয়েছেন বোলাররা। এবার আফগানিস্তানের বিরুদ্ধেই তাসকিন ফিরবেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। কারণ প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু প্রথম দুই ওয়ানডের জন্য ১৩ সদস্যের দল ঘোষণার সময়ই জানিয়ে রেখেছিলেন তাসকিনের জন্য জায়গা রাখা হয়েছে। ফল ইতিবাচক হলেই তাঁকে দলে নেয়া হবে।
×