ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মালিকের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার দাবি

টঙ্গীর কারখানায় অগ্নিকা-ে নিখোঁজের তালিকায় আরও এক শ্রমিক

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

টঙ্গীর কারখানায় অগ্নিকা-ে নিখোঁজের তালিকায় আরও এক শ্রমিক

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু/নুরুল ইসলাম ॥ টঙ্গীর বিসিক শিল্পনগরীর ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় বিস্ফোরণ ও অগ্নিকা-ের ঘটনায় শনিবার অষ্টম দিনের মতো নিখোঁজদের সন্ধানে উদ্ধার অভিযান চালিয়েছে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল। এদিন নিখোঁজের তালিকায় আরও এক শ্রমিকের নাম যুক্ত হওয়ায় নিখোঁজের সংখ্যা বেড়ে এখন ১১-তে দাঁড়িয়েছে। এদিকে শনিবারও কারখানার ধ্বংসস্তূপ থেকে ভেসে এসেছে লাশের গন্ধ। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও লাশ থাকার আশঙ্কা করছেন নিখোঁজদের স্বজন ও স্থানীয়রা। ভয়াবহ এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পুলিশ শনিবার বিকেল পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার বা আটক করতে পারেনি। এদিকে ওই ঘটনায় কারখানার মালিকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার দাবিতে কারখানার শ্রমিককর্মচারীরা মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে। টঙ্গীর বিসিক শিল্পনগরীতে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের মালিকানাধীন ট্যাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড কারখানায় গত ১০ সেপ্টেম্বর ভোরে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার অষ্টম দিন শনিবারও নিখোঁজদের সন্ধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের উদ্ধারকর্মীরা ভারি যন্ত্রপাতি নিয়ে উদ্ধার অভিযান চালান। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা কারখানার বাইরের দিক থেকে ধ্বংসাবশেষ অপসারণ করে ক্রমশ কারখানা ভবনের ভেতরের দিকে এগোচ্ছেন। উদ্ধারকর্মীরা ভারি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে কারখানা ভবনের ধ্বংসাবশেষ ড্রাম্প ট্রাক দিয়ে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। এ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার ৬১০ টন জঞ্জাল সরানো হয়েছে। তবে ভবনের ভেতরে থাকা রাসায়নিক ড্রামগুলো বিস্ফোরণের আশঙ্কায় সতর্ক হয়ে কাজ করছে উদ্ধারকর্মীরা। উদ্ধার কাজে তাদের সহায়তা করছেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, গাজীপুর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সদস্যরা। এদিন কারখানার ধ্বংসাবশেষ থেকে লাশের গন্ধ বেরোলেও নতুন করে আর কোন লাশ বা আহতের সন্ধান মেলেনি। ফলে এ ঘটনায় দগ্ধ হয়ে এবং ভেঙ্গেপড়া কাঠামোর নিচে চাপা পড়ে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৩৪ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে সাতজনের পরিচয় শনিবার বিকেল পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। পরিচয় শনাক্তের জন্য অজ্ঞাত ওই সাতটি লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সংরক্ষণ করা হয়েছে। অপরদিকে পরিচয় পাওয়া অন্যদের লাশ ইতোমধ্যে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়াও গাজীপুর জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমের তথ্যমতে ওই ঘটনায় শুক্রবার রাত পর্যন্ত নিখোঁজের সংখ্যা ছিল ১০ জন। কিন্তু দুর্ঘটনার অষ্টম দিন শনিবার নিখোঁজের তালিকায় আরও এক শ্রমিকের নাম যুক্ত হয়েছে। তার নাম আল মামুন। সে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ এলাকার মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে এবং ওই কারখানার শ্রমিক। শনিবার মামুনের আত্মীয়স্বজনরা চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ থেকে টঙ্গীতে এসে জানান, ওই কারখানার শ্রমিক আল মামুন গত ১০ সেপ্টেম্বর দুঘর্টনার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছে। এদিকে নিখোঁজদের সন্ধান পাওয়ার আশায় তাদের স্বজনরা অধীর আগ্রহে এখনও কারখানা এলাকায় সময় কাটাচ্ছেন। বিস্ফোরণ ও অগ্নিকা-ের ঘটনায় নিখোঁজদের সন্ধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের উদ্ধারকর্মীরা ঘটনার পর সোমবার সকাল হতে ভারি যন্ত্রপাতি নিয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। এদিকে দুূর্ঘটনায় নিহত জুয়েলের পিতা আব্দুল কাদের বাদী হয়ে কারখানার মালিক মকবুল হোসেন ও তার স্ত্রী শেফালী পারভীনসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতদের আসামি করে টঙ্গী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় কারখানার ছয় কর্মকর্তাকেও আসামি করা হয়েছে। পুলিশ এ মামলায় শনিবার বিকেল পর্যন্ত কাউকে আটক বা গ্রেফতার করতে পারেনি। অপরদিকে ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানা মালিকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা শনিবার দুপুরে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে। তারা কারখানায় বিস্ফোরণ ও অগ্নিকা-ের ঘটনার জন্য তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছে। এ সময় তারা ট্যাম্পাকো পরিবারকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য কামনা করেন। শনিবার দুপুরে টঙ্গী-ঘোড়াশাল সড়কের আহসান উল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতুর নিচে কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা বিভিন্ন সেøাগান সংবলিত ব্যানার ও ফেস্টুুন নিয়ে এ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে। এতে বক্তব্য রাখেন অপারেটর জাকির হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, লিটন, মজিবুর রহমান, আব্দুর রহিম প্রমুখ। প্রসঙ্গত টঙ্গীর বিসিক নগরীতে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের মালিকানাধীন ট্যাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড কারখানায় গত ১০ সেপ্টেম্বর ভোরে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। এতে ওই কারখানার বিশাল ভবনের অধিকাংশই ধসে পড়ে বিশাল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এ ঘটনায় আগুনে দগ্ধ হয়ে এবং ভেঙ্গেপড়া কাঠামোর নিচে চাপা পড়ে ঘটনার রাত পর্যন্ত মৃত্যু হয় ২৪ জনের। পরবর্তীতে ওই কারখানার পূর্বপাশে রাস্তার ওপর ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপ অপসারণ করে পর্যায়ক্রমে আরও আটজনের লাশ উদ্ধার করে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুজন মারা যায়। এ নিয়ে ওই ঘটনায় মোট ৩৪ জন মারা যায় এবং আহত হয় অর্ধশতাধিক। পরিচয় পাওয়া অন্যদের লাশ ইতোমধ্যে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে অন্তত ৩৫ জন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, টঙ্গী সরকারী হাসপাতাল ও উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
×