ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

জাকারিয়া স্বপন

ইমোশনাল ব্যাংক এ্যাকাউন্ট

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ইমোশনাল ব্যাংক এ্যাকাউন্ট

॥ দ্বিতীয় কিস্তি ॥ গত সপ্তাহে লিখেছিলাম ইমোশনাল ব্যাংক এ্যাকাউন্ট নিয়ে। বিষয়টি যে এত মানুষের মনকে ছুঁয়ে যাবে বুঝতে পারিনি। ইমোশনাল ব্যাংক এ্যাকাউন্টের ব্যাপারটি আমি নিজেও সরাসরি জানতাম না। স্টিফেন কোভের বইটি পড়ে বিষয়টি সম্পর্কে বেশ ভাল একটা ধারণা হয়েছে। এখন দেখতে পাচ্ছি আমার মতো আরও বহু মানুষ এই বিষয়টি সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন না। বিষয়টি তাদের ভাল একটি অনুভূতি দিয়েছে। ড. স্টিফেন কোভের লেখা ‘দি সেভেন হ্যাবিট অব হাইলি ইফেক্টিভ পিপল’ বইটির পরের অভ্যাসগুলো হলো পাবলিক ভিক্টোরি নিয়ে। কিভাবে আপনার চারপাশের মানুষের সঙ্গে ব্যবহার করবেন এবং নিজের একটি ইমেজ তৈরি করবেন সেটাই হলো মুখ্য বিষয়। সেই আলোচনার ভূমিকা পর্বে উঠে এসেছে এই ইমোশনাল ব্যাংক এ্যাকাউন্টের বিষয়টি। একটি বড় অংশের পাঠক বলছেন, লেখা যদি একজন পাঠককে নতুন মাত্রায় নিয়ে না যায় তাহলে সেই লেখার প্রয়োজন কী? মানুষের চিন্তা-চেতনাকে ভিন্ন একটি জায়গায় নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যেই লেখালেখি বা জ্ঞানচর্চা। সেই জ্ঞানের আসরে পাঠকরাও বেশ সুন্দর মতামত যুক্ত করেছেন। বৃহত্তর পাঠকগোষ্ঠীর জন্য সেগুলো এখানে ব্যাখ্যাসহ তুলে ধরছি। আশা করছি বিষয়গুলো সম্পর্কে আমাদের ধারণা বেশ পরিষ্কার হবে। রাজনীতিবিদদের ইমোশনাল ব্যাংক এ্যাকাউন্ট রাজনীতিবিদরা এই বিষয়ে সবচেয়ে বেশি পটু। যে কোনভাবেই হোক তারা বিষয়টি শিখে ফেলেছেন। তারা তাদের ভোটারদের সঙ্গে বিশাল একটি ইমোশনাল ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খুলে ফেলেন। বিশেষ করে ভোটের সময়। নির্বাচনের মাঠে তারা এমন সব প্রতিশ্রুতি দিতে থাকেন এবং সেগুলো ভোটারদের বিশ্বাস করিয়ে ছাড়েন; ফলে ভোটারদের কাছে তার ডিপোজিট অনেক উঁচু হয়ে থাকে। অনেকেই লাগামছাড়া প্রতিশ্রুতি দিতে থাকেন। তারা নিজেরাও জানেন তারা এগুলো রাখতে পারবেন না। কিন্তু তবুও তারা এই কাজটি করেন। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়াটাই বড় কথা- সেটা যে কোন উপায়েই হোক। তারা কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, নির্বাচনের মাঠে এগুলো বলতে হয়। এগুলো না বললে ভোটারকে দলে ভেড়ানো যায় না। তারা মনে করেন ভোটাররা বোকা। যা বলব, তাই খাবে। আর সেগুলো তারা মনে রাখল কি রাখল না তাতে কি আসে যায়। ততদিনে তো আমি নির্বাচিত হয়ে গিয়েছি। কিন্তু বিপর্যয় ঘটে ভোটের পরেই। মানুষ এত সহজেই সব ভুলে যায় না। নেতারা ভাবেন, ভুলে যায়। নেতারা ভোটের আগে দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো ভাংতে শুরু করেন। গ্রামে ব্রিজ হয় না, রাস্তার উন্নয়ন