ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

চলছে কোরবানির প্রস্তুতি

ছুরি চাকু থেকে চাটাই, সবই এখন জরুরী উপকরণ

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ছুরি চাকু থেকে চাটাই, সবই এখন জরুরী উপকরণ

জনকণ্ঠ ফিচার ॥ ছুরি চাকুর খোঁজ করা ভদ্রলোকের কাজ নয়। কিন্তু কোরবানির ঈদ বলে কথা, দৃশ্যটা বদলে গেছে। এরই মাঝে যারা গরু ছাগল কিনে ফেলেছেন তারা খোঁজ করছেন ‘দেশীয় অস্ত্রের’! গত বছর যেগুলো কেনা হয়েছিল, সেগুলোর হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। আর পাওয়া গেলেও, জংধরা। ধার কম। তাই নতুন চাই। আরও ধারালো আরও চকচকে হলে ভাল। অনেকেই ছুটছেন কাওরানবাজার। এখানে বেশকিছু কামারশালা। দোকানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে ছুরি চাকু। আঙুল ঘষে ধার পরীক্ষা করছেন ক্রেতারা। তার পর কেনা। কিনতে হচ্ছে চাটাই, খাইট্যা, খড়ও। সব মিলিয়ে জোরে শোরেই চলছে প্রস্তুতি। গরু জবাই করা, মাংস কাটা কসাইয়ের কাজ। কিন্তু কোরবানি ঈদে অন্যরাও কসাইয়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। নিজের গরু নিজে জবাই করেন। মাংস কাটেন। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে ছুরি চাকু চাপাতির মতো উপকরণগুলোর কোন বিকল্প নেই। কোরবানির ছুরি চাকুর বড় সংগ্রহ কাওরানবাজারে। গত প্রায় ত্রিশ বছর ধরে এখানে উপকরণগুলো তৈরি ও বিক্রি হচ্ছে। কারখানা আছে ১২টি। পেছনে কারখানা। সামনের অংশে দোকান। মোট দোকান ২৬টি। সব দোকানেই বিশাল বিশাল ছুরি চাকু চাপাতি। রশি দিয়ে বেঁধে শূন্যে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। কিছু টেবিলে বিছিয়ে রাখা। বড় বড় দা বঁটি দু’ পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সব দেখে পিলে চমকে যায়। হাত-পা কেমন ঠা-া হয়ে আসে। তবে কেনাকাটা থেমে নেই। আলমগীর নামের এক দোকানি জানান, একেকটি ছুরির একেক রকমের কাজ। কাজের সঙ্গে মিল রেখে ছুরির নামকরণ করা হয়েছে। জবাই ছুরি, ছিলা ছুরি, কোপ ছুরিÑ কত কত নাম! সবই লোহার তৈরি। লোহার আবার ভাল মন্দ আছে। গাড়ির স্প্রিং থেকে তৈরি উপকরণগুলোর মান সবচেয়ে ভাল। দামও বেশি। প্রতি কেজি ৫০০ টাকা। সেই তুলনায় কাঁচা লোহার দাম কম। প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। ছুরি চাকুর ওজন যা, সেই অনুযায়ী হিসাব করে দাম। যে ছুরি দিয়ে পশু কোরবানি করা হয় সেটির নাম জবাই ছুরি। পশু জবাই করার জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয়। ২০ থেকে ২৪ ইঞ্চির মতো লম্বা। সামনের অংশ হাতির সুরের মতো বাঁকানো। কিছুটা উপরের দিকে ওঠে গেছে। শক্ত হাতে ধরতে হয়। তাই কাঠের হাতল। এই ছুরির দাম ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা। মান অনুযায়ী দাম ওঠানামা করে। পশু জবাইয়ের পরের কাজটি চামড়া ছাড়ানো। একটু সতর্কতার সঙ্গে করা চাই। এ জন্য ছোট এক ধরনের ছুরি আছে। নাম ‘ছিলা ছুরি’। কারখানা মালিক আবদুল আওয়াল জানান, গরু ছাগলের চামড়া ছাড়ানোর কাজটি একসঙ্গে চারজন বা ততোধিক ব্যক্তি করে থাকেন। এ জন্য ‘ছিলা ছুরি’ কয়েকটা কিনতে হয়। রেতের তৈরি ছিলা ছুরি প্রতিটি ২৫০ টাকা। স্প্রিংয়ের তৈরি হলে ২২০টাকা। আর কাঁচা লোহার ছিলা ছুরি ১০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি সাইজের ছুরিটির নাম আবার ‘সাইজ ছুরি।’ দোকানিদের ভাষায়Ñ এ ছুরি দিয়ে মাংস ‘সাইজ’ করা হয়। কুপিয়ে ‘সাইজ’ করার ব্যাপার আছে। একে তাই কোপ ছুরিও বলা হয়। কোন কোন দোকানি আবার বলেন, কামেলা ছুরি। এই ছুরির দাম ১০০ থেকে ৫০০ টাকা। চাপাতি তো মাঝে মাঝেই সংবাদ শিরোনাম হয়। ভয়ঙ্কর অস্ত্রটি গরুর হাঁড় কাটার কাজে লাগে। বিভিন্ন আকারের চাপাতি তৈরি করে সাজিয়ে রেখেছেন দোকানিরা। সবচেয়ে ভালটি নাকি রেললাইনের রেল কেটে তৈরি করা হয়েছে! দেড় কেজির মতো ওজন। ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা দাম। আছে গাড়ির স্প্রিংয়ে তৈরি চাপাতিও। সোবহান নামের এক দোকানি কথা বলতে বলতে গাড়ির স্প্রিং টেনে বের করে দেখালেন। বললেন, ‘অরজিনিাল। এইটা দিয়া বানাইছি।’ প্রায় একই কাজে ব্যবহৃত হয় চায়নিজ কোড়াল। চকচকে খুব। হাতলও কাঠের ফার্নিচারের মতো সুন্দর রং করা। দাম ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা। কোরবানির মাংস ঘরে আনার পর দরকার হয় দা বঁটির। কাওরান বাজারের প্রতিটি দোকানের সামনেই আছে বিভিন্ন আকার ও আকৃতির দা বঁটি। অবশ্য শনিবার পর্যন্ত বিক্রি খুব ভাল বলে মনে হলো না। ক্রেতা চোখে পড়লো সামান্যই। দোকানিরাও কিছুটা যেন হতাশ। দোকানি সালাউদ্দিন বললেন, ‘অন্যান্য বছর এই সময় লোকে ভরা থাকে। এইবার তো দোকান ফাঁকা। লম্বা বন্ধ পাইয়া লোক আসলে বাড়ি গেছে গা।’ অবশ্য আজ কালের মধ্যে বিক্রি বাড়বে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা। কোরবানির ঈদে ছুরি চাপাতি ছাড়াও কেনাকাটা আছে। কোরবানির মাংস মেঝেতে রেখে কাটার জন্য চাটাইয়ের প্রয়োজন হয়। কাওরান বাজারের একাধিক স্থানে হুগলা পাতার চাটাই বিছিয়ে রাখা আছে। বিক্রেতা বাচ্চু গাজী জানান, চাটাই বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা করে। পাশেই ‘খাটিয়া’ বা ‘চাকতি’। তেঁতুল গাছের গুঁড়ি কেটে তৈরি করা হয়েছে চাকতি। শক্ত মোড়ার মতো দেখতে। এর উপর পশুর হাঁড় রেখে কুপিয়ে টুকরো টুকরো করা হয়। বিক্রেতা মোঃ আলম বললেন, ‘এগুলা তেঁতুইল কাঠের। ৩৫০ থাইকা ৪০০ টাকায় পাইবেন।’
×