ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবার নিতে রাজি হয়নি

গুলশান হামলায় নিহত ৫ জঙ্গীর লাশ বেওয়ারিশ দাফন

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

গুলশান হামলায় নিহত ৫ জঙ্গীর লাশ বেওয়ারিশ দাফন

শংকর কুমার দে ॥ গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার প্রায় পৌনে তিন মাস পর হামলাকারী ৫ জঙ্গী সহ ৬ জনের লাশ বেওয়ারিশ হিসাবে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তরের পর বৃহস্পতিবার দাফন করা হয়েছে জুরাইন কবরস্থানে। এদের লাশের জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন না করায় এই ব্যবস্থা নেয়া হয়। আজিমপুর জঙ্গী আস্তানা থেকে গ্রেফতার হওয়া চৌদ্দ বছর বয়সী কিশোর জঙ্গী তাহরীম কাদেরী রাসেল ৩ দিনের রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করার পর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়ার পর টঙ্গীর কিশোর অপরাধী সংশোধনাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এর আগে সে পুলিশের কাছেও ১৬১ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে রাসেল বলেছে, গুলশানে হামলা করার আগে তাদের বসুন্ধরা ভাড়া বাড়িতে থাকত, সে আঙ্কেল বলে সম্বোধন করত, তার মা তাদের খাবার রান্না করে দিত, সেই রান্না করা খাবার পাঁচ জঙ্গী আঙ্কেলের কাছে নিয়ে যেত। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও পুলিশ সূত্রে এ খবর জানা গেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) থাকা ৫ জঙ্গীসহ ৬ জনের লাশ বৃহস্পতিবার আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর লাশগুলো জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয় তাদের লাশ। যাদের লাশ দাফন করা হয়েছে তারা হচ্ছে, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও মোহাম্মদপুর নিবাসী রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, স্কলাসটিকার সাবেক ছাত্র মীর সামিহ মোবাশ্বের, মালয়েশিয়ার মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও উত্তরা নিবাসী নিবরাস ইসলাম, বগুড়ার বিগিগ্রাম ডিইউ সেন্ট্রাল ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র খায়রুল ইসলাম পায়েল, বগুড়ার সরকারী আযিযুল হক কলেজের ছাত্র শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল। এছাড়াও ওই হামলায় হোটেলটির বাবুর্চি সাইফুল চৌকিদারের লাশও দাফন করা হয়। আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কর্মকর্তারা জানান, তাদের ছয়জন ক্যারিয়ার ও দুটি পিকআপ নিয়ে কর্মকর্তারা গিয়েছিলেন। সিএমএইচ থেকে লাশ পাওয়ার পর বিকেলের মধ্যেই জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। ওই ছয়জনের মধ্যে শরীয়তপুরের সাইফুল চৌকিদার নামে একজন ওই বেকারির পাচক রয়েছেন। তিনিও হামলাকারীদের সঙ্গে থেকে জঙ্গীদের সহায়তা করেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, কোন পরিবার লাশ চেয়ে আবেদন না করায় গুলশানে নিহত ৬ জঙ্গীর লাশ আঞ্জুমানের কাছে দাফনের জন্য হস্তান্তর করা হয়েছে। দাবিদারহীন হিসেবে ছয়টি লাশ আঞ্জুমানকে দেয়া হয়েছে। লাশগুলোর দাবি নিয়ে স্বজনদের কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি বলে জানান পুলিশ কমিশনার। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান জানান, নিহত ছয় জনের ডিএনএর সঙ্গে স্বজনদের ডিএনএ মিলিয়ে তারা পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন। তবে পরিবারের কেউ লাশ চেয়ে লিখিত আবেদন করেননি। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে রাখা তাদের মরদেহ থেকে দুই দফা নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা। ওই জঙ্গীরা হামলার আগে কোন ধরনের মাদক নিয়েছিলেন কিনা জানতে যুক্তরাষ্ট্রেও পাঠানো হয় সেই নমুনা। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) পরিচালক রাশিদুল হাসান গণমাধ্যমকে জানান, বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে আঞ্জুমানের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে সিএমএইচের হিমঘর থেকে কফিনগুলো পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সে সময় উপস্থিত ছিলেন ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ূন কবির। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ূন কবীরের কাছে দুপুর ১২টার দিকে ছয়টি লাশ হস্তান্তর করা হয়। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে তিনজন এবং আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের নয় প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন বলে জানান তিনি। আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের নির্বাহী পরিচালক ইলিয়াস আহমেদ বলেছেন, পুলিশ অজ্ঞাতপরিচয় লোকজনের লাশ আমাদের দেয়, আমরা দাফন করি। আজও দিয়েছে। তারা হলি আর্টিজানের কিনা- তা আমাদের জানা নেই। লাশের শরীরের চিহ্ন দেখে আমরা তার ধর্ম বোঝার চেষ্টা করি। এক্ষেত্রেও ধর্মীয় নিয়ম মেনে লাশ দাফন করা হয়েছে বলে জানান আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের এই কর্মকর্তা।
×