ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

পুঁজি সংকটে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়া বাজারে ধস নামার আশঙ্কা

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

পুঁজি সংকটে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম  চামড়া বাজারে ধস নামার আশঙ্কা

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর ॥ পুঁজি সঙ্কটের কারণে এবারের কোরবানি ঈদে চামড়া ক্রয় নিয়ে বিপাকে পড়েছে নাটোরের চামড়া ব্যবসায়ীরা। ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে গত বছরের প্রায় দুইশত কোটি টাকা এখনও বকেয়া থাকায় ব্যবসায়ীরা তীব্র পুঁজি সংকটে পড়েছেন। আর একই কারণে চামড়া বাজারে ধস নামার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়া বাজার খ্যাত নাটোরের ব্যবসায়ীরা কোরবানি ঈদের আগে যে সময়ে চামড়া ক্রয়ের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করার কথা সেখানে বকেয়া উত্তোলন করতে ঢাকার ট্যানারি মালিকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তারা। এদিকে, ট্যানারি মালিকদের কাছে বিপুল পরিমাণ টাকা বকেয়া থাকায় চলতি বছর বড় ব্যবসায়ী ছাড়া ছোটখাটো ব্যবসায়ীরা চামড়া ক্রয় করতে পারবেন কিনা এ নিয়েও তাদের মধ্যে দেখা দিয়ে শঙ্কা। এছাড়া, একই কারণে চামড়া বিদেশে পাচারের আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। এতে করে চামড়া শিল্পে বড় ধরনের লোকসান হতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উত্তরবঙ্গের অন্যতম দ্বিতীয় চামড়া বাজারখ্যাত নাটোরের চকবৈদ্যনাথ চামড়া বাজারে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে কাঁচা চামড়া সরবরাহ করা হয়। প্রতিবছর এখানে প্রায় ৭০-৭৫ হাজার গরু ও ৪০-৫০ হাজার ছাগলের চামড়া ক্রয়-বিক্রয় হয়। এর মধ্যে শুধুমাত্র কোরবানিতেই বেচাকেনা হয় ৩৫-৪০ হাজার গরু ও ২০-২৫ হাজার ছাগলের চামড়া। প্রতিবছর শুধু কোরবানির ঈদেই এখান থেকে ৮-৯শত কোটি টাকার কাঁচা চামড়া বিক্রয় হয়। গত বছর ঢাকার হাজারীবাগের ট্যানারি মালিকদের কাছে জেলার প্রায় ২শ’ চামড়া ব্যসায়ীদের পাওনা রয়েছে প্রায় দুইশত কোটি টাকা। অথচ ঈদ আর মাত্র তিন দিন বাকি থাকলেও এখন বকেয়া টাকা হাতে পায়নি ব্যবসায়ীরা। ট্যানারি স্থানান্তরজনিত কারণ দেখিয়ে ট্যানারি মালিকরা বকেয়া পরিশোধ না করে নানা টালবাহানা করছে বলে জানান তারা। এছাড়া, ব্যাংক ঋণসুবিধার অভাব ও কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে ব্যবহৃত লবণের দাম বৃদ্ধি ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি আর শঙ্কায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এদিকে, ট্যানারি মালিক ও ব্যবসায়ীদের লোকসানের পরিমাণ কমাতে চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হলে মূলত তা কোন কাজে আসবে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। চলতি বছর প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০টাকা। অথচ, প্রতিফুট চামড়া কিনতে ব্যবসায়ীদের ৬০-৭০টাকা খরচ পড়বে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে দেশের অন্যতম খাত চামড়া শিল্প। আর এই চামড়া শিল্পের অধিকাংশ কাঁচামালই সংগৃহীত হয় কোরবানি ঈদে। তবে, পুঁজির অভাবে ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনতে ব্যর্থ হলে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বিপুল পরিমাণ চামড়া পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। নাটোরের চামড়া ব্যবসায়ী রইস খান জানান, তার সারা বছরের পুঁজি বকেয়া হয়ে ঢাকার ট্যানারদের নিকট পড়ে থাকে। কোরবানি ঈদের আগে এভাবেই সাধ্যমতো তিনি বকেয়া টাকা আদায় করতে আসেন। শুধু তিনি নন, এই অবস্থা নাটোরের প্রায় সকল চামড়া ব্যবসায়ীর। নাটোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি শরিফুল ইসলাম জানান, ঢাকার ট্যানারি মালিকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ঘুরে এখন পর্যন্ত জেলার চামড়া ব্যবসায়ীদের বকেয়া টাকা উত্তোলনের হার প্রায় শূন্যের কোঠায়। ট্যানারি মালিকরা সরকারী ঋণসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। কিন্তু সবসময় এই ঋণ সুবিধা চামড়া ব্যবসায়ীরা না পাওয়ায় সারা বছর ধরে প্রকট থাকা পূঁজির সঙ্কট আরও প্রকটতর হয়। এছাড়া, চামড়া বিদেশে পাচার রোধে তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
×