হয় না, স্কুল হয় না, চিকিৎসা কেন্দ্রে ডাক্তার থাকে না, ওষুধ তো অনেক দূরের কথা, তাদের জীবনের পরিবর্তন হয় না। ফলে জনগণের কাছে যে ইমোশনাল এ্যাকাউন্ট ছিল সেটা থেকে বড় ধরনের উইথড্র হতে থাকে। একটা সময়ে গিয়ে ব্যালেন্স শূন্য হয়। তারপর যখন দুর্নীতি চরমে পৌঁছায় তখন ব্যালেন্স হয়ে যায় নেগেটিভ। ইমোশনাল ব্যাংক এ্যাকাউন্টে ব্যালেন্স শূন্য হলে নেতারা সেটা বুঝতে পারেন। এলাকায় জনপ্রিয়তা হারান। কেউ কেউ এলাকায় যাওয়া কমিয়ে দেন। পরবর্তী নির্বাচনের জন্য ভয়ে থাকেন। এই কারণেই খুব কম প্রার্থী দ্বিতীয় টার্মে নির্বাচিত হতে পারেন। আর যারা পারেন তারা প্রকৃত ভোটের চেয়ে তাদের পেটুয়া বাহিনী ব্যবহার করেন বেশি। জনগণের ইমোশনাল ব্যাংক এ্যাকাউন্টে ব্যালেন্স শূন্য হয়ে গেলে দলগুলোর কী পরিণতি হয় তা এই দেশ বেশ কয়েকবার দেখে ফেলেছে। ভবিষ্যতই বলে দেবে পরবর্তী সময়গুলোতে এই ব্যালেন্স কিভাবে চলতে থাকে। সবচেয়ে বড় ইমোশনাল ব্যাংক এ্যাকাউন্টির নাম ‘মা’ আমাদের জীবনে সবচেয়ে বড় ইমোশনাল ব্যাংক এ্যাকাউন্টটি থাকে মায়েদের। প্রতিটি সন্তানের জীবনে মায়েদের এই এ্যাকাউন্টটি এত বড় যে, এটাকে আর কেউ কাটিয়ে উঠতে পারেন না। কিন্তু কেউ কি একবার চিন্তা করে দেখেছেন, কেন একজন মায়ের ব্যাংক এ্যাকাউন্টে এত বিশাল ব্যালেন্স থাকে? মা তার সন্তানকে ধারণ করেন। দীর্ঘ সময় ধরে তাকে ভ্রƒণে বড় করেন। জন্মের পর তার ডায়পার পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে তাকে বুকের দুধ খাওয়ানো, তাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে বাচ্চাকে যতœ করা, তাকে হাঁটতে শেখানো, তার স্কুলে পাঠানো, তাকে নিয়ে পড়তে বসা, তাকে বই পড়ে শোনানো, তার খাবার প্রস্তুত করে দেয়া, যে কোন সমস্যায় পাশে এসে দাঁড়ানো থেকে শুরু করে প্রতিটি সন্তানের জীবনটা গড়ে ওঠে মাকে ঘিরে। একজন মা এই বিশাল কাজগুলো করে যান কোনরকম শর্ত ছাড়াই। আপনি খারাপ ব্যবহার করেন, কিংবা মাকে কষ্ট দেন- কোন কিছুতেই মা সন্তানদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন না। তার ভালবাসা শর্তহীন। এমন শর্তহীন ভালবাসা এই গ্রহে আর কারও পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়। এমনকি প্রতিটি সন্তান তার নিজের জীবন শুরু করার পরও মা তার ওপর ছায়ার মতো পাশে থাকেন। নিজের সন্তানের ভালর জন্য মা যে পরিমাণ কষ্ট এবং নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেন তার নজির এই পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই। সন্তান নিজের অজান্তেই মার এই বিশাল ব্যালেন্সকে ঋণ হিসেবে দেখে ফেলে। অনেক সময় সে মুখ ফুটে বলতে পারে না, কিংবা কিভাবে প্রকাশ করবে বুঝে উঠতে পারে না। কিন্তু অবচেতন মনে মা সম্পর্কে তার ব্যালেন্স এত বেশি পরিমাণে থাকে যে, মা চাইলেও সেই ব্যালেন্স শেষ করতে পারেন না। মায়েদের তেমন কোন উইথড্র নেই। সারাটা জীবনই কেবল ডিপোজিট। এই কারণে পৃথিবীতে সকল সন্তানের কাছে সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা হলো তার মা। মায়ের সঙ্গে তার ঝগড়া হতে পারে, মনোমালিন্য হতে পারে, চিৎকার-চেঁচামেচি হতে পারে- তাতে কিছু আসে যায় না। মা তার ব্যাংক ব্যালেন্স এত বেশি পরিমাণে করে রেখেছেন যে, এসব ছোটখাটো উইথড্রতে তেমন কোন পার্থক্য হয় না। তাই এই পৃথিবীতে সকল দেশে, সকল জাতিতে মায়ের স্থান কেউ নিতে পারেনি, পারবেও না। ছাত্রের সঙ্গে শিক্ষকের এ্যাকাউন্ট জীবনে এমন কোন শিক্ষককে আপনারা কেউ পেয়েছেন, যে শিক্ষক ক্ষেপে গিয়ে আপনাকে মেরেছে, কান ধরেছে? তারপর বিকেল বেলা আপনার বাসায় এসে আপনাকে দেখে গেছে? আপনার জীবনে এমন কোন শিক্ষক কি পেয়েছেন যিনি খালি পায়ে স্কুলে আসতেন (যার জুতা কেনার টাকা ছিল না), পায়ের গোড়ালি ফেটে গেছে (কখনই লোশন লাগানো হয়নি সেই পায়ে), একটা পাজামা-পাঞ্জাবি পরেই স্কুল চালাতেন; কিন্তু ছাত্রদের অসুখে বাড়িতে চলে আসতেন দেখতে। সম্ভব হলে নিজের গাছের ফলটুকু নিয়ে আসতে ভুলতেন না। আমার জীবনে এমন বেশ কয়েকজন শিক্ষকের ভালবাসা পেয়েছিলাম। যখন আমি শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জের একটি প্রাইমারী স্কুলে পড়ি সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের ভালবাসা আমাকে আজও তাড়া করে বেড়ায়। শর্তহীন ভালবাসা। নিজের তেমন কিছু নেই; কিন্তু আমার জন্য তার পুরো পৃথিবীটাজুড়ে ছিল ভালবাসা। আমি একদিন রাগ করে বললাম, আমি এই স্কুল ছেড়ে পাশের আরও বড় স্কুলে চলে যাব, ওখানে গিয়ে বৃত্তি পরীক্ষা দেব। এই পরিণত বয়েসও আমার মনে আছে, তার চোখ ছলছল করে উঠেছিল। তিনি আমাদের বাসায় এলেন। মা আমাকে স্কুল ছাড়তে দিলেন না। এই যে আমি এখন লিখছি সেই স্যারের মুখটা মনে করে আমার চোখ ছলছল করে উঠছে। আমার কাছে তার এত ব্যালেন্স যে, এটাকে আমি ঋণ মনে করছি। এই ঋণ তো আমি কখনই শোধ করিনি। এই ঋণ কি শোধ করা যাবে কখনও? আমি তার নামটিও মনে করতে পারছি না। কত ছোট ছিলাম তখন! কিন্তু আমার কাছে তার যে ইমোশনাল ব্যাংক এ্যাকাউন্ট রয়েছে, তার ব্যালেন্স কি কখনও শেষ হবে? আমি নিশ্চিত তিনি এই গ্রহ ছেড়ে চলে গেছেন অনেক আগেই। কিন্তু তিনি আমার মনের ভেতর যে গভীর ছাপ রেখে গেছেন তা আর কোন শিক্ষকই পারেননি। তাই যতদিন পেরেছি আমার প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষকদের সামনে পেলে তাদের পা ছুঁয়ে সালাম করেছি। এমনকি ভরা মজলিসে। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও। আমার সেই শিক্ষকরা কখনই তাদের সেই ব্যালেন্স থেকে বিন্দুমাত্র উত্তোলন করেননি। