স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঈদ মানেই অনাবিল আনন্দ। সারা বছরের কর্মব্যস্ত একঘেয়ে জীবনের মাঝে হই-হুল্লোড় আর উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠা তিনটি দিন। তাই তো আনন্দ উদযাপনের উৎস খুঁজে বেড়াতে উন্মুখ হয়ে থাকে নাগরিক মন। এক্ষেত্রে ঘরে বসে ছোট পর্দায় অসংখ্য টেলিভিশন চ্যানেলের নানা অনুষ্ঠানমালার সঙ্গে বড় পর্দায় সিনেমা দেখা বিনোদনের অন্যতম অনুষঙ্গ। বহুকাল ধরেই বাঙালীর ঈদ উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ ছবি দেখা। যদিও এখন হারিয়ে গেছে ঢাকাই ছবির সেই সোনালী সময়। সারা বছর প্রেক্ষাগৃহে থাকে না দর্শকের আনাগোনা। তবে ঈদ উপলক্ষে বিনোদনের সন্ধানে অনেকেই ছুটে যান সিনেমা হলে। সেই সুবাদে প্রতিবছরই ঈদকে সামনে রেখে দর্শকের কথা বিবেচনায় নিয়ে মুক্তি দেয়া হয় নতুন ছবি। আর উৎসবের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় ছবিগুলোর লগ্নিকৃত বিনিয়োগ তুলে মুনাফার পরিধি বেড়ে যাওয়ায় প্রযোজক ও পরিচালকরা থাকেন স্বস্তিতে। এবারের ঈদ উৎসবে মুক্তি পেয়েছে তিন ছবি বসগিরি, শুটার ও রক্ত। এসব ছবি দেখে সিনেমাপ্রেমী দর্শকরা সেলুলয়েডে চোখ রেখে কাটিয়েছে আনন্দময় ঈদ মুহূর্ত। অন্ধকার ঘরে বসে নয়নজুড়ানো নানা দৃশ্য, সংলাপ, অ্যাকশন কিংবা নাচ-গানের ভেতর দিয়ে ছবির গল্পের ভেতরে প্রবাহিত হয়েছে বিনোদনপিপাসুদের মনোসংযোগ। যদিও এখন ঘরে বসেই অসংখ্য টিভি চ্যানেলে হরেক রকম নাটক, টেলিফিল্ম, সঙ্গীতানুষ্ঠান, তারকাদের আড্ডাসহ সিনেমা দেখার অবারিত সুযোগ রয়েছে। তবে বিজ্ঞাপনের যাতনায় নির্দিষ্ট কোন অনুষ্ঠান দেখতে গিয়ে দর্শককে হতে হয় চরম বিরক্ত। আবার অসংখ্য অনুষ্ঠান থাকলেও উৎকর্ষতার বিবেচনায় সব অনুষ্ঠান দেখা হয় না দর্শকের। তাই কিছুক্ষণ পরপর হাতের রিমোটটি চেপে চলে যেতে হয় চ্যানেল থেকে চ্যানেলে। এ কারণেই এখনও পুরোদমে হারিয়ে যায়নি প্রেক্ষাগৃহে বসে চলচ্চিত্র দেখার আবেদন। কোন বিরতি ছাড়াই আনন্দে কেটে যায় কয়েকটি ঘণ্টা। নেই মনোযোগ হারানোর সুযোগ।
বৃষ্টির কারণে ঈদ-উল-আযহার প্রথম দিন মঙ্গলবার প্রেক্ষাগৃহগুলোয় তেমন একটা দর্শক আসেনি। তবে দ্বিতীয় বুধবার থেকে বেড়েছে দর্শক সমাগম। ঢাকাবাসীর অনেকেই নানা প্রেক্ষাগৃহে ঢুঁ মেরে ছবি দেখে নির্মল আনন্দে সময় কাটিয়েছেন।
ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিয়া আলাউদ্দীন বলেন, উৎসব উপলক্ষে প্রেক্ষাগৃহে এসেছি তিনটি ছবি। তবে কোন ছবিটি সবচেয়ে বেশি দর্শক টানছে এখনই তা বলার উপায় নেই। কারণ রাজধানীর অধিকাংশ মানুষ আছেন ছুটিতে। এখনও ফেরেনি ঢাকায়। এই অধিকাংশ মানুষ ঢাকায় ফিরলে বোঝা যাবে কোন ছবিটির প্রতি দর্শকের আকর্ষণ বেশি। এখন পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছেন শুটার ছবিটি। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে বসগিরি ও রক্ত। যদিও বেশি হলে মুক্তি পাওয়া মানেই বেশি ব্যবসা করবে এমন নয়। তাই আগামী সপ্তাহে রাজধানী আবার কর্মচঞ্চল হলে বোঝা যাবে কোন ছবিটি সর্বোচ্চ দর্শক টানছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাংলা চলচ্চিত্রের ম্রিয়মাণ দশা চলছে। ভালো গল্প ও নির্মাণশৈলীর অভাবে হলবিমুখ হয়েছে ঢাকাই ছবির মূল দর্শক মধ্যবিত্ত শ্রেণী। তবে এই হতাশার মাঝেও আশার আলোর হয়ে আবির্ভূত হয় দুই ঈদ উপলক্ষে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলো। সারা বছর যারা ছবি দেখেন তাদের পাশাপাশি অনিয়মিত দর্শকরাও উৎসব উপলক্ষে হাজির হন সিনেমা হলে। এটাই হয়ে ওঠে ঈদের ছবির অন্যতম প্রাপ্তি।
ঢাকাই ছবি মানেই এখন শাকিব খানের একচেটিয়া দাপট। এবার ঈদে মুক্তি পেয়েছে এই নায়কের দুই ছবি বসগিরি ও শুটার। অন্যদিকে নায়কনির্ভর ছবির বিপরীতে এ্যাকশন ঘরানার রক্ত চলচ্চিত্রের মাধ্যমে শাকিবের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উঠতি নায়িকা পরীমণি।
রক্ত ছবিটি পরিচালনা করেছেন ওয়াজেদ আলী সুমন। শামিম আহমেদ রনির পরিচালনায় এসেছে বসগিরি। রাজু চৌধুরী নির্মাণ করেছেন শুটার। এর মধ্যে দুই ছবিতে নবাগত নায়িকা বুবলিকে নিয়ে পর্দায় হাজির হয়েছেন শাকিব। বসগিরি ও শুটার ছবিতে জুটি বেঁধেছেন শাকিব-বুবলি। অন্যদিকে নায়কনির্ভর ছবির বিপরীতে নায়িকানির্ভর রক্ত ছবির মাধ্যমে পর্দায় হাজির হয়েছেন পরীমণি। পরীর সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন নবাগত নায়ক রোশান।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: