ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাশ্মীরে ভয়াবহ জঙ্গী হামলায় ১৭ ভারতীয় সৈন্য নিহত

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কাশ্মীরে ভয়াবহ জঙ্গী হামলায় ১৭ ভারতীয় সৈন্য নিহত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ভারত শাসিত কাশ্মীরে রবিবার ভোরে একটি সেনা ঘাঁটিতে আকস্মিক জঙ্গী হামলায় ১৭ সেনা সদস্য নিহত এবং অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। মারা গেছে হামলাকারী চার জঙ্গীর সবাই। বিরোধপূর্ণ এই এলাকায় এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা। কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেড সদর দফতরে এই জঙ্গী হামলা হয়। ন্যক্কারজনক এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদরা। হামলার পরপরই নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরী বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া সফর বাতিল করেছেন। কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এ হামলাকে যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা বলে অভিহিত করেছেন। ভারত এ হামলার জন্য পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদকে (জেইএম) দায়ী করেছে। খবর এনডিটিভি, এএফপি ও বিবিসির। কর্মকর্তারা জানান, ভারি অস্ত্রসজ্জিত ফিদাইন বা আত্মঘাতী স্কোয়াডের জঙ্গীরা পাকিস্তান সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশ করে ভোর চারটার দিকে কাশ্মীরের প্রধান নগরী শ্রীনগরের পশ্চিমে উরিতে শত শত সেনার ওই ঘাঁটিতে গ্রেনেড নিক্ষেপ করে এবং নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করতে শুরু করে। উরি শহরের কাছাকাছি থাকা বাসিন্দারা সকালে ঘাঁটিটি থেকে কালো ধোঁয়া বের হতে দেখেন এবং প্রচ- গোলাগুলির আওয়াজ শুনতে পান। এ সময় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার ওপর থেকে ঘাঁটিটির চারদিক ঘিরে ফেলে। সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে এই জঙ্গী হামলায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির কথা জানায়। সেনা সূত্রগুলো জানায়, ওই ঘাঁটিতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। হামলায় আহতদের হেলিকপ্টারযোগে ১০০ কিলোমিটার দূরে শ্রীনগরের সেনা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি জঙ্গী হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, জঙ্গী ও তাদের মদদদাতাদের অশুভ চক্রান্ত ভারত নস্যাৎ করে দেবে। পাকিস্তানের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ভারতের হামলার পেছনে যারা আছে, তাদের কঠিন জবাব দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইটারে এক বার্তায় এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, হামলাকারীরা রেহাই পাবে না। তাদের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং কয়েক দফা টুইট করে জানান, তিনি এ হামলার বিষয়ে ওই অঞ্চলের সেনা কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তিনি রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র সফর বাতিল করেছেন। তিনি পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, তারা এখনও সন্ত্রাসবাদে মদদ অব্যাহত রেখেছে এবং প্রত্যক্ষ সমর্থন দিয়ে চলেছে। কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি বলেছেন, জম্মু-কাশ্মীরে সহিংসতা উস্কে দিতে এবং এ অঞ্চলে যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি করতে এ হামলা চালানো হয়েছে। কংগ্রেস নেতা ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং বলেন, এ ধরনের হামলা ঠেকাতে পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দেয়া উচিত। অতীতে পাকিস্তানকে বিশ্বাস করে আমরা বিরাট ভুল করেছি। দুই মাসের বেশি সময় ধরে কাশ্মীরে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। সেখানে প্রতিদিনই নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারী কাশ্মীরীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। গত ৮ জুলাই সেনাদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এক বিদ্রোহী নেতা নিহত হওয়ার পর ভারতীয় শাসনের প্রতিবাদ করতে গিয়ে এ পর্যন্ত অন্তত ৮৭ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত কয়েক হাজার লোক। চলতি বছরের জানুয়ারিতে অপর এক সন্ত্রাসী হামলায় ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সাত সদস্য নিহত হয়। ভারতীয় সীমান্ত অতিক্রম করে আসা ছয় অনুপ্রবেশকারী পাঞ্জাবের উচ্চ নিরাপত্তায় ঘেরা পাঠানকোট বিমান ঘাঁটিতে প্রবেশ করে নির্বিচার গুলিবর্ষণ শুরু করে। তিনদিন ধরে তা-ব চালানোর পর সেনা অভিযানে ওই ছয় হামলাকারীও নিহত হয়। কাশ্মীরে মোতায়েন প্রায় পাঁচ লাখ ভারতীয় সেনার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি বিদ্রোহী গ্রুপ কয়েক দশক ধরে লড়াই করে আসছে। এই লড়াইয়ে হাজার হাজার লোক মারা গেছে, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, আমি জাতিকে আশ্বস্ত করছি যে যারা এই জঘন্য হামলায় জড়িত তাদের কেউ রেহাই পাবে না। এনডিটিভির খবরে বলা হয়, রবিবার ভোররাতে কাশ্মীরের উরি এলাকার এ ঘটনায় হামলাকারী চার ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীও’ নিহত হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে কাশ্মীরের উত্তরাঞ্চলে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ চালানো হামলাগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা। ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, চারজন ‘ফিদাইন’ (আত্মঘাতী) উরির ওই ঘাঁটিতে অনুপ্রবেশ করে হামলা চালায়, ছয় ঘণ্টা ধরে চলা লড়াইয়ে তারা সবাই নিহত হয়েছে। কর্মকর্তারা জানান, ভোর ৪টার দিকে আত্মঘাতী হামলাকারীদের ওই দলটি গোপনে ঘাঁটিটিতে প্রবেশ করে প্রশাসনিক এলাকায় পৌঁছে যায়। প্রকাশিত ভিডিওতে শ্রীনগর-মুজাফ্ফারাবাদ মহাসড়কের পাশের ওই ঘাঁটিটি থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে। কয়েকটি সেনা ব্যারাকে আগুন ধরে গেছে এবং সেখান থেকে বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় বলে জানা গেছে।
×