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমরা কি সেই শিক্ষকদের পাচ্ছি? যদি না পাই তাহলে ছাত্রদের ইমোশনাল ব্যাংক এ্যাকাউন্টেও তাদের ব্যালেন্স শূন্য হবে, এটাই তো স্বাভাবিক! কাস্টমারের সঙ্গে বিক্রেতার এ্যাকাউন্ট একটা এসি কিনেছিলাম স্থানীয় একটি দোকান থেকে। এক বন্ধুর রেফারেন্সে তার কাছে যাওয়া। তিনি বললেন, এটা অরিজিনাল ‘জেনারেল এসি’, থাইল্যান্ডের তৈরি। তিনি আরও সাবধান করে দিলেন যে, বাংলাদেশে অনেকেই প্রকৃত থাইল্যান্ডের জেনারেল বলে আপনাকে চীনের সস্তা মাল ধরিয়ে দেবে। আমি তাকে বিশ্বাস করলাম। তাকে বললাম, এসিটা লাগিয়ে দেন। তিনি সেইদিনই লাগিয়ে দিলেন। আমিও সেইদিনই টাকাটা দিয়ে দিলাম। কয়েকদিন পর থেকেই ওই এসি দিয়ে আর কোন ঠা-া বাতাস বের হয় না। তাকে বলেও তেমন একটা সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না। আমার পুরো টাকাই গেল, পণ্য এবং সেবাটা পাচ্ছি না। আপনাদের কি এমন কোন ঘটনা ঘটেছে? বিষয়টি নিয়ে কথা বলছিলাম আরেক বন্ধুর সঙ্গে। সে জানাল, বর্তমান বাংলাদেশে এই প্রতিশ্রুতি ভয়াবহ। বর্তমানে কিছু ই-কমার্স সাইট হয়েছে যারা প্রতারণার জন্য কুখ্যাত। তারা দেখায় একটা আর ডেলিভারি করে আরেকটা। তাহলে একজন ক্রেতা কেন সেই দোকান থেকে পরবর্তীতে পণ্য কেনবে? বাংলাদেশে এমন দোকানারও আছে, যারা প্রথম দিকে খুব ভাল সেবা দিয়ে থাকেন; কিন্তু যেই ব্যবসাটা জমে উঠেছে তখনই তিনি বেশি মুনাফার জন্য পণ্যের মান খারাপ করে দিয়ে একদিন বাজার থেকে সটকে পড়েন। প্রথমে যে ভাল পণ্য দিতেন সেটা মূলত ঠকানোর একটি অংশ। বাংলাদেশে অনলাইন কেনাকাটা (সাধারণ কেনাকাটাও বটে) ততদিন ভাল করবে না, যতদিন না তারা ক্রেতার সঙ্গে ভাল একটি ব্যালেন্স তৈরি করতে পারেন। মিডিয়াগুলোর ইমোশনাল ব্যাংক এ্যাকাউন্ট কিছুদিন আগে রামপালে বিদ্যুতকেন্দ্র নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে কিছু সংবাদকর্মীর প্রশ্ন করার ধরন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচুর সমালোচনা দেখা যায়। বেশ কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিকের ভূমিকা নিয়ে মানুষ নানান ধরনের মন্তব্য করেন। সংখ্যাটি কিন্তু অল্প নয়, অসংখ্য মানুষ এই সমালোচনায় অংশ নেন। কিন্তু কেন? দেশের বিশেষ কিছু মিডিয়া তাদের পাঠক এবং দর্শকদের সঙ্গে তৈরি করা ইমোশনাল ব্যাংক এ্যাকাউন্টে ব্যালেন্স শূন্য করে ফেলেছেন। তারা সরকারের সঙ্গে ব্যালেন্স বাড়িয়ে ফেলেছেন। তারা পাঠক/দর্শকদের বিশ্বাসকে নষ্ট করে ফেলেছেন। তাদের কথা মানুষ এখন আর বিশ্বাস করছে না। তারা খুব বড় ধরনের একটি ঝুঁকি নিয়েছেন। পাঠক/দর্শক যদি তাদের বিশ্বাস ভঙ্গের অনুভূতিতে পতিত হন তাহলে সেই মিডিয়ার ওপর আর তাদের আস্থা থাকে না। সেই মিডিয়ার কর্মীদের প্রতিও তাদের আস্থা থাকে না। এর সরাসরি ফল দেখা যায় তাদের প্রচার সংখ্যায়। