ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খেলাধুলায় জেগে উঠুক যুব সমাজ ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

খেলাধুলায় জেগে উঠুক যুব সমাজ ॥  প্রধানমন্ত্রী

বিডিনিউজ ॥ সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও মাদকাসক্তি থেকে যুবসমাজকে ফিরিয়ে আনতে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার ঢাকায় জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে সমাজে ‘সাংঘাতিকভাবে একটা অসুস্থতা’ দেখা যাচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস বা মাদকাসক্তি। এগুলো মানুষের মন, মানসিকতা ও স্বাস্থ্য নষ্ট করে দিচ্ছে; সমাজকে কলুষিত করে দিচ্ছে। এখান থেকে আমাদের যুবসমাজ সবাইকে ফিরিয়ে আনতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই খেলাধুলার আরও বেশি সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, খেলাধুলা আমাদের দেশের জন্য একান্তভাবে প্রয়োজন। কারণ খেলাধুলার মধ্য দিয়ে ছেলেমেয়েদের একটা শৃঙ্খলাবোধ, অধ্যাবসায়, দায়িত্ববোধ, কর্তব্যবোধ এবং দেশপ্রেম জাগ্রত হয়। যত বেশি খেলাধুলার সঙ্গে আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের সম্পৃক্ত রাখতে পারব, তারা তত সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে। তারা চিন্তা, মন-মননে অনেক বেশি শক্তিশালী হবে। অনেক বেশি উন্নত হবে। কারণ একটা সুস্থ দেহ থাকলে, সুস্থ মনও থাকবে। তখন আর এই মনটা এদিক-ওদিক যাবে না। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে ২০১০, ২০১১ এবং ২০১২ সালের বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। সব উপজেলায় ‘মিনি স্টেডিয়াম’ নির্মাণের কাজ চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম আমরা করে দেব। সেখানে বারো মাসই খেলাধুলা হতে পারবে। সম্পূর্ণ আলাদা মাঠ হবে। ছোট্ট একটু ব্যবস্থা থাকবে। অত বেশি গ্যালারি, বসার জায়গা থাকবে না। এমনভাবে এটা তৈরি করা হবে যেন মানুষ চলতে-ফিরতে খেলাধুলা দেখতে পারে। মানুষের কাছে দৃশ্যমান করতে হবে। কারণ দেখার মধ্যে দিয়ে মানুষের মাঝে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ জমবে। খেলাধুলায় প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেক বিভাগে একটি করে বিকেএসপি হবে। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) এখন শুধু ঢাকার সাভারে আছে। অনুষ্ঠানে দেশের ঐতিহ্যবাহী বিলুপ্তপ্রায় খেলাগুলোর প্রতি নজর দেয়ার তাগিদও দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, গ্রামের কিছু খেলা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এ খেলাগুলো চালু করতে হবে। দেশীয় খেলাগুলো ফেলে দিলে চলবে না। প্রত্যেক বিভাগীয় শহরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেক বিভাগীয় শহরে আবাসনসহ আন্তর্জাতিক ভেন্যু যাতে হতে পারে, সে ব্যবস্থা আমরা করে দেব। ক্রিকেটের জন্য একটি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম করা প্রয়োজন। পূর্বাচলে আধুনিক স্টেডিয়াম করার পরিকল্পনা আছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এ সময় কক্সবাজারে একটি ফুটবল স্টেডিয়াম নির্মাণের কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে বছরের একটি দিনকে ‘স্পোর্টস ডে’ হিসেবে উদযাপনের কথা বলেন ক্রীড়া ও যুব মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জাহিদ আহসান রাসেল। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ ৬ এপ্রিল ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস ডে হিসেবে পালন করে। আমরাও সে দিনটা স্পোর্টস ডে হিসেবে পালন করতে পারি। ক্রীড়া ক্ষেত্রে বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, অসাধ্য সাধন করতে পারে বাংলাদেশ। খেলাধুলায়ও তা প্রমাণ করব। পরবর্তী অলিম্পিকে সুনির্দিষ্ট কিছু খেলায় অংশ নেয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অলিম্পিক কয়েকটি আইটেম সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে আমরা সেখানে যাব। ক্রিকেটের উন্নয়নে সরকারের ভূমিকা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সাফল্যের বীজ বপন করেছি। ১৯৯৭ সালে প্রথমবারের মতো আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ। ১৯৯৮ সালে মিনি বিশ্বকাপ আয়োজন করে এই ক্রীড়া ক্ষেত্রটাকে উজ্জীবিত করার পদক্ষেপ আমরা নেই। ১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে পরাজিত করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বকে অবাক করে দেয়। ক্রিকেটে বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস অর্জন করায় অনেকেই তখন সমালোচনা করেছিলেন। সেসব কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার এটুকু মনে আছে, আমরা যখন ক্রিকেটে টেস্ট খেলার স্বীকৃতি পেলাম, তখন অনেকেই নানাভাবে বিদ্রূপ করেছিল। বাংলাদেশ এখনও প্রস্তুত হয়নি। আমরা নাকি লবিং করে করে, বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রীদের বলে বলে নাকি এ স্ট্যাটাসটা অর্জন করেছি। এ ধরনের ক্রিকেটে নাকি আমাদের ছেলেরা পারদর্শী না। আমাদের ছেলেরা তার জবাব দিয়ে দিয়েছে। তখন যারা এ বক্তৃতা দিয়েছিল, সেই কথাগুলো বলেছিল, সেই পুরনো কাগজগুলো বের করে তাদের মুখের ওপর একটু বলে দেয়া উচিত- দেখেন আমাদের ছেলেরা পারে কি, পারে না। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রশংসা ও বিশ্বকাপ জয়ের প্রত্যাশা পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, সত্যি কথা বলতে কী সব দেশ ক্রিকেটে রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে হিসাব করে চলে। রয়েল বেঙ্গল টাইগাররা ঠিক রয়েল বেঙ্গল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ইনশাআল্লাহ আমরা একদিন বিশ্বকাপ জয় করব। সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুশফিকুর রহীমের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুস্তাফিজ তো নতুন এবং ইয়ং। তার নামই হয়ে গেছে কাটার মাস্টার।’
×