ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নেত্রকোনার ‘বাংলা’ রেল স্টেশন, যেখানে দু’যুগ ধরে ট্রেন থামে না

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

নেত্রকোনার ‘বাংলা’ রেল স্টেশন, যেখানে দু’যুগ ধরে ট্রেন থামে না

রাজন ভট্টাচার্য/সঞ্জয় সরকার ॥ স্টেশন আছে। অককাঠামো আছে। আছে যাত্রীও। স্টেশনের সবকিছুই নতুন। সাজানো গোছানো। কিন্তু কোন ট্রেন থামে না! দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে এ অচলাবস্থা চলছে নেত্রকোনা-মোহনগঞ্জ রেল পথের ‘বাংলা’ রেলস্টেশনে। অথচ এর নির্দিষ্ট কোন কারণ জানা নেই এলাকাবাসীর। এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী একাধিকবার আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তবুও আশায় বুক বেঁধে আছেন এলাকাবাসী। তাদের দাবি দ্রুত স্টেশনটি চালু করার। এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের সব বন্ধ রেল স্টেশন চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অনেক স্টেশন ইতোমধ্যে চালু করার উপযোগীও করা হয়েছে। নির্মিত হয়েছে নতুন অবকাঠামো। তিনি বলেন, বন্ধ সব স্টেশন দ্রুত চালুর চেষ্টা চলছে। জনবলসহ নানা সঙ্কটে নির্মিত কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। সময়ের ব্যবধানে নেত্রকোনার ‘বাংলা’ স্টেশনসহ বন্ধ থাকা সব স্টেশন চালুর কথা জানান তিনি। ব্রিটিশ আমলে যখন ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা-মোহনগঞ্জ রেল পথ চালু হয়, তখনই নেত্রকোনা শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত বাংলা বাজারে এ রেল স্টেশনটি স্থাপিত হয়। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত স্টেশনটি সম্পূর্ণ চালু ছিল। ওই রেলপথে চলাচলকারী সব ট্রেনই সেখানে থামানো হতো। কিন্তু ১৯৯০ সালের দিকে রেল কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাত কারণে স্টেশনটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। একই সঙ্গে বন্ধ করে দেয়া হয় যাত্রী উঠা-নামার সুবিধাও। অথচ, বছর চারেক আগেও (২০১২ সালে) স্টেশনটির পুরনো ভবন ভেঙ্গে নতুন ভবন এবং প্লাটফর্ম নির্মাণ করা হয়। স্টেশনটি চালু থাকলে এলাকার ছাত্র-ছাত্রী, ব্যবসায়ী ও নিম্ন আয়ের লোকজন খুব সহজেই জেলা সদরসহ অন্যান্য স্থানে যাতায়াত করতে পারত। কিন্তু ট্রেন না থামায় তাদের বাস, রিক্সা বা ইজিবাইকে যাতায়াত করতে হয়। এতে টাকা এবং সময়Ñ দুটোরই অপচয় হয়। তাছাড়া স্টেশনটি চালু থাকলে আর্থিকভাবে লাভবান হতো রেলওয়ে। এলাকার প্রবীণ শিক্ষক বিমল চক্রবর্তী জানান, আমরা সবাই চাই স্টেশনটি দ্রুত চালু হোক। সবকিছুই প্রস্তুত। অথচ বছরের পর বছর আমাদের স্টেশনটি চালুর জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এলাকার বারহাট্টা কলেজের ছাত্র সজীব জানান, ট্রেন চালু হলে সর্বোচ্চ ১০টাকা দিয়ে বারহাট্টা যাওয়া যেত। এখন সেখানে যেতে আসতে খরচ হয় ৪০ টাকা। স্থানীয় ব্যবসায়ী আলালউদ্দিন জানান, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি স্টেশনটি চালুর করার। এখানে ট্রেন থামলে এলাকাবাসী অল্প খরচে চলাফেরার সুযোগ পেত। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত খরচ বাঁচত। এলাকাবাসী জানান, জেলা শহরের শহরতলী এলাকা হওয়ায় এখানে ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঘাটতি রয়েছে। এলাকার অনেক শিক্ষার্থী শহরের স্কুল ও কলেজে পড়াশোনা করে। এছাড়া সবকিছুই শহরমুখী। নেত্রকোনা-২ আসনের স্থানীয় সংসদ সদস্য ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় স্টেশনটি চালুর বিষয়ে একাধিকবার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না। সরেজমিনে দেখা গেছে, স্টেশনটিতে বর্তমানে রেল বিভাগের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত নেই। কর্তৃপক্ষ এটি এখন আর দেখভাল করে না। এ কারণে মূল ভবনের একটি কক্ষ দখল করে নিয়েছেন স্থানীয় কয়েক ব্যবসায়ী।
×