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সার্কুলেশন পত্রিকাটির সঙ্গে দ্বিতীয়টির পার্থক্য আকাশ-পাতাল। বাংলাদেশে দ্বিতীয় কোন পত্রিকা নেই। একইভাবে বাংলাদেশে প্রদর্শিত ভারতীয় বাংলা টিভি চ্যানেলের সঙ্গে দেশীয় চ্যানেলগুলোর ভেতর শীর্ষে থাকা চ্যানেলটির পার্থক্যও আকাশ-পাতাল। পাঠক কিংবা দর্শকদের ইমোশনাল ব্যাংক এ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স না থাকলে মিডিয়াগুলোর কি করুণ পরিণতি হয় তা বাংলাদেশের মিডিয়াগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায়। আপনার ইমোশনাল ব্যাংক এ্যাকাউন্ট আপনার কোন একজন পুরনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে আপনি তাকে খবু সহজেই বুকে জড়িয়ে ধরতে পারেন- এর কারণ কি? কাজটি আমরা সবাই করি; কিন্তু কারণটি ঠিক ওইভাবে বুঝে উঠতে পারি না। সবাই ভাবি, অনেকদিন পর দেখা- তাই ভাল লাগে। কিন্তু সবার বেলায় কি এমন হয়? এমন বন্ধুর সংখ্যাও নিশ্চয়ই আছে, যাকে অনেক দিন পর দেখলেও আপনি অস্বস্তি অনুভব করবেন। এর কারণটি হলো ওই বন্ধুটির সঙ্গে আপনার কিছু ব্যালেন্স ছিল এবং সেটা দুই পক্ষ থেকেই। তাই অনেক বছর পর দেখা হলেও আপনি নতুন করে শুরু করতে পারেন। অনেক ভাললাগা জড়িয়ে থাকে। কিন্তু যাদের সঙ্গে আপনি প্রতিনিয়ত ওঠাবসা করছেন তাদের সঙ্গে কিন্তু আপনার ব্যালেন্স না-ও থাকতে পারে। নিত্যদিনের ব্যবহারে আপনার ব্যালেন্স কমে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার ব্যালেন্স বাড়ানো কিংবা ঠিক রাখার বিষয়টি চলে আসতে পারে। আপনি যদি পাবলিক ভিক্টরি চান, সামাজিকভাবে বিজয়ী হতে চান, তাহলে চারপাশের মানুষের সঙ্গে আপনার ব্যালেন্স বাড়াতে হবে। একটু খেয়াল করে দেখুন, আপনার চারপাশের কোন্ মানুষটি সবচেয়ে বেশি ইফেক্টিভ, দেখুন কার কথা মানুষ সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করছে, কাকে মানুষ নিরাপদ মনে করছে, কার কাছে মানুষ বিপদের সময় ছুটে যাচ্ছে, তার দিকে তাকান। দেখুন, তিনি কিভাবে তার চারপাশের মানুষের কাছে ইমোশনাল ব্যালেন্স বাড়িয়ে রেখেছেন। আমরা অনেকেই বলি, আমি সামাজিক না, আমাকে দিয়ে এগুলো হবে না, আমি ঘরকুনো, আমি একা থাকতে পছন্দ করি ইত্যাদি। কিন্তু আপনি যদি একজন ইফেক্টিভ মানুষ হতে চান তাহলে আপনার সামাজিক বিজয় লাগবে। আপনি একা একা ঘরের ভেতর বসে থেকে একজন ইফেক্টিভ মানুষ হয়ে যাবেন সেটা তো হবে না। আমি পরের সপ্তাহগুলোতে তিনটি অভ্যাস নিয়ে আলোচনা করবÑ যেগুলো আপনাকে সামাজিকভাবে বিজয়ী হতে সাহায্য করবে। কিন্তু তার আগে চাই আপনার মাইন্ড-সেট, আপনার দৃষ্টিভঙ্গি। আপনার দৃষ্টিভঙ্গিটুকুকে পাল্টে দেয়ার জন্য এই ইমোশনাল ব্যাংক এ্যাকাউন্টের ধারণা এবং উদাহরণ নিয়ে আলোচনা করা হলো। আশা করছি পরের তিনটি অভ্যাস আপনাকে সামনে এগিয়ে নিতে আরও সহায়ক হবে। আর একদিন পরেই ঈদ। এই ঈদের সময়টাতে আপনি আপনার চারপাশের মানুষের সঙ্গে আপনার ইমোশনাল ব্যাংক এ্যাকাউন্টের ব্যালেন্সটি বাড়িয়ে ফেলতে পারেন। একটু চেষ্টা করে দেখুন। ফল পাবেন। সবাইকে ঈদ মোবারক। আপনার ঈদের সময়টুকু আনন্দময় হোক। ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ লেখক : তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ুং@ঢ়ৎরুড়.পড়স
×